Advertisement
E-Paper

ওভারলোডিং-এর নির্দেশিকা, মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি ট্রাক-মালিক, চালকদের

ওভারলোডিং রুখতে কড়া নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য সরকার। অথচ তা সঠিক ভাবে কার্যকর হচ্ছে না এই অভিযোগে এবং অবিলম্বে ওই নির্দেশ বাস্তবায়িত করার দাবি জানিয়ে সম্প্রতি হুগলি জেলার পুলিশ-প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন ট্রাক মালিকরা। এ বার লাগাতার অবস্থানে বসলেন তাঁরা। পুলিশি জুলুম রুখতে এবং ওভারলোডিং বন্ধে মুখ্যমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হবে, এমনই দাবি তুলেছেন তাঁরা।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০৭
ডানকুনি টোলপ্লাজায় তোলা নিজস্ব চিত্র। ইনসেটে, সিঙ্গুরে অবস্থানে ট্রাকমালিকেরা।

ডানকুনি টোলপ্লাজায় তোলা নিজস্ব চিত্র। ইনসেটে, সিঙ্গুরে অবস্থানে ট্রাকমালিকেরা।

ওভারলোডিং রুখতে কড়া নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য সরকার। অথচ তা সঠিক ভাবে কার্যকর হচ্ছে না এই অভিযোগে এবং অবিলম্বে ওই নির্দেশ বাস্তবায়িত করার দাবি জানিয়ে সম্প্রতি হুগলি জেলার পুলিশ-প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন ট্রাক মালিকরা। এ বার লাগাতার অবস্থানে বসলেন তাঁরা। পুলিশি জুলুম রুখতে এবং ওভারলোডিং বন্ধে মুখ্যমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হবে, এমনই দাবি তুলেছেন তাঁরা।

সিঙ্গুরের রতনপুর মোড়ের কাছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে রীতিমতো মঞ্চ বেঁধে গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে ওই বিক্ষোভ-অবস্থান। কর্মসূচি চলবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ট্রাক মালিকদের দাবি, ওভারলোডিংয়ে তাঁদের কার্যত কোনও হাত থাকে না। অথচ পথে-ঘাটে পুলিশ ট্রাক আটকে তাঁদের হেনস্থা করে। মোটা টাকা জরিমানা করে। সরকারি নির্দেশ কার্যকর হলে পুলিশি হেনস্থার হাত থেকে অন্তত রেহাই পাবেন তাঁরা। যদিও এ ব্যাপারে পুলিশ-প্রশাসনের ছিটেফোঁটা উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ফলে বিভিন্ন জেলা তো বটেই, খাস কলকাতাতেও রাস্তায় ট্রাকে অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে অবাধ যাতায়াত চলছে।

প্রশাসন সূত্রের খবর, রাজ্যে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় আড়াই লক্ষ ট্রাক রয়েছে। প্রায় সব ট্রাকেই বহন ক্ষমতার থেকে অতিরিক্ত মাল তোলা হয়। অভিযোগ, বহন ক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ পণ্য পরিবহণের ফলে সব সময় গাড়ির নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হয় না। গাড়ির যন্ত্রাংশ খারাপ হয়। দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়ে। গাড়ির ক্ষতির পাশাপাশি রাস্তারও ব্যাপক ক্ষতি হয়। কিন্তু সে সব উপেক্ষা করেই সরকারকে কর ফাঁকি দিতে ট্রাকে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহণ চলছে।

ট্রাক মালিকদের অভিযোগ, ‘উপরি আদায়’-এর জন্যই পুলিশ-প্রশাসনের একাংশ ওভারলোডিং বন্ধে উদ্যোগী হয় না। যেখান থেকে মালপত্র ট্রাকে তোলা হয় (লোডিং পয়েন্ট) এবং যেখানে মালপত্র নামানো হয় (আনলোডিং পয়েন্ট), সেখানে কোনও নজরদারি চালানো হয় না। বদলে রাস্তায় ট্রাক থামিয়ে ওভারলোডিংয়ের জন্য চালকদের থেকে জরিমানা আদায় করা হয়। অভিযোগ, যার একটা বড় অংশ যায় ওই সমস্ত সরকারি কর্মীর পকেটে। আবার বিভিন্ন সড়কে জায়গায় জায়গায় নির্দিষ্ট দোকানে বিভিন্ন থানার মাসিক কার্ড থাকে। তাতে নানা ধরনের চিহ্ন ছাপা থাকে। রাস্তায় ঝঞ্ঝাট এড়ানোর ছাড়পত্র হিসেবে সেই কার্ডের বিনিময়ে টাকা দিতে হয় ট্রাক চালকদের। থানার ডাকবাবু মারফত সেই টাকা দফতরের ‘বড়কর্তা’দের কাছেও পৌঁছে যায়। এই কারণেই ‘ডাকবাবু’ ট্রাক ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের কাছে একটি অতি পরিচিত শব্দ। পূর্বতন বাম সরকারের আমলেও ওভারলোডিং আটকানোর চেষ্টা হয়েছিল। তার নির্দেশিকাও জারি হয়েছিল, কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। সেই অবস্থার পুনরাবৃত্তি আটকাতে তাই এ বার নির্দেশিকা কার্যকর করতে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন ট্রাক মালিকেরা।

সম্প্রতি রাজ্য সরকার নির্দেশিকা জারি করে বিভিন্ন জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে দেয়, ওভারলোডিং রুখতে রাস্তায় নজরদারি চালাতে হবে। ট্রাক দাঁড় করিয়ে অতিরিক্ত মাল নামিয়ে ফেলতে হবে। জরিমানা করতে হবে চালককে। ফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক তথা হুগলির ইউনাইটেড ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওভারলোডিংয়ের জন্য বহু ট্রাক বসিয়ে রাখতে হয়। মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি হস্তক্ষেপ করলে এই সমস্যার সমাধান হবে। পুলিশ-প্রশাসনের একশ্রেণির অফিসারের জুলুম থেকে মুক্তি পাব। তাই মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছি।’’

পুলিশের বিরুদ্ধে ট্রাকমালিক, চালকদের অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি জেলার পুলিশ কর্তারা। হুগলির আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের (আরটিও) কর্তাদের অবশ্য দাবি, সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হচ্ছে। বিভিন্ন সড়কে নজরদারি চালানো হচ্ছে। ডানকুনিতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ওপর চেকপোস্ট এবং ওয়েব্রিজ (পণ্যবোঝাই ট্রাক ওজনের ব্যবস্থা) তৈরি করা হবে। সেখানে পুলিশ ও পরিবহণ দফতরের অফিসাররা থাকবেন।

prakash pal singur overloading circular truck owners southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy