Advertisement
E-Paper

ভিক্ষা চাওয়ায় প্রৌঢ়কে পিটিয়ে খুন, দেহে আগুন

শুক্রবার গভীর রাতে হুগলি স্টেশন সংলগ্ন কৃষ্ণপুর এলাকা থেকে লক্ষ্মী কর্মকার (৫২) নামে ওই প্রৌঢ়ের দগ্ধ দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে মিলেছে রড ও বাঁশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৯ ০৬:১৩
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

দু’বেলা দু’মুঠো খাওয়ার জন্য তিনি ভিক্ষা চেয়েছিলেন। এই ছিল ‘অপরাধ’। সে জন্য এক প্রতিবন্ধী প্রৌঢ়কে রড-বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে খুন করে খড় দিয়ে দেহ জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগে এক যুবককে গ্রেফতার করা হল।

শুক্রবার গভীর রাতে হুগলি স্টেশন সংলগ্ন কৃষ্ণপুর এলাকা থেকে লক্ষ্মী কর্মকার (৫২) নামে ওই প্রৌঢ়ের দগ্ধ দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে মিলেছে রড ও বাঁশ। খড়পোড়া ছাইয়ের নমুনাও সংগ্রহ করেছে পুলিশ। ওই প্রৌঢ়কে খুনের অভিযোগে শনিবার সকালে বর্ধমান স্টেশন থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে সঞ্জয় রাজবংশী নামে কৃষ্ণপুরের এক যুবককে। লক্ষ্মীবাবু হুগলি স্টেশনের কাছেই পরিত্যক্ত আবাসনের একটি ঘরে থাকতেন।

চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর জানান, বর্ধমান স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় মাসির বাড়ি পালানোর মতলব করেছিল সঞ্জয়। তখনই তাকে ধরা হয়। জেরায় সে অপরাধের কথা কবুল করে জানিয়েছে, ওই প্রৌঢ়ের ভিক্ষা চাওয়ায় বিরক্ত হয়ে সে ওই কাণ্ড ঘটায়। তবু, খুনের পিছনে অন্য কারণ রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নিহতের দাদা, চুঁচুড়ার লোহারপাড়া এলাকার বাসিন্দা অমলবাবুই থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। দোষীর উপযুক্ত শাস্তি দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘ভাই বেশিরভাগ সময় স্টেশন চত্বরেই কাটাত। পাশের আবাসনে থাকত। মাঝেমধ্যে আমার বাড়িতে খেতে যেত। ভিক্ষে চাওয়ায় কাউকে এ ভাবে খুন করে পুড়িয়ে দিতে হবে? কী নৃশংস!’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লক্ষ্মী আগে দিনমজুরি করতেন। বছরখানেক আগে একটি দুর্ঘটনায় চোট পেয়ে তাঁর ডান পা অকেজো হয়ে যায়। লাঠি নিয়ে চলাফেরা করতেন। দাদার সংসার ছেড়ে ভিক্ষা করে দিনযাপন শুরু করেছিলেন। বেশিরভাগ সময় কাটাতেন হুগলি স্টেশন চত্বরেই। মূলত ট্রেনযাত্রীদের কাছেই তিনি ভিক্ষা করতেন।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, জেরায় ধৃত সঞ্জয় কবুল করেছে, কালীপুজোর রাতে ওই প্রৌঢ়কে সে ভিক্ষা দেয়। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ লক্ষ্মী ফের ভিক্ষা চাওয়ায় সে দেয়নি। এ জন্য ওই প্রৌঢ় তাকে গালিগালাজ করে। তাতে রেগে সে লক্ষ্মীর দিকে ইট ছোড়ে। লক্ষ্মী সে কথা টহলদার রেল পুলিশকে জানানোয় সঞ্জয় তখনকার মতো সেখান থেকে পালায়। এরপর রাত ১টা নাগাদ সঞ্জয় ওই প্রৌঢ়কে তাঁর আস্তানা থেকে বের করে রড ও বাঁশ দিয়ে মারধর শুরু করে। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর সঞ্জয় দেহটি টানতে টানতে হুগলি স্টেশন রোডে নিয়ে যায়। ওই রাস্তার ধারেই একটি খড়ের দোকান রয়েছে। সেখানে পাঁচিল টপকে ঢুকে সে খড় নিয়ে এসে মৃতদেহের উপরে রেখে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগরের কালীতলা এলাকার বাসিন্দা রাহুল সরকার। তিনি হাওড়ার সালকিয়ায় একটি কারখানায় কাজ করেন। প্রতিদিন হাওড়া থেকে ছাড়া শেষ ট্রেনে বাড়ি ফেরেন। শুক্রবার ফেরার সময়ে ওই দৃশ্য দেখে তিনি আর এগোতে পারেননি। পরে ঘটনার কথা পুলিশকে জানান। তাঁর কথায়, ‘‘স্টেশন থেকে একটু এগোতেই দেখি, পা ধরে একজনের মৃতদেহ টেনে আনছে এক যুবক। পাশের একটা কালীপুজোর মণ্ডপে লুকিয়ে দেখছিলাম। দেখলাম, ওই যুবক তারপরেই খড়ের দোকান থেকে খড় এনে দেহটা জ্বালিয়ে দিল।’’

যে দোকান থেকে সঞ্জয় খড় আনে বলে অভিযোগ, তার মালিক ইন্দ্রজিৎ যাদব। তিনি বলেন, ‘‘শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় দোকান বন্ধ করি। যেখানে খড় মজুত থাকে, সে জায়গাটা অবশ্য শুধু বেড়া দেওয়া থাকে। সকালে দোকান খুলতে এসে দেখি, সামনে খড় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। কিছু পোড়া খড়ও রয়েছে। ভেবেছিলাম, কেউ হয়তো মশা তাড়াতে খড় জ্বালিয়েছিলেন। পরে শুনি, দোকানের কাছেই একজনকে মেরে খড় দিয়ে পোড়ানো হয়েছে।’’

Chinsurah Arrest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy