মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গত বছরের মে মাস থেকে কর্মবিরতি করে আন্দোলন করছিলেন ডানকুনির ওয়াগন কারখানার ঠিকা শ্রমিকেরা। রাজ্য সরকারের মধ্যস্থতায় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিক সংগঠনের একের পর এক বৈঠকেও ঐকমত্য হয়নি। শেষ পর্যন্ত দশ মাস পরে, বিধানসভা ভোটের মুখে সমস্যা মিটল। শ্রমিকদের দাবি কার্যত মেনে নিলেন কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার শ্রীরামপুরের সহকারী শ্রম কমিশনার ঋত্বিক মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে কর্তৃপক্ষের তরফে এ ব্যাপারে ঘোষণাও হয়েছে। কারখানায় কাজের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক, জুতো, হেলমেট প্রভৃতিও দেওয়া হবে।
কর্তৃপক্ষের ওই ঘোষণা শুনে ঠিকা শ্রমিকেরা সন্তোষ প্রকাশ করেন। আগামী সোমবার তাঁদের কাজে যোগ দেওয়ার কথা। শ্রীরামপুরের উপ শ্রম-কমিশনার অমল মজুমদার বলেন, ‘‘ওই কারখানার ঠিকা শ্রমিকদের সমস্যা মিটে গিয়েছে। তিন বছরে ওঁদের দৈনিক মজুরি ৯০ টাকা বাড়াচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, ডানকুনির বামুনারিতে দিল্লি রোডের ধারে হিন্দুস্তান ইঞ্জিনিয়ারিং ইনডাস্ট্রিজ নামে ওই কারখানাটি চার দশকের পুরনো। এখানে তৈরি ওয়াগন কেন্দ্র সরকারকে সরবরাহ করা হয়। বিদেশেও পাঠানো হয়। কারখানায় প্রায় চারশো স্থায়ী এবং সাড়ে চারশো অস্থায়ী শ্রমিক আছেন। ঠিকা শ্রমিকেরা কাজ অনুয়ায়ী প্রতিদিন ১৫৫ টাকা, ১৬৫ টাকা এবং ১৭০ টাকা করে মজুরি হাতে পেতেন। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা মজুরি বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছিলেন। কিন্তু তা মানতে চাইছিলেন না কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধ তৈরি হয়।
গত বছরের ২ মে থেকে আইএনটিটিইউসি-র নেতৃত্বে কাজ বন্ধ করে দেন আন্দোলনকারী ঠিকা শ্রমিকরা। ফলে, উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছিল। শ্রমমন্ত্রী এবং ওই দফতরের আধিকারিকদের ঘরে বেশ কয়েকটি বৈঠক হলেও সমস্যা মেটেনি। শ্রমিকেরা দাবি করেন, যে টাকা তাঁরা হাতে পান, তার সঙ্গে ৫০ টাকা যোগ করতে হবে। পরের দু’বছরে ২৫ টাকা করে বাড়াতে হবে। কর্তৃপক্ষ অবশ্য ওই দাবিতে সহমত হতে পারেননি। তাঁরা চেয়েছিলেন এ বার ১৫ টাকা এবং পরের দু’বছরে পাঁচ টাকা করে বাড়াতে। শ্রমিকরা তা মানতে চাননি। দু’পক্ষই নিজেদের দাবিতে অনড় থাকেন। এ দিকে, স্থায়ী শ্রমিকেরাও নানা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। এর জেরে কারখানা বন্ধও ছিল কিছু দিন। তার উপরে অস্থায়ী শ্রমিকেরা কাজ না করায় উৎপাদন তলানিতে ঠেকে।
এই অবস্থায় মালিকপক্ষ অনেকটাই ‘নরম’ হন। বৃহস্পতিবার কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, ঠিকা শ্রমিকদের মজুরি ৪৫ টাকা বাড়ানো হবে। অর্থাৎ, বর্ধিত মজুরি হবে যথাক্রমে ২০০ টাকা, ২১০ টাকা এবং ২১৫ টাকা। পরের দু’বছরে যথাক্রমে ২০ টাকা এবং ২৫ টাকা বাড়ানো হবে।
কারখানার তৃণমূল প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি অন্বয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোনও চাপের কাছেই ঠিকা শ্রমিকেরা নতি স্বীকার করেননি। এটা তাঁদের আন্দোলনের জয়। নৈতিক জয়ও বটে।’’ রাজকুমার হাজরা নামে এক ঠিকা শ্রমিক বলেন, ‘‘যে মজুরি পেতাম, তাতে সংসার চালাতে পারতাম না। তাই প্রায় এক বছর ধরে পেটে কিল মেরেই আন্দোলন করেছি। মালিকপক্ষ মজুরি বাড়ানোয় কিছুটা সুরাহা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy