Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
বিরোধিতা ভুলে সব রাজনৈতিক দল জোটবদ্ধ
Sankrail

রেশন বিনামূল্যেই, মেটানো হচ্ছে গ্রাহকদের টাকা

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় রেশনে বিনা মূল্যে চাল, গম আটা দিচ্ছে রাজ্য সরকার।

রেশন গ্রাহককে মেটানো হচ্ছে টাকা। রঘুনাথবাটীতে।

রেশন গ্রাহককে মেটানো হচ্ছে টাকা। রঘুনাথবাটীতে।

নুরুল আবসার
সাঁকরাইল শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২০ ০৭:২২
Share: Save:

করোনা-আতঙ্ক মিলিয়ে দিয়েছে বিবাদমান রাজনৈতিক দলগুলির পঞ্চায়েত সদস্যদের। বিবাদ ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাঁরা দাঁড়িয়েছেন গরিব মানুষের পাশে। নিজেদের সাম্মানিকের টাকা খরচ করছেন এইসব মানুষকে চাল গম কিনে দিতে। হাওড়ার সাঁকরাইল ব্লকের রঘুদেববাটি পঞ্চায়েতের ঘটনা।

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় রেশনে বিনা মূল্যে চাল, গম আটা দিচ্ছে রাজ্য সরকার। কিন্তু এই তালিকায় নেই রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা প্রকল্প (২) (আরকেএসওয়াই-২) গ্রাহকেরা। তাঁদের নির্ধারিত মূল্য দিয়েই চাল ও গম কিনতে হচ্ছে। চালের দাম কিলো প্রতি ১৩ টাকা, গমের দাম কিলো প্রতি ৯ টাকা করে। গ্রাহকেরা যে দামে রেশন দোকান থেকে চাল ও গম কিনছেন সেই টাকা নগদে তাঁদের দিয়ে দিচ্ছেন রঘুদেববাটি পঞ্চায়েতের সদস্যরা। গত মঙ্গলবার থেকে গ্রাহকেরা চাল গমের টাকা পেয়ে যাচ্ছেন।

এই পঞ্চায়েতে মোট চারজন রেশন ডিলার আছেন। তাঁদের দোকানের সামনে চেয়ার টেবিল পেতে বসে আছেন পঞ্চায়েত সদস্যরা। আরকেএসওয়াই-২ গ্রাহকেরা চাল ও গম নিয়ে রেশন ডিলারের কাছ থেকে বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের কাছ থেকে রসিদ দেখে গ্রাহকদের দাম দিয়ে দিচ্ছেন। পঞ্চায়েতের প্রধান দিলীপ দে বলেন, ‘‘একই লাইনে দাঁড়িয়ে কেউ বিনা পয়সায় চাল আটা নেবেন। কেউ পয়সা দিয়ে চাল গম কিনবেন, তা হয় না। আমাদের পঞ্চায়েতে চার হাজার আরকেএসওয়াই-২ গ্রাহক আছেন। তাঁদের বেশিরভাগ গরিব। আমরা সবাইকে তিন মাস ধরে চাল ও গমের যা দাম হয়, তা দিয়ে দেব। এর জন্য সরকারের তহবিল আমরা ভাঙছি না। সাম্মানিক হিসাবে আমরা যা পাই সেই টাকা থেকেই গ্রাহকদের হাতে চাল ও গমের দাম তুলে দেব।’’

রঘুদেববাটি পঞ্চায়েতের আসন ১৫টি। তার মধ্যে তৃণমূলের দখলে ৭। কংগ্রেস, সিপিএম এবং বিজেপির সদস্য যথাক্রমে ২, ৩ এবং ৩ জন করে। বোর্ড গঠনের সময়ে কংগ্রেস এবং সিপিএমের সদস্যরা তৃণমূলকে সমর্থন করেছিলেন। ফলে তৃণমূলই বোর্ড গঠন করে। বিজেপি থেকে যায় বিরোধী হিসাবে। তবে কংগ্রেস এবং সিপিএম তৃণমূলকে সমর্থন করলেও পঞ্চায়েতের বোর্ডে তারা নেই। এই দুই দলের সদস্যদের বক্তব্য, একটি বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাঁরা তৃণমূলকে বোর্ড গঠন করতে সহায়তা করেছেন। প্রয়োজনে বোর্ডের বিরোধিতা করতে তাঁরা পিছপা হন না।

করোনা-সঙ্কটে সব বিরোধিতা চৌপাট হয়ে গিয়েছে। মানুষের মুখে বিনা পয়সায় খাবার তুলে দিতে একই ছাতার নীচে জমা হয়েছেন তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপি-র সদস্যরা।

প্রথমে ঠিক হয়েছিল, এই টাকা দেওয়া হবে পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল থেকে। ডিলারদের বলা হয়েছিল তাঁরা যেন বিনামূল্যে আরকেএসওয়াই-২ গ্রাহকদের চাল ও গম দিয়ে দেন। পরে তাঁরা পঞ্চায়েতের কাছ থেকে তাঁদের পাওনা বুঝে নেবেন। কিন্তু বিষয়টি খাদ্য দফতর জানতে পেরে ডিলারদের জানিয়ে দেয় কোনও অবস্থাতেই বিনা পয়সায় চাল ও গম দেওয়া যাবে না। ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকেও পঞ্চায়েতকে বলা হয় নিজস্ব তহবিল ভেঙে এই সব করা যাবে না। ফলে পরিকল্পনাটি ভেস্তে যায়।

প্রধান বলেন, ‘‘আমরা পঞ্চায়েত এলাকায় মাইক প্রচার করে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলাম যে আরকেএস-২ গ্রাহকদের বিনামূল্যে চাল ও গম দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তাই তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করতে চাইনি। আমরা পঞ্চায়েতের ১৫ জন সদস্য বসে ঠিক করি, আমাদের সাম্মানিকের টাকা গ্রাহকদের হাতে তুলে দেব। যাতে তাঁরা সেই টাকায় চাল ও গম কিনে নিতে পারেন। সাম্মানিকের টাকা দিতে সব সদস্য একমত হন।’’ সিপিএম সদস্য রবিন নস্কর বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের নানা কাজে আমাদের বিরোধিতা আছে। কিন্তু এখন আমরা ঐক্যবদ্ধ। এই সময়ে বড় কাজ হল মানুষের পাশে থাকা।’’

একই কথা জানান কংগ্রেস সদস্য সবুর আলি সেখ ও বিজেপির রাজু রায়। এই পঞ্চায়েত এলাকা থেকে তৃণমূলের তিন জন পঞ্চায়েত সদস্য আছেন। তাঁরাও নিজেদের সাম্মানিকের টাকা দিয়ে পঞ্চায়েতের উদ্যোগে সামিল হয়েছেন।

হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রের খবর, সরকারি নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করার জন্য রঘুদেববাটি পঞ্চায়েতকে সতর্ক করা হয়েছে। প্রধান বলেন, ‘‘পুলিশ আমাদের বলছে এ ভাবে যদি মানুষকে টাকা দেওয়া হয় অন্য পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ হবে। আমরা সাফ জানিয়েছি, আমরা আমাদের নিজেদের টাকা দিয়ে গরিব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। এতে অন্যায় কোথায়?’’

অন্য দিকে ওয়েস্ট বেঙ্গল এম আর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক বিকাশ বাগ বলেন, ‘‘আমরা ডিলাররা সরকারের নিয়ম ভঙ্গ করে গিয়ে কাউকে বিনা পয়সায় চাল গম দিইনি। দোকানের বাইরে কে কী করছেন তা আমরা জানি না।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sankrail West Bengal Lockdown Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE