Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

জমি খাস হওয়ায় শ’দুয়েক বাড়ি অবৈধ ঘোষণা

রাস্তা, পানীয় জল বা বেহাল নিকাশি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই পঞ্চায়েত এবং জেলা পরিষদের সঙ্গে চাপান-উতোর চলছে সাঁকরাইলের একটি আবাসন সমবায়ের। তার সঙ্গে সমবায়ের হাতে থাকা ‘সিলিং বহির্ভূত’ জমি খাস হয়ে যাওয়ায় সমস্যা আরও জটিল হল। কেননা, খাস হয়ে যাওয়া জমিতে তৈরি শ’দুয়েক বাড়িকেও বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে, নিজেদের ভবিষ্যত্‌ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ওই সব বাড়ির বাসিন্দারা। প্রশাসনের নানা মহলে তাঁরা আবেদন করেছেন। কিন্তু মেলেনি কোনও সমাধান সূত্র।

নুরুল আবসার
সাঁকরাইল শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৩০
Share: Save:

রাস্তা, পানীয় জল বা বেহাল নিকাশি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই পঞ্চায়েত এবং জেলা পরিষদের সঙ্গে চাপান-উতোর চলছে সাঁকরাইলের একটি আবাসন সমবায়ের। তার সঙ্গে সমবায়ের হাতে থাকা ‘সিলিং বহির্ভূত’ জমি খাস হয়ে যাওয়ায় সমস্যা আরও জটিল হল। কেননা, খাস হয়ে যাওয়া জমিতে তৈরি শ’দুয়েক বাড়িকেও বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে, নিজেদের ভবিষ্যত্‌ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ওই সব বাড়ির বাসিন্দারা। প্রশাসনের নানা মহলে তাঁরা আবেদন করেছেন। কিন্তু মেলেনি কোনও সমাধান সূত্র।

যাঁদের নিজেদের বাড়ি নেই, এমন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা ১৯৮৪ সালে সমবায়টি গঠন করেন। পরে সমবায়ের সদস্য হন রাজ্য সরকারের কর্মচারী এবং শিক্ষকেরাও। সাঁকরাইল ব্লকের রামচন্দ্রপুর, সাঁকরাইল জলা এবং সাঁকরাইল তিনটি মৌজা মিলিয়ে ৬২ একর জমি কিনে সমবায়ের পক্ষ থেকে আবাসনটি গঠন করা হয়। প্রকল্প এলাকাটি এক সময়ে ছিল জলাজমি। সমবায়ের উদ্যোগে মাটি ফেলে ভরাট করা হয়। প্রত্যেক সদস্য আবার সমবায়ের কাছ থেকে দু’কাঠা করে জমি কেনেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই বাড়ি তৈরি করে ফেলেছেন। সব মিলিয়ে ওই জমিতে বর্তমানে কয়েকশো বাড়ি রয়েছে।

কিন্তু জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সমবায়টি যে ‘সিলিং বহির্ভূত’ ভাবে ৩৮ একর জমি কিনেছে, তা ২০০৫ সালেই তাদের নজরে আসে। তদন্তও হয়। তারপরেই ২০১০ সালে ওই জমি খাস করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়।

ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই তোপ দাগেন সমবায়টির কর্তারা। শুরু হয় জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের সঙ্গে তাঁদের চাপান-উতোর। কিন্তু কয়েক বছরেও কোনও সমাধান না মেলায় তাঁরা হতাশ। তাঁদের বক্তব্য, এতগুলি মানুষ যেখানে বসবাসের জন্য জমি কিনেছেন, সেখানে তাঁদের ঘরবাড়ি বেআইনি ঘোষণা করে উচ্ছেদ করা যায় না।

আবাসন সমবায়ের সম্পাদক অমরেশ পানির অভিযোগ, “বসবাসের অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যায় না। আমরা বহুবার আমাদের বক্তব্য লিখিত ভাবে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে পাঠিয়েছি। কিন্তু তা সত্ত্বেও এক তরফা ভাবে আমাদের অনুপস্থিত দেখিয়ে জমি খাস করে দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন হলে আমরা আইনের আশ্রয় নেব। সমস্যা মেটানোর জন্য বিভিন্ন মহলে আবেদন জানাচ্ছি।”

সমবায়ের কর্তাদের অভিযোগ মানেননি হাওড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) অংশুমান অধিকারী। তাঁর দাবি, “সমবায়ই হোক বা কোনও সংস্থা, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। আইন মেনেই সিলিং বহির্ভূত জমি খাস করা হয়েছে। তার আগে সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে।”

তা হলে খাস হয়ে যাওয়া জমিতে থাকা বাড়িগুলির ভবিষ্যত্‌ কী?

এই প্রশ্নে রাজ্য ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এক কর্তা জানান, খাস হওয়া জমিতে যাঁদের বাড়ি রয়েছে, তাঁরা ওই জমি সরকারের কাছে আবেদন করে ‘লিজ’ হিসেবে নিতে পারেন। এ ছাড়া, আইনি কোনও পদ্ধতি আপাতত নেই।

কী করবেন ওই জমিতে থাকা বাড়িগুলির বাসিন্দারা?

কেউই এখনও সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারেননি। তাঁরা সমবায়ের কর্তাদের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন। তাঁদেরই এক জন বলেন, “আমাদের অবস্থা এখন শাঁখের করাতের মতো। পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে হয়েছে নিজেদের টাকায়। রাস্তা এখনও পাকা হয়নি। নিকাশি বলতে কিছু নেই। তার উপরে এখন বে-ঘর হওয়ার অবস্থা। কী করব জানি না।” আর এক বাসিন্দা বলেন, “সরকার আমাদের অবস্থাটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে পারে।”

আবাসন প্রকল্পটি চালু হওয়ার সময় থেকেই পরিষেবা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সাঁকরাইল পঞ্চায়েতের সঙ্গে বিবাদ বাধে সমবায়টির কর্তাদের। তাঁদের দাবি, পঞ্চায়েতের থেকে কোনও সহায়তা না মেলায় প্রকল্প এলাকায় পরিকাঠামোগত উন্নয়ন তাঁরা নিজেরাই করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে মোরাম বিছানো প্রায় ৪০ ফুট করে চওড়া তিনটি রাস্তা। বাসিন্দাদের অনেকে নিজেদের খরচে নলকূপ বসিয়েছেন। যাঁরা পারেননি, তাঁরা পাশের গ্রামের নলকূপ থেকে জল নিয়ে আসেন। কিন্তু পঞ্চায়েত বা জেলা পরিষদের কাছে আবেদন করেও লাভ হয়নি। বেহাল নিকাশির জন্য বর্ষায় এলাকা ডুবে যায়। সুরাহা হয়নি সেই সমস্যারও।

জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য অবশ্য আগেই জানিয়েছিলেন, প্রকল্পটি সমবায়ের উদ্যোগে তৈরি হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী পরিকাঠামোগত উন্নয়নও সমবায়কেই করতে হবে। তবে, সমস্যা হলে আলোচনা করে সাহায্য করা যেতে পারে। একই বক্তব্য ছিল পঞ্চায়েতের কর্তাদেরও।

উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নয়া ভবন চালু। বহু বছর ধরে ভাড়া বাড়িতে চলা খানাকুলের উদয়পুর গ্রামের উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির নিজস্ব ভবন নির্মাণ হয়ে গিয়েছিল মাসখানেক আগে। শনিবার নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন করলেন ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। এ ছাড়াও, অনুমোদন পাওয়া খানাকুলের চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিলান্যাসও করেন তিনি। স্কুলগুলি হবে খানাকুল-২ পঞ্চায়েত এলাকার নাঙ্গুলপাড়া, পোল-১ পঞ্চায়েত এলাকার খাঁ পাড়া, ঘোষপুর পঞ্চায়েত এলাকার মান্নারডাঙা এবং কিশোরপুর-২ পঞ্চায়েত এলাকার গুজরাতে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হুগলির সভাধিপতি মেহবুব রহমান।

বিপাকে পড়েছেন বাসিন্দারা

“বসবাসের অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যায় না। এক তরফা আমাদের অনুপস্থিত দেখিয়ে জমি খাস করা হয়েছে। প্রয়োজনে আইনে পথে যাব। সমস্যা মেটাতে নানা মহলে আবেদন জানাচ্ছি।”

অমরেশ পানি, আবাসন সমবায়ের সম্পাদক

“সমবায়ই হোক বা অন্য কোনও সংস্থা, আইনের ঊর্ধ্বে কেউই নয়। এ ব্যাপারে আইন মেনেই সিলিং বহির্ভূত জমি খাস করা হয়েছে। তার আগে সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে।

অংশুমান অধিকারী। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE