Advertisement
E-Paper

নিম্নচাপের বৃষ্টিতে দফারফা আনাজের

শিয়াখালার শ্রীপতিপুরের পলাশ পাল ৬ বিঘে জমিতে শীতের বেগুন চাষ করেছিলেন। তাঁরও মাথায় হাত। নিম্নচাপের বৃষ্টিতে সেই জমিতে এখন হাঁটু জল।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৪৫
চিন্তা: বেগুন গাছের গোড়ায় জমেছে জল। নিজস্ব চিত্র

চিন্তা: বেগুন গাছের গোড়ায় জমেছে জল। নিজস্ব চিত্র

এ বার ১২ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন বাসুবাটির আতিয়ার রহমান। চার বিঘা জমির ধান কোনও মতে ঘরে তুলেছিলেন তিনি। বাকি ধান কাটার আগেই গত শুক্রবার থেকে নাগাড়ে বৃষ্টি।

শিয়াখালার শ্রীপতিপুরের পলাশ পাল ৬ বিঘে জমিতে শীতের বেগুন চাষ করেছিলেন। তাঁরও মাথায় হাত। নিম্নচাপের বৃষ্টিতে সেই জমিতে এখন হাঁটু জল। বেগুন গাছ আর বাঁচানো যাবে কিনা, সেই চিন্তায় ঘুম উবেছে তাঁর।

সিঙ্গুরের চাষি সুশান্ত পাখিরাও বিপাকে। তিনিও বলছেন, ‘‘আমার দেড় বিঘা জমির অর্ধেকটাতে ফুলকপি আর বাকিটাতে আলু বসিয়েছিলাম। এর আগের নিম্নচাপে কপি আর এ বারের বৃষ্টিতে আলু— সব শেষ। আর কিছুই বাঁচাতে পারব না।”

একের পর এক নিম্নচাপে ধান আর আলু নিয়ে হুগলি-সহ দক্ষিণবঙ্গের সব জেলার চাষিদেরই এ বার মাথায় হাত। তার উপর তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে শীতের আনাজেরও দফারফা। রোদ উঠলেও আর আনাজ বাঁচানো যাবে না বলেই চাষিদের আশঙ্কা।

প্রচুর টাকা খরচ করে চাষিরা এ বার শীতের আনাজ চাষ করেছিলেন। আশা ছিল, এ বারের ধান আর গত মরসুমের আলু চাষে লোকসান শীতের আনাজ বেচে কিছুটা অন্তত উসুল করে নেবেন। অসময়ের বৃষ্টি সেই আশাতেও জল ঢেলে দিয়েছে। কারণ, গাছের গোড়ার জল জমলে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, টোম্যাটোর মতো আনাজের গাছ বাঁচানো অসম্ভব বলেই মনে করছেন তাঁরা।

একই কথা বলছেন কৃষি-বিজ্ঞানীরাও। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিশেষজ্ঞ বলেন, “চাষের শুরুতে গাছে বাড়তি কিছুটা জল লাগলে আনাজ কোনওমতে বাঁচানো যায়। কিন্তু এখন আনাজ গাছ পরিণত হয়ে গিয়েছে। এই বৃষ্টিতে আনাজ গাছ বাঁচার আশা না-করাই ভাল।”

রাজ্যের অন্যতম আলু উৎপাদক জেলা হুগলির বহু চাষিরই এর আগে দু’বার আলু চাষ নষ্ট হয়েছে আবহাওয়ার কারণে। তবু, ঝুঁকি নিয়ে তৃতীয় বারের জন্য আলুর জমি তৈরি করেছিলেন তাঁরা। আশা ছিল, চাষ একমাস পিছিয়ে গেলেও মাটি শুকোলে কিছু জমিতে অন্তত তাঁরা আলু চাষ করতে পারবেন। কারণ, অতীতে এই ধরনের নজির আছে। কিন্তু গত শুক্রবার থেকে টানা তিন দিনের প্রবল বৃষ্টিতে সেই অঙ্কও এখন ধুয়েমুছে সাফ।

এই বৃষ্টিতে ক্ষতি হতে চলেছে দু’পক্ষেরই— চাষির এবং ক্রেতার। জেলা কৃষি দফতরের এক কর্তার আশঙ্কা, ‘‘আনাজের দর ফের বাড়বে। তাতে মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস উঠবে। কয়েকদিন ধরে বাজারে আনাজের দর আগের তুলনায় নামতে শুরু করেছিল। কিন্তু সেই সুবিধা সাধারণ মধ্যবিত্তের জন্য একেবারেই স্থায়ী হল না। ক্ষতি হল চাষিরও। গতবার আলু, এ বার ধানের সঙ্গে যোগ হল আনাজ। বহু চাষি এ বার কৃষিঋণ শোধ করতে পারবেন না।’’

এই আশঙ্কা যে অমূলক নয়, সে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে চাষিদের কথাতেই। ধনেখালির কানানদী এলাকার এক চাষির আক্ষেপ, ‘‘ব্যাঙ্ক থেকে দেড় লক্ষ টাকা কৃষিঋণ নিয়েছিলাম। এখনও এক টাকা শোধ করতে পারিনি।” একই আক্ষেপ শোনা যাচ্ছে আরও অনেকের গলায়।

এই আক্ষেপ থেকে মুক্তির উপায় বারবার বাতলেছেন কৃষি-বিশেষজ্ঞেরা। চাষে লাভের মুখ দেখার জন্য তাঁরা চাষিকে বিকল্প চাষের কথা ভাবার পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু সেই উদ্যোগে জোর কোথায়?

Vegetables rain
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy