Advertisement
E-Paper

নানা জটেই আঁধার নেমেছে শিল্পাঞ্চলে, মত শ্রমিকদের

দু’দশক আগেও বিশ্বকর্মা পুজো, দোলের মতো হরেক অনুষ্ঠানে ঝলমল করত ডানকুনি থেকে ত্রিবেণী পর্যন্ত বিস্তৃত হুগলি শিল্পাঞ্চল। আজ সেই সুদিন নেই। বন্ধ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের পুনরুজ্জীবনে জোর দেওয়া হচ্ছে বলে সরকারি তরফে আশ্বাস দেওয়া হলেও শ্রমিকেরা মনে করছেন পরিস্থিতি জটিল। কিন্তু কেন?

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৪ ০১:২৬

দু’দশক আগেও বিশ্বকর্মা পুজো, দোলের মতো হরেক অনুষ্ঠানে ঝলমল করত ডানকুনি থেকে ত্রিবেণী পর্যন্ত বিস্তৃত হুগলি শিল্পাঞ্চল। আজ সেই সুদিন নেই। বন্ধ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের পুনরুজ্জীবনে জোর দেওয়া হচ্ছে বলে সরকারি তরফে আশ্বাস দেওয়া হলেও শ্রমিকেরা মনে করছেন পরিস্থিতি জটিল। কিন্তু কেন?

নানা সময়ে নানা কারণে বন্ধ হয়েছে একের পর এক কারখানা। অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিক-মালিক দ্বন্দ্বও বড় আকার নিয়েছে। এখনও যে সব কারখানা টিকে রয়েছে, সে সব জায়গায় আজ ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর নোটিস ঝোলে, তো কাল আবার খোলে। সব সময়ে নানা আশঙ্কায় থাকেন শ্রমিকেরা।

এই পরিস্থিতির পিছনে শ্রমিকেরা যে সব কারণ জানাচ্ছেন, তা হল—

১) আদ্যিকালের যন্ত্রপাতি সরানো হয়নি অধিকাংশ কারখানায়। ফলে, উৎপাদিত দ্রব্যের গুণমান বা পরিমাণ বাড়েনি। অথচ, মালিকপক্ষ উৎপাদন বাড়ানোয় চাপ দেন।

২) কাঁচামাল থেকে বিদ্যুৎ, রক্ষণাবেক্ষণ সব ক্ষেত্রেই খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। ম্যানেজার গোত্রীয় ম্যানেজমেন্ট স্টাফের বেতন বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। অনেক ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনে নানা ধরনের ম্যানেজার রাখার অভিযোগ উঠেছে। সেই টাকা আর উঠে আসেনি।

৩) দেশজ কারখানায় তৈরি জিনিসপত্রের জায়গা দখল করে নিয়েছে অন্য দেশ থেকে সামগ্রী। আবার কারখানা চালাতে মালিকপক্ষের সদিচ্ছার প্রশ্নও কম ওঠেনি।

৪) অনেক বন্ধ কারখানার জমি বেদখল হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ।

শ্রীরামপুরের স্ট্যান্ডার্ড ফার্মাসিউটিক্যালসে এক সময়ে পেনিসিলিন তৈরি হত। বিদেশের বাজারেও যেত এখানকার ওষুধ। এখানকার শ্রমিকদের সমাদরও কম ছিল না। কিন্তু সেই কারখানা এখন বন্ধ। হুগলির এক সময়ের ‘ত্রাস’ হুব্বা শ্যামল অপরাধ জগতে হাত পাকিয়েছিল দেশের অন্যতম প্রচীন ইস্পাত কারখানা রিষড়ার জে কে স্টিল ফাঁকা করেই। কারখানার যন্ত্রপাতি থেকে লোহালক্কড় ট্রাকে চাপিয়ে নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। শ্রীরামপুর শিল্পাঞ্চলে দাপিয়ে বেড়ায় কুখ্যাত দুষ্কৃতী রমেশ মাহাতোর দলবল।

পরিস্থিতির পিছনে যে সব কারণ

আদ্যিকালের যন্ত্রপাতি অধিকাংশ কারখানায়। ফলে, উৎপাদিত দ্রব্যের গুণমান, পরিমাণ বাড়েনি।

অথচ, মালিকপক্ষের উৎপাদন বাড়ানোয় চাপ।

কাঁচামাল, বিদ্যুৎ, রক্ষণাবেক্ষণ— সব ক্ষেত্রেই খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। ম্যানেজমেন্ট স্টাফের বেতন বেড়েছে পাল্লা দিয়ে।

বহু ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনে ম্যানেজার রাখার অভিযোগ উঠেছে। সেই টাকা আর উঠে আসেনি।

দেশজ কারখানায় তৈরি জিনিসপত্রের জায়গা দখল করেছে অন্য দেশের সামগ্রী।

আবার কারখানা চালাতে মালিকপক্ষের সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্নও কম ওঠেনি।

অনেক বন্ধ কারখানার জমি বেদখল হওয়ার অভিযোগ।

বর্তমান রাজ্য সরকারের নির্দেশ রয়েছে, শিল্পের জমি অন্য কোনও কাজে ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু রিষড়ায় বন্ধ হয়ে যাওয়া শ্রীদুর্গা কটন মিলের জমিতে এগারো তলা আবাসন তৈরি হয়ে গিয়েছে সকলের নাকের ডগায়। বিগত সরকারের জমানাতেই বঙ্গলক্ষ্মী কটন মিলের জমি হাতে নিয়ে নিয়েছিল প্রোমোটার সংস্থা।

শ্রমিকেরা কারখানাগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পিছনে যে সব কারণ দেখিয়েছেন, তার কিছু কারণ মেনে নিয়েছেন মালিকেরা। অনেকেই মূলধনের অভাবকে দায়ী করেছেন। অন্য সমস্যা জমি। কোন্নগরের রিলাক্সন গদি তৈরির কারখানাটি দীর্ঘদিন বন্ধ। কয়েকশো শ্রমিক আজ পর্যন্ত তাঁদের পাওনাগন্ডা পাননি।

ওই কারখানার এক পদস্থ কর্তা বলেন, “জমিসংক্রান্ত নানা সমস্যায় কারখানা বন্ধ করতে হয়েছিল। তা কিছুটা মিটেছে। জমির একাংশ লিজ দিতে হয়েছে। যিনি লিজ নিয়েছেন, তিনি কারখানার অস্তিত্ব বিলোপ করে আবাসন প্রকল্প তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে কারখানা চালু রাখা যায় না।”

শিল্পাঞ্চল জুড়ে এমনই নানা সমস্যা থাকলেও কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন ব্যস্ত সরকারকে দোষারোপে। যেমন, এসএসকেইউ নেতা আভাস মুন্সি বলেন, “বর্তমান সরকার পূর্বতন সরকারের জুতোতেই পা গলিয়েছে। মালিকপক্ষের মুনাফার লোভ আর সরকারের উদাসীনতায় হুগলি-সহ এ রাজ্যের শিল্পকে ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু করে দিয়েছে। শিল্প নিয়ে কোনও নীতিই তৈরি হয়নি।” প্রায় একই সুরে বর্ষীয়ান সিটু নেতা সুনীল সরকার বলেন, “এই আমলে শাসক দলের দাদাগিরির জন্যই জেলা থেকে শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে।” কিন্তু বাম আমলেও যে শিল্পাঞ্চলের বহু শিল্প বন্ধ হয়েছে, সে প্রশ্নের উত্তরে সুনীলবাবু বলেন, “পুরনো বহু কারখানাকে মালিকেরা সময়োপযোগী করে তোলেননি। তা ছাড়া মূলধনও অন্যত্র ঢেলেছেন।” শাসক দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র জেলা সাধারণ সম্পাদক অন্বয় চট্টোপাধ্যায় আবার পরিস্থিতির জন্য বাম সরকারকে দুষে দাবি করেছেন, “শিল্পকে রাতারাতি পুনরুজ্জীবিত করার কোনও জাদুকাঠি তো এই সরকারের হাতে নেই। তবে, সরকার চেষ্টা করছে। শ্রমিকরা তুলনায় এখন অনেক ভাল আছেন।”

বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের মুখে কিন্তু হাসি নেই।

(শেষ)

prasanta pal chinsurah induatrial area southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy