Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বৈদ্যবাটিতে আশ্রম-মালিককে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার যুবক

ঘটনার পর থেকে থম মেরে গিয়েছিল বছর বারোর ছেলেটা। স্থানীয় আরও কয়েকটা বাচ্চার সঙ্গে তাকেও নানা কথা জিজ্ঞাসা করছিল পুলিশ। শেষ পর্যন্ত তার কথার সূত্র ধরেই বৈদ্যবাটিতে নিজের আশ্রমে বিভূতিভূষণ হাজরার খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে এলাকার এক যুবককে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতের নাম বিভাস মল্লিক। সে রং-মিস্ত্রির কাজ করে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বৈদ্যবাটি শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৬ ০২:৩১
Share: Save:

ঘটনার পর থেকে থম মেরে গিয়েছিল বছর বারোর ছেলেটা। স্থানীয় আরও কয়েকটা বাচ্চার সঙ্গে তাকেও নানা কথা জিজ্ঞাসা করছিল পুলিশ। শেষ পর্যন্ত তার কথার সূত্র ধরেই বৈদ্যবাটিতে নিজের আশ্রমে বিভূতিভূষণ হাজরার খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে এলাকার এক যুবককে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতের নাম বিভাস মল্লিক। সে রং-মিস্ত্রির কাজ করে। পুলিশের দাবি, বিভাসের সঙ্গে আরও কয়েক জন ওই আশ্রমে ডাকাতির উদ্দেশ্যে গিয়েছিল। সম্ভবত চিনে ফেলাতেই বিভূতিবাবুকে শ্বাসরোধ করে তারা খুন করে। গোটা ঘটনাই ঘটে এক বালকের চোখের সামনে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ধৃতকে জেরা করে ঘটনায় জড়িত আরও কয়েকজনকে খোঁজা হচ্ছে।’’

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারি বিভূতিভূষণবাবু আগে হিন্দমোটরে থাকতেন। বছর কুড়ি আগে তিনি বৈদ্যবাটির ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের ধানমাঠ এলাকায় একটি আশ্রমে থাকতে শুরু করেন। পরে স্থানীয় এন সি ব্যানার্জি রোডে নিজে একটি আশ্রম তৈরি করেন। নাম দেন ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ সেবা ধর্মাশ্রম’। গত ১৬ বছর ধরে তিনি এখানেই থাকতেন। স্ত্রী-ছেলে হিন্দমোটরের বাড়িতে থাকেন। গত শুক্রবার সকালে আশ্রমের ঘর থেকে গামছা দিয়ে হাত-পা এবং মুখ বাঁধা অবস্থায় বিভূতিবাবুর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ঘরের জিনিসপত্র লণ্ডভণ্ড হয়েছিল। বৃদ্ধের ছেলে অরুণ হাজরা শ্রীরামপুর থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পারে, বিভূতিবাবু বাচ্চাদের ভালবাসতেন। তাদের আশ্রমে এনে পড়াতেন, খাওয়াতেন। মাঝেমধ্যে একেক জন আশ্রমে তাঁর কাছে থেকেও যেত। বাচ্চারা তাঁকে ‘দাদু’ বলে ডাকত। ওই আশ্রমে যাতায়াত রয়েছে এমন কয়েকটি বাচ্চার সঙ্গে পুলিশ কথা বলে। তাদের একজন পুলিশকে জানায়, ওই দিন সকাল থেকে সে আশ্রমেই ছিল। সেখানে শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মতিথিতে পুজো হচ্ছিল। দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ বাড়িতে ফিরে যায়। ফের সন্ধ্যায় সময় আশ্রমে ফিরে আসে রাতে থাকবে বলে। সন্ধ্যার পরে আশ্রম ফাঁকা হয়ে যায়। দাদু রাত ৮টা নাগাদ আশপাশের বাড়িতে প্রসাদ দেন। তার পরে তাকে নিয়ে শুতে চলে যান।

এর পরেই বিভাস-সহ কয়েক জন আশ্রমে ঢোকে। সকলেই ওই আশ্রমে কখনও না কখনও গিয়েছে। ধৃতকে জেরা করে পুলিশের অনুমান, বিভাসদের ধারণা ছিল, পুজোর জন্য অনেক টাকা পাওয়া যাবে। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরে বিভূতিবাবু প্রায় ১২ হাজার টাকা পেনশন পান। দুষ্কৃতীরা তাও জানত। ওই সব টাকা হাতানোর মতলবেই তারা আশ্রমে ঢোকে। সম্ভবত বিভূতিবাবু তাদের চিনে ফেলাতেই তাঁকে হাত-পা এবং মুখ বেঁধে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলে তারা। কিন্তু গোটা ঘর খুঁজেও ২০ টাকার বেশি তারা পায়নি। যাওয়ার সময় তারা ছেলেটিকে তার বাড়ির সামনে পৌঁছে দিয়ে যায়। মাস খানেক আগে আশ্রম থেকে ৬০ হাজার টাকা খোওয়া গিয়েছিল বলে বিভূতিবাবু ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছিলেন। কিন্তু অনেকেরই সেখানে যাতায়াত থাকায় কাউকে চিহ্নিত করা যায়নি।

পুলিশের দাবি, বাচ্চাটি জানিয়েছে, ঘটনার সময় দুষ্কৃতীদের এক জন তার মুখ চেপে ধরে রাখে। এমনকী কাউকে জানালে তার ক্ষতি করা হবে বলেও শাসানি দেয়। বৃহস্পতিবার ঘটনার পরেই বিভাস পালিয়ে গিয়েছিল। বাচ্চাটির কথার সূত্র ধরে পুলিশ তার খোঁজ শুরু করে। শনিবার রাতে হরিপাল থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। রবিবার ধৃতকে শ্রীরামপুর আদালতে তোলা হলে ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম পল্লব চক্রবর্তী তাকে ১০ দিন পুলিশ হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। যদিও বিভাসের দাবি, ‘‘আমি মারিনি। অন্য এক জন গলাটা ধরেছি‌ল। টাকার জন্যই ওঁকে মারা হয়। তবে ঘরে টাকাপয়সা কিছু ছিল না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Youth arrested murder ashram baidyabati
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE