Advertisement
E-Paper

সব্জি বাজার আগুন, মাথায় হাত মধ্যবিত্তের

দিন দশেক আগেও যে পটল বিক্রি হত কিলোগ্রাম প্রতি ২৫ টাকায়। এখন তা ঠেকেছে ৪০ টাকায়। ওই সময়ে যে ঝিঙের দাম ছিল ২০ টাকা। এখন বিকোচ্ছে কিলোপ্রতি ৩০ টাকায়।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:১৪

দিন দশেক আগেও যে পটল বিক্রি হত কিলোগ্রাম প্রতি ২৫ টাকায়। এখন তা ঠেকেছে ৪০ টাকায়। ওই সময়ে যে ঝিঙের দাম ছিল ২০ টাকা। এখন বিকোচ্ছে কিলোপ্রতি ৩০ টাকায়। একইভাবে সজনা ডাঁটা কিলোপ্রতি ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৭০ টাকা। বেগুন ছিল ৩০ টাকা। হয়েছে ৪৫-৫০ টাকা।

মধ্যবিত্তকে নাজেহাল করে সব্জির বাজার এখন আগুন। হাওড়া-হুগলি দুই জেলাতেই দেখা গিয়েছে এক ছবি। এক সপ্তাহের মধ্যে দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ হারে। বাগনান, আমতা, জগতবল্লভপুর, শ্যামপুর, উলুবেড়িয়া সর্বত্রই এক ছবি। এ হেন পরিস্থিতিতে সব্জি বিক্রেতাদের মধ্যে অনেকেই বাজারে আনাজ নিয়ে বসতে চাইছেন না। বাগনানের জোকা গ্রামের দেবদাস ধাড়া নামে এক সব্জি বিক্রেতার কথায়, ‘‘আমি পাড়ায় ঘুরে সব্জি বিক্রি করি। কিন্তু খরিদ্দারদের কাছে জবাব দিতে পারছি না, কেন পটল ২৫ টাকা কিলো থেকে বেড়ে ৪০ টাকা হয়ে গেল মাত্র এক সপ্তাহে। ভাবছি কিছুদিন ব্যবসা বন্ধ রাখব। বিক্রিও কম হচ্ছে।’’

কেন এই হাল?

ব্যবসায়ীরা জানান, সামনে রান্না পুজো এবং বন্যার জোড়া ফলা-ই সব্জির অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণ। গত এক সপ্তাহে নাগাড়ে বৃষ্টি ও তার সঙ্গে ডিভিসির-র ছাড়া জলে জেলার বেশ কিছু অংশে চাষের জমি ডুবে নিয়েছে। ডুবে গিয়েছে সব্জি খেত। হাওড়া জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, গ্রামীণ এলাকায় সব্জির জোগান আসে মূলত উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা-২ ব্লক থেকে। কিন্তু বৃষ্টি ও ডিভিসি-র ছাড়া জলে দুটি ব্লকই বন্যার কবলে। ফলে প্রচুর সব্জি নষ্ট হওয়ায় কমেছে সব্জির জোগান। আর সেটাই অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণ।

রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘বৃষ্টি ও বন্যার জন্য সমস্যা হয়েছে। ফড়েরাও ঝোপ বুঝে কোপ মারছে। বাজারে নজর রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’

হাওড়া জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, শুধু উদয়নারায়ণপুরে নষ্ট হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার বিঘা জমির সব্জি চাষ। একই পরিমাণ জমির সব্জি নষ্ট হয়েছে আমতা ২ ব্লকে। ফলে বাজারে সব্জির জোগান কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। বাগনানের বাকসিহাট বাজারের দীপঙ্কর মান্না, স্বপন সামন্তের মতো সব্জি বিক্রেতারা বলেন, ‘‘রান্নাপুজোর কারণে প্রতি বছর এই সময় সব্জির দাম যথেষ্ট চড়াই থাকে। কিন্তু এ বছর দাম অস্বাভাবিক বেশি। আসলে বন্যার জন্য প্রচুর সব্জি নষ্ট হয়েছে। বাজারে জোগান নেই। তাই এমন অবস্থা।’’

ধুলাগড়ির পাইকারি ব্যবসায়ী সত্যগোপাল সাহা বলেন, ‘‘আমাদের এখানে বিভিন্ন এলাকার চাষিরা এসে পটল, ঝিঙে, উচ্ছে, বরবটি, বেগুনের মতো সব্জি এনে বিক্রি করেন। জেলার অনেক জায়গায় বৃষ্টিতে জমিতে জল জমে নষ্ট হয়ে গিয়েছে সব্জি। ফলে এখন এ সব সব্জির দাম বেড়ে গিয়েছে অস্বাভাবিকভাবে।

হুগলির খানাকুল ২ ব্লকে ইতিমধ্যেই ১০০ শতাংশ গ্রীষ্মকালীন এবং বর্ষাকালীন সব্জি নষ্ট হয়েছে বলে চাষিরা জানিয়েছেন। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আরামবাগ ব্লকের সালেপুর ১ ও ২, গৌরহাটি ১ ও ২, বাতানল, গোঘাটের বালি, কুমুড়শা, কুমারগঞ্জ পঞ্চায়েত এলাকায়। পুরশুড়ায় বন্যার জল না ঢুকলেও বৃষ্টির জলেই প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে সেখানকার ৮টি পঞ্চায়েত এলাকার বেগুন, ঝিঙে, পটল, উচ্ছে, লঙ্কা, ছাঁচি কুমড়ো ইত্যাদি সব্জি। পালং, নটে, অসময়ের সিম এসব চাষ একবারেই গোড়া পচে গিয়ে নষ্ট হয়েছে।

হুগলি জেলা উদ্যানপালন দফতর সূত্রে খবর, জেলায় এখনও পর্যন্ত ৪৯৪২ হেক্টর জমির সব্জি চাষ নষ্ট হয়ে‌ছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০০ হেক্টর জমির ১০০ শতাংশ ফসলই নষ্ট। বাকি জমিতে নষ্টের পরিমাণ ২০ থেকে ৫০ শতাংশ। দফতরের জেলা আধিকারিক মানসরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “জেলার মূল সব্জি এলাকাগুলির মধ্যে বলাগড় ব্লক, হরিপাল ব্লক, ধনেখালি ব্লক এলাকায় তেমন ক্ষতি না হলেও আরামবাগ মহকুমার ৬টি ব্লক, তারকেশ্বর ব্লক এবং জাঙ্গিপাড়া ব্লক এলাকায় বেশ কিছু সব্জি চাষ নষ্ট হয়েছে।”।

তবে এর মধ্যে টোমাটো, ক্যাপসিকাম, বাঁধাকপি, ফুলকপির দাম কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে গৃহস্থকে। ব্যবসায়ীদের মতে এর মূল কারণ, এ সব সব্জি আসে মূলত ভিন রাজ্য থেকে। এ সব পণ্যের পাইকারি বাজার আছে সাঁকরাইলের ধুলাগড়িতে। সেখানে দেখা গেল, টোমাটো প্রতি কিলো ২২ টাকা, বাঁধাকপি ১২ টাকা প্রতিটি, ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ২৫ টাকা দরে। সবই পাইকারি দাম। বিভিন্ন খুচরো বাজারে গিয়ে দেখা গিয়েছে পাইকারি দামের সঙ্গে সেখানকার দামের খুব একটা ফারাক নেই।

সব্জিচাষিদের অভিযোগ, বাজারে বেশি দামে সব্জি বিক্রি হলেও তার সুফল তাঁরা পাচ্ছেন না। জমি ডুবে সব্জি নষ্ট হওয়ায় তাঁরা বাধ্য হয়ে অনেক কম দামেই তা বিক্রি করে দিচ্ছেন। কিন্তু সেই সব্জিই বাজারে দ্বিগুণ, তিনগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। লাভের গুড় খাচ্ছে ফড়েরাই।

vegetable price
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy