Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
মুম্বই রোড

কোনা মোড়ে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল

তিন বছর আগের স্মৃতিটা এখনও টাটকা লিলুয়ার কোনা মোড়ের বাসিন্দাদের কাছে। ২০১২-এর ২ এপ্রিল। বিকেল পৌনে ছ’টা নাগাদ মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছিল দুই যুবকের। তাঁরা দু’জনেই ছিলেন স্থানীয় চামরাইল পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য। ঘটনার পরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক তথা মুম্বই রোডের কোনা মোড়। রাস্তার ধারের ৪০টি অস্থায়ী দোকান, ঘাতক লরি-সহ বিডিও অফিসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল উত্তেজিত জনতা।

সম্প্রতি এই মোড়েই বসল স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল।  ছবি:দীপঙ্কর মজুমদার।

সম্প্রতি এই মোড়েই বসল স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল। ছবি:দীপঙ্কর মজুমদার।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:১১
Share: Save:

তিন বছর আগের স্মৃতিটা এখনও টাটকা লিলুয়ার কোনা মোড়ের বাসিন্দাদের কাছে।

২০১২-এর ২ এপ্রিল। বিকেল পৌনে ছ’টা নাগাদ মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছিল দুই যুবকের। তাঁরা দু’জনেই ছিলেন স্থানীয় চামরাইল পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য। ঘটনার পরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক তথা মুম্বই রোডের কোনা মোড়। রাস্তার ধারের ৪০টি অস্থায়ী দোকান, ঘাতক লরি-সহ বিডিও অফিসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল উত্তেজিত জনতা। এমনকী পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে লাঠি চার্জও করতে হয়।

এই ঘটনার পরে ডোমজুড় বিধানসভার অর্ন্তগত ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে কোনার চার রাস্তার মোড়ে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল বসানোর জন্য আন্দোলন শুরু করেন স্থানীয়েরা। অবশেষে বিধায়ক তহবিলের আট লক্ষ টাকা ব্যয়ে ওই মোড়ে লাগানো হল স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল। সম্প্রতি ওই সিগন্যালটির উদ্বোধন করেন স্থানীয় বিধায়ক তথা সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) সুমিত কুমার বলেন, “সিগন্যাল লাগানোর ফলে ওই মোড়ে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে। ওখানে একটি বাসস্ট্যান্ড তৈরিরও পরিকল্পনা রয়েছে।”

৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বালি থেকে শলপের দিকে যাওয়ার পথেই পড়ে কোনার চার রাস্তার মোড়। এর একটি রাস্তা চলে গিয়েছে সালকিয়ার দিকে, একটি চামরাইল, জগদীশপুর পার করে সোজা মিশেছে ডানকুনিতে। আবার আরও একটি রাস্তা মুম্বই রোড হয়ে সোজা গিয়েছে শলপের দিকে। সালকিয়ার দিকে ঢোকার রাস্তার পাশেই রয়েছে বালি-জগাছা ব্লকের বিডিও অফিস। তার সামনেই কোনা-ধর্মতলা রুটের বাসস্ট্যান্ড। আবার রাস্তার ধারে ও ফুটপাথের উপর রয়েছে অস্থায়ী দোকান। সকাল-সন্ধ্যায় বাজার বসে সেখানে। স্থানীয় সূত্রে খবর, জাতীয় সড়কের উপরে ওই মোড়ে কোনও ট্রাফিক সিগন্যাল না থাকায় রোজ ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই থাকত। কারণ, মোড়ে কর্তব্যরত মাত্র দু’-তিন জন ট্রাফিককর্মীর পক্ষে ঠিকমতো যানশাসন সম্ভব হত না। সিগন্যাল না থাকায় জাতীয় সড়কে তীব্র গতিতে ছুটে চলা গাড়ি বুঝতে পারত না কখন, কোথায় গতি কমাতে হবে কিংবা থামতে হবে। তাই এক রাস্তা থেকে অন্য রাস্তায় ওঠার সময়েই ঘটত দুর্ঘটনা। এই ভাবে বেশ কয়েকটা দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে।

প্রতিটি দুর্ঘটনার পরেই উত্তপ্ত হয়েছে এলাকা। বাসিন্দারা কোনা মোড়ে সিগন্যাল বসানোর দাবিতে অবরোধও করেছেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ এই মোড়ে সিগন্যালের আন্দোলন নতুন নয় বলেই দাবি বালি-জগাছা ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের সুভাষ রায়ের। তিনি জানান, ২০০৯-এর দুর্ঘটনার পরে স্থানীয়েরা রাস্তা অবরোধ করে প্রথম বিক্ষোভ দেখান। নেতৃত্বে ছিলেন সুভাষবাবু। তিনি বলেন, “তৎকালীন এক মন্ত্রী সেই অবরোধে আটকে গিয়েছিলেন। তার জন্য এফআইআর-ও হয়েছিল।”

কিন্তু সিগন্যাল বসাতে এত দিন লাগল কেন? রাজীববাবু বলেন, “এই কাজের টাকা অনুমোদনের বিষয়ে জেলা পরিকল্পনা দফতরকে দিয়ে বাস্তবায়িত করানোয় কিছু পরিকাঠামোগত সমস্যা ছিল। সেই জন্য রাজ্যের পরিকল্পনা দফতরকে দিয়ে সিগন্যাল বসানোর টাকা অনুমোদন করানো হয়েছে। তাই দেরি।” সম্প্রতি কোনা মোড়ে সিগন্যালের উদ্বোধনে এসে মন্ত্রী জানান, এখানে নির্দিষ্ট বাসস্ট্যান্ড না থাকায় প্রায়ই যানজট হয়। এর সমাধানে বিডিও অফিসের পাশে একটি বাসস্ট্যান্ড তৈরি করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mumbai road howrah city police santonu ghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE