কেন্দ্র সরকার তৃতীয় দফার প্রকল্প বাতিল করায় উলুবেড়িয়ার জগদীশপুর জলপ্রকল্পের কাজ থমকে গিয়েছে। ফলে, ২০১৫ সালের মধ্যে ওই প্রকল্পের কাজ শেষ করা এবং ২৯টি ওয়ার্ডে সমান ভাবে জল বণ্টন নিয়ে বিপাকে পড়েছে পুরসভা। দ্রুত কাজ শুরু না হলে ওই সময়সীমার মধ্যে গোটা প্রকল্পের কাজ শেষ হবে না বলেই আশঙ্কা করছেন পুরকর্তারা।
কেন্দ্র সরকারের জেএনএনআরইউএম প্রকল্পে কেএমডব্লিউএসএ (কলকাতা মেট্রোপলিটান ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন অথরিটি) এবং উলুবেড়িয়া পুরসভা যৌথ ভাবে জগদীশপুরে গঙ্গার পাড়ে জলপ্রকল্পটির কাজের সূচনা করে ২০০৮ সালে। তিনটি পর্যায়ে এই প্রকল্পে গঙ্গার জল পরিশোধন করে তা বাড়ি বাড়ি সরবরাহ করার কথা। প্রথম পর্যায়ে ৫৫ কোটি টাকা খরচ করে গড়া হয় মূল প্রকল্পটি। দ্বিতীয় পর্যায়ের ১২৪ কোটি টাকার কাজের মধ্যে ছিল বিভিন্ন ওয়ার্ডে জলাধার তৈরি এবং পাইপলাইন পাতা। তৃতীয় পর্যায়ের অন্তর্ভূক্ত ছিল আরও তিনটি জলাধার তৈরি, সেগুলির সংযোগ ঘটানো এবং যে সব পাইপলাইন পাতা হয়েছে সেগুলি জুড়ে দেওয়ার কাজ। এ জন্য খরচ ধরা হয় ৪৭ কোটি টাকা।
পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, জেএনএনআরইউএম প্রকল্পের নিয়ম মোট খরচের ৩৫ শতাংশ টাকা দেবে কেন্দ্র, ৬০ শতাংশ দেবে রাজ্য সরকার এবং বাকি পাঁচ শতাংশ টাকা দেবে সংশ্লিষ্ট পুরসভা। এই নিয়মেই প্রথম দু’টি পর্যায়ের কাজ হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়টিও চূড়ান্ত করে তা কেন্দ্র সরকারের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কেন্দ্র সরকার প্রকল্পটি অনুমোদন করে তাঁদের চিঠি দেয় বলে পুরকর্তারা জানান।
“কেন্দ্রীয় সরকার যদি লিখিত ভাবে জানায় যে এই প্রকল্পের জন্য আর টাকা দেওয়া
যাবে না, তা হলে রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় টাকা দিয়ে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করবে।”
ফিরহাদ হাকিম, রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী
পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পারিষদ আকবর শেখ বলেন, “গত জানুয়ারি মাসে অনুমোদন দেওয়ার সময়েই কেন্দ্র সরকার জানায় লোকসভা নির্বাচন মিটে যাওয়ার পরে তৃতীয় পর্যায়ের কাজের টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু কয়েক দিন আগে আমাদের চিঠি দিয়ে কেন্দ্র ফের জানায় এই পর্যায়টি তারা বাতিল করেছে।”
কিন্তু ওই প্রকল্পে কেন্দ্র সরকারের বরাদ্দ মাত্র ৩৫ শতাংশ টাকা। বেশির ভাগ টাকাই যেখানে রাজ্য সরকারের দেওয়ার কথা, সেখানে সেই টাকা দিয়ে তৃতীয় পর্যায়ের কাজ কেন শুরু করা হচ্ছে না, এই প্রশ্নে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের এক কর্তার দাবি, “কেন্দ্র আগে টাকা দিলে তবেই রাজ্য সরকারের টাকা দেওয়ার কথা। এই নিয়মের বাইরে কাজটি করা যাবে না।” তবে, রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, তৃতীয় পর্যায়ের টাকার ব্যাপারে তিনি কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বেঙ্গাইয়া নাইডুর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি পরিষ্কার করতে চান। ফিরহাদের আশ্বাস, “কেন্দ্রীয় সরকার যদি লিখিত ভাবে জানায় যে এই প্রকল্পের জন্য আর টাকা দেওয়া যাবে না, তা হলে রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় টাকা দিয়ে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করবে।”
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে বিভিন্ন প্রকল্পে উলুবেড়িয়ায় ২০০ কিলোমিটার পাইপলাইন পাতা হয়েছিল। জেএনএনআরইউএম প্রকল্পে দ্বিতীয় পর্যায়ে মোট ১০২ কিলোমিটার পাইপলাইন পাতা হয়। তৃতীয় পর্যায়ে ছিল বাউড়িয়া, চেঙ্গাইল এবং উলুবেড়িয়া হাসপাতালে তিনটি জলাধার তৈরি করা এবং ১০৯ কিলোমিটার পাইপলাইন পাতা। বর্তমানে প্রতিদিন ওই জলপ্রকল্পে ১০ লক্ষ গ্যালন জল উৎপাদন করা হচ্ছে। কিন্তু সর্বত্র পাইপলাইনগুলির মধ্যে সংযোগ না থাকায় প্রতিদিন ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার গ্যালনের বেশি জল সরবরাহ করা যাচ্ছে না। বাকি জল অপচয় হচ্ছে। জলের চাপে অনেক জায়গায় পাইপ ফাটছে।
তৃতীয় পর্যায়ের কাজ শেষ হলেই পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসবে দাবি করে পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পারিষদ জানান, রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের কাছে টাকার ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy