Advertisement
E-Paper

জগৎবল্লভপুর ‘মুক্তাঞ্চল’, গোপন রিপোর্ট

অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না বলে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। মূলত বিরোধীরা তাঁর নিশানা। কিন্তু তাঁর পুলিশ (মুখ্যমন্ত্রী পুলিশমন্ত্রীও বটে) দাবি করেছে, হাওড়ার জগৎবল্লভপুর ‘ফুটছে’।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৮ ০২:০০
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রী বলছেন এক। কিন্তু তাঁর পুলিশ বলছে আর এক!

অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না বলে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। মূলত বিরোধীরা তাঁর নিশানা। কিন্তু তাঁর পুলিশ (মুখ্যমন্ত্রী পুলিশমন্ত্রীও বটে) দাবি করেছে, হাওড়ার জগৎবল্লভপুর ‘ফুটছে’। পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। যে কোনও সময় বড় গোলমালের আশঙ্কা রয়েছে। আর এ জন্য বিরোধীরা নয়, দায়ী তৃণমূলেরই একাংশ। দলের নানা মাপের নেতারা বিভিন্ন এলাকাকে কার্যত ‘মুক্তাঞ্চল’-এ পরিণত করেছেন।বিরোধীদের প্রভাব আছে, বিশেষ করে বিজেপি অধ্যুষিত এলাকায় গিয়ে তৃণমূলের কিছু নেতাকর্মী এমন কীর্তিকলাপ ঘটাচ্ছেন, যার জেরে সাম্প্রদায়িক অশান্তি লেগে যাওয়ার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হচ্ছে বলে পুলিশের অভিযোগ।

ক’দিন আগেই হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের এ সংক্রান্ত গোপন রিপোর্ট পৌঁছে গিয়েছে নবান্নে। এ নিয়ে জেলা পুলিশের কর্তারা মুখ খুলতে চাননি। তবে, জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক বা অন্য কারণে নির্দিষ্ট এলাকায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটলে কোনও নেতাকে দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণের সুযোগ জগৎবল্লভপুরে নেই। এখানে কেউ কারও কথা শোনেন না।’’

পুলিশের ওই রিপোর্টের কথ তাঁর জানা নেই বলে দাবি করেছেন জেলা সদর তৃণমূল সভাপতি তথা সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায়। তবে তিনি স্বীকার করেন জগৎবল্লভপুরে দলের অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যা আছে। তিনি বলেন, ‘‘সমস্যা মেটানোর জন্য দলের সর্বোচ্চ স্তর থেকে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সকলের সঙ্গে বসে সেইসব পরিকল্পনা কার্যকর করার চেষ্টা চলছে।’’

কিন্তু পুলিশ হঠাৎ ওই রিপোর্ট পাঠাল কেন?

জলঘোলা হচ্ছিল পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকেই। শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে জগৎবল্লভপুরে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির অবনতি হয়। বিরোধী দলের অনেক প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। আবার তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীর তরফ থেকে অন্য গোষ্ঠীর প্রার্থীদেরও মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগও ওঠে। তা নিয়ে বোমাবাজি, রাস্তা অবরোধ— কিছুই বাদ যায়নি। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ হিমসিম খায়।

পুলিশকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন ঘিরেও। সভাপতি নির্বাচনে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে ভোটাভুটি হয়। স্থায়ী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও বিস্তর অশান্তি হয়। নিজেদের পছন্দের প্যানেল হেরে যাওয়ায় একটি গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীরা ব্লক অফিসে অবস্থান থেকে শুরু করে প্রায় চার ঘণ্টা হাওড়া-আমতা রোড অবরোধ করেন। নাকাল হন সাধারণ মানুষ।

এ সবের জেরে উন্নয়নমূলক কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে মানছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। পুলিশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা। পুলিশের পর্যবেক্ষণ,

জগৎবল্লভপুর জুড়ে তৃণমূলের নেতৃত্বে ছোট ছোট ‘মনসবদারি’ চলছে। সেখানে তাঁর কথাই শেষ কথা। সরকারি জমি বিক্রি থেকে শুরু করে, তোলাবাজি কোনও কিছু বাদ যাচ্ছে না। সেখানে অন্য কোনও গোষ্ঠীর নেতা নাক গলানোর চেষ্টা করলেই বেঁধে যাচ্ছে মারপিট। নিজেদের ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেতারা দখল করতে চাইছে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি।

গ্রামীণ জেলা পুলিশের আশঙ্কা, লোকসভা ভোট যত এগিয়ে আসবে, ততই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠবে। প্রশাসন এবং শাসকদলের সর্বোচ্চ কর্তাদের হস্তক্ষেপ না হলে লোকসভা নির্বাচনের আগে তা হাতের বাইরে চলে যেতে পারে। সেটাই লিখিত ভাবে নবান্নকে জানানো হয়েছে।

বিরোধীরা অবশ্য এই রিপোর্টে নতুন কিছু পাচ্ছেন না। সিপিএমের জগৎবল্লভপুর এরিয়া কমিটির সম্পাদক বৈদ্যনাথ বসু বলেন, ‘‘পুলিশ আর গোপনে কী বলবে? সব তো প্রকাশ্যেই হচ্ছে। মানুষ তা দেখতেও পাচ্ছেন।’’ বিজেপির হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা সভাপতি অনুপম মল্লিক বলেন, ‘‘জগৎবল্লভপুর যে বারুদের স্তূপে বসে আছে তা আমরা দু’বছর ধরে বলে আসছি। এখন হয়ত পুলিশের টনক নড়েছে।’’

report Confidential Jagatballavpur Unrest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy