Advertisement
E-Paper

ট্রেকিংয়ে মৃত্যু যুবকের, ভয়ে আত্মঘাতী শেরপা

ট্রেকিংয়ে গিয়ে মৃত্যু হল বাগনানের এক যুবকের। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম সৈকত সামন্ত (২৭)। তিনি বাগনানের বড়োর গ্রামের বাসিন্দা। বুধবার সিকিমের ফালুট থেকে নামার পথে অসুস্থ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি সঙ্গীদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:২১
শোক: রওনা হওয়ার আগে শিয়ালদহ স্টেশনের নিজস্বী সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে সৈকত লিখেছিলেন ‘যাত্রা শুরু’। (ইনসেটে) শোকার্ত বাবা। নিজস্ব চিত্র

শোক: রওনা হওয়ার আগে শিয়ালদহ স্টেশনের নিজস্বী সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে সৈকত লিখেছিলেন ‘যাত্রা শুরু’। (ইনসেটে) শোকার্ত বাবা। নিজস্ব চিত্র

ট্রেকিংয়ে গিয়ে মৃত্যু হল বাগনানের এক যুবকের। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম সৈকত সামন্ত (২৭)। তিনি বাগনানের বড়োর গ্রামের বাসিন্দা। বুধবার সিকিমের ফালুট থেকে নামার পথে অসুস্থ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি সঙ্গীদের।

এই ঘটনার পরে সৈকতদের দলের গাইড মিংমা নরবু শেরপা (৪৫) আত্মহত্যা করে থাকত পারেন বলে সিকিম পুলিশ দাবি করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে আক্সিজেন সিলিন্ডার সঙ্গে না নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন সৈকতের সঙ্গীরা। পুলিশের অনুমান, ঘটনার অভিঘাতে ভয় পেয়েই মিংমা পাশের একটি জঙ্গলে গিয়ে গলায় দড়ির ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।

বাগনান থানার পুলিশ জানিয়েছে, গত ২০ ডিসেম্বর বাগনানের ৮ যুবক ফালুটের উদ্দেশে রওনা দেন। সঙ্গে ছিলেন নদিয়ার চাকদার দুই যুবকও। শিয়ালদহ থেকে নিউ জলপাইগুড়ি হয়ে তাঁরা সিকিম পৌঁছন ২১ ডিসেম্বর। পরদিন গাইড মিংমা এবং চার জন কুলি নিয়ে দলটি ট্রেকিং শুরু করে। দলের এক সদস্য আলোক মান্না সিকিম থেকে বৃহস্পতিবার ফোনে বলেন, ‘‘২৩ তারিখ আমরা কালিঝাড় হয়ে ফালুট পৌঁছই। সে দিনই ঠান্ডা জলে মাথা ভিজিয়েছিলেন সৈকত। তারপরেই তিনি অসুস্থ হয়ে প়ড়েন।’’ আলোক বলেন, ‘‘ওষুধ খাওয়ানোর পর খানিকটা সুস্থ হন সৈকত। ওর জন্যই ২৪ তারিখ রাতে আমরা ফালুটে থেকে যাই। ২৫ তারিখ আমরা নামা শুরু করি। কিছুটা নামার পর ওর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।’’ রাতে তাঁরা গড়খেতে থেকে যান। আলোক বলেন, ‘‘সৈকতের কথা মতো পরদিন তাঁকে একটি ঘোড়ায় চড়িয়ে নামানো হচ্ছিল। পিছনে ছিলেন গাইড। একশো ফুট দূরে ছিলেন বাকি ন’জন। সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ গড়খে ও ভারাং এর মাঝে হঠাৎ সৈকত ঘোড়ার পিঠেই ঢলে পড়েন। আমরা দৌড়ে এসে সৈকতকে নিচে নামিয়ে কিছুটা দূরে গেজিং হাসপাতাল নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।’’

২৭ তারিখে ওই হাসপাতালে ময়না তদন্ত হয় সৈকতের। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই দশ জনের দলের মধ্যে সৈকত-সহ চার জন প্রথমবার ট্রেকিং করছিলেন। দলের সদস্যরা জানান, সৈকতের যখন শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, তখন বারে বারে গাইডকে জানানো হয়। গাইড অনুমতি দিতেই নামা শুরু হয়। আলোকের অভিযোগ, ‘‘ওঠার সময় গাইডকে বারে বারে অক্সিজেন সিলিন্ডার সঙ্গে নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু গাইড বলেছিলেন, অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগবে না। সৈকত অসুস্থ হওয়ার পরই গাইড আমাদের ছেড়ে চলে যান। পরে সিকিম পুলিশের সাহায্য নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’’

ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সৈকতের বাবা-মা ও আত্মীয়স্বজন। মা বর্ণা মাঝে মাঝেই জ্ঞান হারাচ্ছেন। সৈকতের বাবা কৃষ্ণপদ সামন্ত বলেন, ‘‘ছেলের খুব বেড়াতে যাওয়ার নেশা ছিল। বহু জায়গায় বেড়িয়েছে। কিন্তু পাহাড়ে ট্রেকিং এই প্রথম। আট দিনের জন্য বেরিয়েছিল।’’ কৃষ্ণবাবুর দুই ছেলের মধ্যে সৈকত বড়। অঙ্কে অনার্স নিয়ে স্নাতক পাশ করার পর চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছিলেন তিনি। অবসর সময়ে বাগনানে বাবার কাপড়ের দোকান দেখাশোনা করতেন। আজ, শুক্রবার সৈকতের দেহ বাগনানের বাড়িতে নিয়ে আসবেন তাঁরা সহযাত্রীরা।

Trekking Bagnan Phalut
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy