Advertisement
E-Paper

কোভিড-বর্জ্য পড়ে হাওড়া স্টেশন চত্বরে, চাপান-উতোর

পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ঢোকার সময়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহৃত কোভিড-বর্জ্য নষ্ট না করে স্টেশন চত্বরে ফেলে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ।

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২০ ০৫:৪৮
স্তূপীকৃত: পড়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহৃত পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস। বুধবার, হাওড়া স্টেশন চত্বরে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

স্তূপীকৃত: পড়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহৃত পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস। বুধবার, হাওড়া স্টেশন চত্বরে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

লকডাউনের মধ্যেই পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে ভিন্‌ রাজ্য থেকে একাধিক ট্রেন এসেছে হাওড়া স্টেশনে। সেখানে পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস পরে দিনের পর দিন ওই শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা। কিন্তু স্টেশন চত্বরে সেই সব কোভিড-বর্জ্য পড়ে থাকা নিয়েই এ বার রেল এবং হাওড়া জেলা প্রশাসনের মধ্যে শুরু হয়েছে চাপান-উতোর।

পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ঢোকার সময়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহৃত কোভিড-বর্জ্য নষ্ট না করে স্টেশন চত্বরে ফেলে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের নির্দেশিকা না মেনে কয়েকশো ব্যবহৃত পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস কী ভাবে যত্রতত্র ফেলে রাখা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আর এ নিয়ে একে অপরের ঘাড়ে দায় ঠেলেছে রেল এবং হাওড়া প্রশাসন। রেলের বক্তব্য, পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পিপিই-মাস্ক যেহেতু স্বাস্থ্য দফতর ব্যবহার করেছে, তাই তা নষ্ট করার দায় তাদেরই। আবার ওই বর্জ্য আগেই নষ্ট না করে খোলা আকাশের নীচে কেন ফেলে রেখেছেন রেল কর্তৃপক্ষ, পাল্টা সেই প্রশ্ন তুলছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

সম্প্রতি ভিন্‌ রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে একের পর এক শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন হাওড়া স্টেশনে ঢুকেছে। স্টেশনেই তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, খাবার বিলি ও বাসের ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার ও হাওড়া জেলা প্রশাসন। তবে সংক্রমণের আশঙ্কায় সে সময়ে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা পিপিই, গ্লাভস, মাস্ক পরে কাজ করেছেন। কিন্তু রেল সূত্রের খবর, ওই সমস্ত বর্জ্য স্টেশনেই ফেলে দিয়েছেন তাঁরা। ফলে রেলকে সেই বর্জ্য সংগ্রহ করতে হয়েছে। কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের নির্দেশিকা অনুযায়ী, কোভিড-বর্জ্যকে আলাদা করে হলুদ বা নীল ব্যাগে ভরে নির্দিষ্ট গাড়িতে বিশেষ ট্রিটমেন্ট প্লান্টে নিয়ে গিয়ে নষ্ট করে ফেলতে হবে। কিন্তু অভিযোগ, কোভিড-বর্জ্যের গুরুত্ব বিবেচনা না করেই রেল তা স্টেশনের যত্রতত্র ফেলে রেখেছে।

হাওড়া পার্সেল বিভাগের পাশেই রয়েছে একটি খোলা জমি। তার এক পাশে স্টেশনের ওভারহেড পানীয় জলের মূল ট্যাঙ্ক, আর কিছুটা দূরে একটা টিনের শেড দিয়ে ঘেরা ডাস্টবিন। ডান দিকে গাড়ি চলার পথ। বুধবার ওই জায়গায় গিয়ে দেখা গেল, আবর্জনা ফেলার ডাস্টবিনটি ফাঁকা, আর তার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ব্যবহৃত পিপিই, গ্লাভস, মাস্ক। উপায়ান্তর না থাকায় প্রতিদিন পড়ে থাকা এই কোভিড-বর্জ্যের পাশ দিয়েই যাতায়াত করছেন রেলের পার্সেল দফতরের কর্মী-সহ অন্য শ্রমিকেরা। এ দিন পার্সেল দফতরের এক কর্মী বলেন, ‘‘প্রতিদিন আমাদের সাফাইকর্মীরাই ওই বর্জ্য এখানে ফেলে যাচ্ছেন। কুকুরে তা নিয়ে টানাটানি করছে। কাগজকুড়ানিরাও নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা আতঙ্কে রয়েছি।’’

কেন এ ভাবে ফেলে রাখা হয়েছে কোভিড-বর্জ্য? হাওড়ার ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার বা ডিআরএম ইশাক খান বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের কর্মীরাই এগুলি স্টেশনে ফেলে গিয়েছেন। ওঁদের পোশাক যখন, তখন তা নষ্ট করার দায়িত্বও ওঁদের। কিন্তু রেলের ফাঁকা জায়গায় কেন এত দিন ফেলে রাখা হয়েছে, তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, যে বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে ওই পিপিই-বর্জ্য সংগ্রহ করে নষ্ট করা হয়, তাদের পোশাকপিছু চার টাকা করে দিতে হয়। সেই টাকা কে খরচ করবে, সেই টানাপড়েনেই স্টেশন চত্বরে পড়ে রয়েছে কোভিড-বর্জ্য। যদিও শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে, বেসরকারি সংস্থাকে টাকা দিয়েই ওই বর্জ্য নষ্ট করানো হবে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘রেল ওই বর্জ্য নষ্ট করবে না বলে জানিয়েছে। তাই আমরাই খরচ করে ওই বর্জ্য নষ্ট করব। যে সংস্থাটি ওই কাজ করবে, তাদের সঙ্গে কথা চলছে।’’

Indian Railways COVID Waste Coronavirus in West Bengal Howrah Station
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy