সরকারি কৌঁসুলি নিয়োগ না হওয়ায় ফের পিছিয়ে গেল হাওড়ার আমতার মুক্তিরচক গ্রামের জোড়া গণধর্ষণ মামলার শুনানি। একই কারণে এই শুনানি পিছোল এ নিয়ে তিন বার। শনিবার আমতা দায়রা আদালতের বিচারক শ্যামলকুমার চক্রবর্তী চিঠি লিখে দ্রুত এই মামলায় সরকারি আইনজীবী নিয়োগ করতে বলেছেন জেলা সরকারি কৌঁসুলি অরবিন্দ নস্করকে (ডিস্ট্রিক্ট পিপি)। কিন্তু সরকারি আইনজীবী নিয়োগ না হওয়া নিয়ে অরবিন্দবাবুর মন্তব্যে বেধেছে বিতর্ক।
ওই সরকারি আইনজীবী এ দিন বলেন, “মুক্তিরচক গণধর্ষণের মামলা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যারা অভিযুক্ত, তারা অনেক বড় মাপের আইনজীবী নিয়োগ করছে। তার মোকাবিলা করতে সরকারকেও সেই মাপের দক্ষ আইনজীবী নিয়োগ করতে হবে।”
এখানেই বিতর্কের শুরু।
নির্যাতিতাদের পরিবারের অভিযোগ, “ঘটনায় শাসক দলের নেতারা জড়িত থাকায় দিনের পর দিন আইনজীবী নিয়োগ করা হচ্ছে না বলে আমাদের সন্দেহ। এ জন্য মামলার নিষ্পত্তি হতেও দেরি হবে।”
প্রায় একই সূত্র ধরে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “দুর্ভাগ্য এটাই যে, সব কিছুর পিছনে আছে দলবাজি। সরকার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে লড়তে অক্ষম! এই সরকার অপরাধ দমন করবে কী ভাবে?” সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, “সারদা মামলায় মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রী এবং নেতাদের মান বাঁচাতে দেশের তাবড় আইনজীবীদের এই সরকার দাঁড় করাতে পারে। কিন্তু ধর্ষকদের শাস্তি দিতে ভাল আইনজীবী খুঁজে পায় না!” বিশিষ্ট আইনজীবী তথা কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ঘোষের মন্তব্য, “সরকারের তরফে এই ধরনের মন্তব্য সরকারি আইনজীবীদের পক্ষেও অবমাননাকর।”
জেলার আইনজীবীদের একাংশও অরবিন্দবাবুর মন্তব্য নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা জানতে চাইছেন ১) সরকারি ভাবে ‘সিনিয়র’ প্যানেলভুক্ত সরকারি কৌঁসুলিরা কেন এই মামলা লড়ছেন না? ২) বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি (স্পেশ্যাল পাবলিক প্রসিকিউটর) নিয়োগ কেন এখনও করা হয়নি? ৩) জেলা সরকারি কৌঁসুলি নিজে কেন এই মামলা লড়ছেন না?
অরবিন্দবাবুর দাবি, “জেলার সরকারি প্যানেলের সিনিয়র কৌঁসুলিদের যোগ্যতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। কিন্তু দূরত্বের কারণে আমতায় গিয়ে তাঁরা মামলা লড়তে চাইছেন না।” তিনি জানান, আমতায় গিয়ে মামলা লড়তে রাজি এমন কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে সরকারের কথাবার্তা চলছে। সম্মতি পেলেই সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে নিয়োগ করার আবেদন জানানো হবে। তাঁর সংযোজন, “ডিস্ট্রিক্ট পিপি হিসেবে আমাকে জেলা সদরে বেশ কিছু প্রশাসনিক কাজ করতে হয়। সেই কাজ করতে গিয়ে কোনও দিন যদি এই মামলার শুনানিতে হাজির থাকতে না পারি, তাতে মামলার ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।”
গত ৫ ফেব্রুয়ারি মুক্তিরচক গ্রামে এক গৃহবধূ ও তাঁর জেঠশাশুড়িকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে স্থানীয় দুই তৃণমূল নেতা বরুণ মাকাল এবং রঞ্জিত মণ্ডল-সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে। নির্যাতিতাদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওই দুই তৃণমূল নেতা-সহ ৯ জনকে ধরে। এক জন এখনও পলাতক। ঘটনার ৮৭ দিনের মাথায় উলুবেড়িয়া এসিজেএম আদালতে পুলিশ চার্জশিট দেয়। ধৃতদের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, মারধর, লুঠপাটের অভিযোগ আনা হয়। ১ জুলাই মামলাটি এসিজেএম আদালত থেকে উলুবেড়িয়া দায়রা আদালতে পাঠানো হয়। ১৬ জুলাই সেখানেই প্রথম শুনানি হবে বলে ঠিক হয়। কিন্তু ওই দিন এবং পরে ২৮ জুলাই সরকারি আইনজীবী নিয়োগ না হওয়ায় মামলার শুনানি শুরু হয়নি। ২৮ জুলাই উলুবেড়িয়া দায়রা আদালতের বিচারক মামলাটি আমতা দায়রা আদালতে পাঠান। সেখানেই মামলাটির টানা শুনানি হওয়ার কথা।
১৪ অগস্ট ফের এই মামলার শুনানির দিন ধার্য হয়েছে। অরবিন্দবাবু বলেন, “আশা করি, পরবর্তী শুনানির আগেই আমরা সরকারি আইনজীবী নিয়োগ করতে পারব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy