ভোট হয়েছে বনগাঁ-কৃষ্ণগঞ্জে। সেই সুবাদে হরিণখোলায় ‘বিজয় মিছিল’ বের করে ৭৫ জন ঘরছাড়া কর্মীকে ঘরে ফেরাল তৃণমূল।
শুধু ঘরে ফেরানো নয়। পুড়শুড়ার বিধায়ক পারভেজ রহমানের নেতৃত্বে বুধবার দুপুরে হাজার পাঁচেক তৃণমূল কর্মী পরপর পাঁচটি গ্রামে ঢুকে তাণ্ডব চালাল। ভেঙে দেওয়া হল বিজেপি সমর্থকদের ঘরদোর, আগুন লাগানো হল খড়ের গাদায়, তছনছ করে দেওয়া হল আলুর খেত। মুড়িমুড়কির মতো ছোড়া হল বোমা। খানিক দৌড়োদৌড়ি করে বেড়ালেও কার্যত দর্শকই হয়ে রইল পুলিশ।
মুণ্ডেশ্বরীর চরে বালি খাদানের দখল নিয়ে রাজনৈতিক লড়াই হুগলির আরামবাগে নতুন কিছু নয়। আশির দশকে সিপিআই-সিপিএমের রক্তক্ষয়ী লড়াই দেখেছে এলাকা। এক সময়ে আরামবাগের সিপিএম সাংসদ অনিল বসুই ছিলেন সেখানে শেষ কথা। বামেদের জমি আলগা হতে চরের দখল নিয়েছিল তৃণমূল। এখন আবার তৃণমূলের পায়ের নীচে মাটি সরতেই বিজেপি বাজারে নেমে পড়েছে।
এই বালি কারবারের অন্যতম বড় মাথা জয়নাল খাঁ এক সময়ে সিপিএম শিবিরেই ছিলেন। জার্সি বদলে এখন তিনি গেরুয়া শিবিরে। তিনি নিজে এলাকায় ঢুকতে না পারলেও তাঁর লোক জন বোমা-গুলি-পাইপগান নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের দাপটে শাসকদলও কোণঠাসা। তাদের বলে বলীয়ান হয়েই এর আগে তৃণমূলের বেশ কিছু কর্মীকে ঘরছাড়া করেছিল বিজেপি। এ দিন তাদেরই একাংশকে নিয়ে নেতারা গ্রামে ঢুকলেন।
এ দিন তৃণমূলের মিছিল এগিয়ে আসতে দেখেই পূর্ব কৃষ্ণপুরের বিজেপি সমর্থক পরিবারের পুরুষেরা পালাতে শুরু করেন। এক দল বোমা ফাটাতে ফাটাতে পুড়শুড়ার হুমাচকের দিকে পালায়। তকিপুরের দিকেও চলে যান কিছু লোকজন। তৃণমূল কর্মীরা তাঁদের ধাওয়া করে। বিজেপি সমর্থকদের বাড়ি-বাড়ি হামলা চালানো হয়। পিছু-পিছু গিয়েও পুলিশ কাউকে ধরতে পারেনি। সব গ্রামেই মহিলারা আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে বাচ্চা-কাচ্চা কোলে মাঠে নেমে গিয়েছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, “তৃণমূল নেতারা বলে গিয়েছে, ছেলেদের গ্রাম ফিরতে হলে জরিমানা দিতে হবে। জরিমানার অঙ্কও বলে দিয়েছে অপরাধ অনুযায়ী ৫০ হাজার থেকে দু’লাখ টাকা পর্যন্ত।”
অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পারভেজ রহমান অবশ্য দাবি করেন, “কোথাও অশান্তি হতে দিইনি। আমাদের সমস্ত ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরানো হয়েছে। গ্রামগুলিতে যাতে পরে কোনও অশান্তি না হয়, সে বিষয়ে দলের ছেলেদের যেমন সতর্ক করেছি। বিরোধী দলগুলিকেও শান্তির বার্তা দিয়েছি।” এসডিপিও (আরামবাগ) শিবপ্রসাদ পাত্রও বলেন, “কোথাও কোনও অশান্তি নেই। সব এলাকায় পুলিশ টহল দিচ্ছে।”
রাজ্য রাজনীতিতে জমি পেতে না পেতেই বিজেপি কেন বালিচরের বখরা নেওয়ার লড়াইয়ে নেমে পড়ল? দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের দাবি, “আগে ওই এলাকায় যেখানে আমাদের পাঁচশো লোক ছিল, এখন ২৫ হাজার হয়ে গিয়েছে। সংগঠন সামলাতে সমস্যা হচ্ছে।” কারা সমস্যা করছে তা অবশ্য তিনি বলতে পারেননি। বরং হুগলি জেলার নেতানেত্রীদের নাম ধরে-ধরে প্রশ্ন করা হলে তিনি সব গুলিয়ে ফেলতে থাকেন।
হুগলিতে তাঁদের সংগঠনের যে এলোমেলো অবস্থা তাতে এই মুহূর্তে জেলা বিজেপির দায়িত্বে কে জেলানেত্রী কৃষ্ণা ভট্টাচার্য না কি সহ-সভাপতি স্বপন পাল? প্রশ্ন করতেই রাহুলবাবু চেঁচিয়ে বলতে থাকেন, “ওরা জেলার নয়, ওরা জেলার নয়, আরামবাগের অসিত কুণ্ডুর সঙ্গে কথা বলুন।” গোটা ঘটনায় কোনও দায়ও তিনি নিতে চাননি।