উৎসবের মাসে বোনাস তো দূরের কথা, পুরসভার চুক্তি ভিত্তিক শ্রমিক বা স্বাস্থ্যকর্মীরা এখনও বেতনই পাননি। অথচ পুরপ্রধানের সৌজন্যে মোটা টাকা ‘বোনাস’ পকেটে পুরেছেন কাউন্সিলরদের একাংশ। আজ পঞ্চমী, আর কবে ছেলেমেয়েদের হাতে পুজোর জামা তুলে দেবেন তা নিয়েই ক্ষুব্ধ ওই কর্মীরা।
কাউন্সিলরদের ‘বোনাস’ নেওয়ার খবর বুধবার আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশ হতেই বিষয়টি নিয়ে চর্চা শুরু হয় পুরসভার অন্দরে। ইতিমধ্যেই প্রশাসনের তরফে পুরসভার সংশ্লিষ্ট অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ওই খাতে কোনও টাকা যাতে আর না দেওয়া হয়। যে সব কাউন্সিলর বোনাস নিয়েছেন, নতুন পুরপ্রধান দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই টাকা তাঁদের ফেরত দিতে বলা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।
বোনাস নেওয়া তৃণমূল কাউন্সিলররা অবশ্য বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। বিতর্ক এড়াতে অনেকেই জানিয়েছেন, দল যা বলবে সেটাই করবেন। প্রয়োজনে টাকা ফেরত দেবেন। যদিও বাম সমর্থিত নির্দল কাউন্সিলর ইন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘ওই টাকা বোনাস নয়, অনুদান। পুরসভার তহবিল থেকেও দেওয়া হয়নি। পুরপ্রধানের তহবিল থেকে দেওয়া হয়েছে।’’ তিনি জানান, যদি দেখা যায় ওই টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রে আইনি বাধা রয়েছে, তাহলে সকলে মিলে আলোচনা করে ফেরত দেওয়া হবে। কংগ্রেস কাউন্সিলর ব্রহ্মদেও রবিদাসেরও যুক্তি, ‘‘পুরপ্রধানের এক্তিয়ার আছে ওই টাকা দেওয়ার। যদি আইনে দেখা যায় এটা ভুল, নিশ্চয়ই টাকা ফেরত দেব।’’
তবে কাউন্সিলরদের বোনাস বিতর্কের মধ্যেই পুজোর মাসে এখনও বেতন না পেয়ে পুরসভার চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক, স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। রিষড়ায় পুরসভা পরিচালিত পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ২০ জন চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক আছেন। তাঁদের অভিযোগ, সাকুল্যে ৩ থেকে ৬ হাজার টাকা বেতন পান তাঁরা। অথচ পুজোর মুখে সেই সামান্য টাকাও এখনও হাতে পেলেন না। অথচ কাউন্সিলরদের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে বোনাসের ব্যবস্থা হয়েছে।
একই অবস্থা চুক্তিভিত্তিক স্বাস্থ্যকর্মী বা মিড-ডে-মিলের কর্মীদেরও। পেনশন পাননি অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা। সব মিলিয়ে কয়েকশো লোক চলতি মাসে তাঁদের প্রাপ্য পাননি। পুরপ্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা বলেন, ‘‘পুজোর মাসে খরচ বেশি। অথচ বেতন পেলাম না। হতাশ লাগছে। অত টাকা করে বোনাস নেওয়ার সময় কাউন্সিলররা আমাদের কথা একবারও ভাবলেন না!’’
পুরসভা সূত্রে খবর, দু’টি অ্যাকাউন্টে মাত্র লাখ চারেক টাকা রয়েছে। এই অবস্থায় ওই কর্মীদের বেতনের বিষয়টি নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষ কোনও আশার বাণী শোনাতে পারেননি। কাল ষষ্ঠী, দেবীর বোধন। অথচ উৎসবের শুরুতেই বিষাদের সুর কর্মীদের ঘরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy