Advertisement
E-Paper

ছিঁচকে থেকে পাকা, চোরের উপদ্রবে নাজেহাল বালি

গভীর রাতে ছাদের উপর খুটখাট শব্দ। আচমকা ঘুম ভেঙে গেল গৃহকর্তার। শুয়েই বলে উঠলেন, ‘এই কে রে?’ তৎক্ষণাৎ শব্দ বন্ধ। উত্তর এল, ‘আমি চোর!’ হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলেন গৃহকর্তা। তত ক্ষণে বাড়ির পাশের জঙ্গলে লাফ মেরে পুকুর পেরিয়ে পগার পার চোর। ছাদে উঠে গৃহকর্তা দেখলেন তাঁর নির্মীয়মাণ দোতলার জন্য যে লোহার রড আনা হয়েছিল, তার কয়েকটি আংশিক টেনে নামানো ছাদ থেকে।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০১:০৪
অলঙ্করণ: সুমন চৌধুরী

অলঙ্করণ: সুমন চৌধুরী

গভীর রাতে ছাদের উপর খুটখাট শব্দ। আচমকা ঘুম ভেঙে গেল গৃহকর্তার। শুয়েই বলে উঠলেন, ‘এই কে রে?’

তৎক্ষণাৎ শব্দ বন্ধ। উত্তর এল, ‘আমি চোর!’

হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলেন গৃহকর্তা। তত ক্ষণে বাড়ির পাশের জঙ্গলে লাফ মেরে পুকুর পেরিয়ে পগার পার চোর।

ছাদে উঠে গৃহকর্তা দেখলেন তাঁর নির্মীয়মাণ দোতলার জন্য যে লোহার রড আনা হয়েছিল, তার কয়েকটি আংশিক টেনে নামানো ছাদ থেকে। পর দিন পড়শির কাছে গৃহকর্তার খেদোক্তি ‘কাল রাতেও চোর এসেছিল। তবে কিছু নিতে পারেনি। আগের দিন লোহার বালতি নিয়ে পালিয়েছে।’

বালির গোস্বামী পাড়ার বাসিন্দা ওই গৃহকর্তা অবশ্য এ বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ করেননি। তবে শুধু তিনিই নন, গোটা বালি জুড়ে প্রতি রাতে ছিঁচকে চোরেদের কাণ্ডকারখানা ঘটেই চলেছে। সব পুলিশের কাছে নথিভুক্তও হচ্ছে না। কেন না এই ছিঁচকে চোরের দল কারও বাড়ি থেকে লোহার বালতি, প্লাস্টিকের মগ। কারও সাইকেল বা বাড়ির সামনের সিএফএল আলো-সহ ছোটখাটো জিনিস নিয়ে চম্পট দিচ্ছে।

ছিঁচকে চোরেদের এ হেন কাণ্ডে পুলিশ কর্তারাও বিড়ম্বনায় পড়েছেন। অন্য দিকে, পেশাদার চোরেদের নিয়েও তাঁরা দিশেহারা। চোর ধরতে থানার টহলদারির পাশাপাশি বালি জুড়ে প্রতি রাতে ঘুরে বেরাচ্ছেন গোয়েন্দারাও। পুলিশ কর্তাদের কথায়, “এই ছিঁচকে চোরেদের অধিকাংশই স্থানীয় নেশাগ্রস্ত যুবক। রাতে বেরিয়ে যা পারছে তাই করছে। তবে পুরনো রিপোর্ট দেখে মনে হচ্ছে পেশাদার চোরেরা বালির বাইরে থেকে এসে বড় চুরিগুলি করছে।”

তবে প্রতি রাতে ‘চোর-পুলিশ’ খেলায় আতঙ্ক বাড়ছে বাসিন্দাদের। তাঁদের অভিযোগ, ছোট-বড় একটি চুরিরও কিনারা হয়নি এখনও পর্যন্ত। শুধু বাড়ি, কারখানা কিংবা দোকানই নয়। হাসপাতাল, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি থেকে স্কুল সর্বত্রই অবাধ বিচরণ এই চোরেদের। প্রতিটি বড় চুরিতেই একটি করে ‘স্মরণীয়’ কাণ্ড ঘটাচ্ছে চোরেরা।

কখনও ফ্রিজে রাখা আম-দুধ খেয়ে এসি চালিয়ে আরাম করে গোটা বাড়ি সাফ করে দিচ্ছে চোরের দল। আবার কখনও চুরি করতে এসে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করেও সফল না হওয়ায় ইন্ডাকসান ওভেন নিয়েই চম্পট দিয়েছে। প্রতি ক্ষেত্রেই দরজার পাশে মলত্যাগ করে যাচ্ছে চোরেরা। সব বড় চুরিই হয়েছে ফাঁকা বাড়িতে। প্রতি ক্ষেত্রে বাড়ির পাশের পুকুর পাড় দিয়ে ঝোপ টপকে পালিয়েছে চোরেরা। ফলে স্নিফার ডগ আনিয়েও চোরের হদিস মেলেনি।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ভদ্রেশ্বর, রিষড়া, কোন্নগর-সহ হুগলির অন্যান্য জায়গা থেকে আসছে পেশাদার চোরের দল। অভিযোগ, যারা সকালবেলা ভাঙাচোরা লোহালক্কর কেনার জন্য এলাকায় ঘুরে বেরায় তারাই ফাঁকা বাড়ির খোঁজখবর নিয়ে সেই এলাকার কোনও ঝোপ-জঙ্গলে কিংবা নর্দমায় তালা ভাঙার জন্য লোহার শাবল, রড লুকিয়ে রেখে যায়। সন্ধে হলেই ফের এরা দলবদ্ধ ভাবে চলে আসে। তার পরে ‘অপারেশন’ করে ভোরের ট্রেন ধরে ফিরে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, এই কারণেই বালির বিভিন্ন স্টেশনের সামনে গোয়েন্দাদের টহলদারি শুরু হয়েছে। নজর রাখা হচ্ছে রাতের শেষ ট্রেন ও ভোরের প্রথম ট্রেনের উপরে। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা জানান, কলকাতা ও অন্যান্য জেলার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। একই রকমের চুরি অন্য কোথাও হচ্ছে কি না তাও দেখা হচ্ছে। বালির বাসিন্দারা অবশ্য ‘চোরের সাত দিন, গৃহস্থের এক দিনের’ অপেক্ষাতেই দিন গুনছেন।

bali santatu ghosh thief
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy