Advertisement
E-Paper

নিয়মের জটে আটকে রাস্তা সংস্কার, নাকাল গ্রামবাসী

কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাস্তা পেয়ে আহ্লাদিত হয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। অথচ সেই রাস্তাই এখন তাঁদের দুশ্চিন্তার কারণ। একে কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি, তায় টাকা ফেরত চলে গিয়েছে। তার উপরে বছর কয়েকের মধ্যেই পিচ, পাথর উঠে রাস্তার চেহারা কঙ্কালসার। পরিস্থিতি এমন যে, চণ্ডীতলা-১ ব্লকের সিংহজোড় থেকে ভগবতীপুর, কানাইডাঙা হয়ে হারানন্দপুর পর্যন্ত রাস্তায় চলাফেরাই দায় হয়ে উঠেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৪৫
রাস্তার এখনকার অবস্থা। ছবি: দীপঙ্কর দে।

রাস্তার এখনকার অবস্থা। ছবি: দীপঙ্কর দে।

কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাস্তা পেয়ে আহ্লাদিত হয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। অথচ সেই রাস্তাই এখন তাঁদের দুশ্চিন্তার কারণ। একে কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি, তায় টাকা ফেরত চলে গিয়েছে। তার উপরে বছর কয়েকের মধ্যেই পিচ, পাথর উঠে রাস্তার চেহারা কঙ্কালসার। পরিস্থিতি এমন যে, চণ্ডীতলা-১ ব্লকের সিংহজোড় থেকে ভগবতীপুর, কানাইডাঙা হয়ে হারানন্দপুর পর্যন্ত রাস্তায় চলাফেরাই দায় হয়ে উঠেছে।

কেন এমন হল, তার তদন্ত এবং অবিলম্বে রাস্তার পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছেও এ নিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন তাঁরা।

হুগলি জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই প্রকল্পে রাস্তা তৈরির কাজ শেষ হওয়ার পাঁচ বছর পর্যন্ত নির্দিষ্ট টাকা বরাদ্দ থাকে সারাইয়ের জন্য। কিন্তু বর্তমানে রাস্তার যা হাল, তাতে ওই টাকায় পূর্ণাঙ্গ সংস্কার সম্ভব নয়। অগত্যা ভাল রাস্তা পেতে আরও অন্তত এক বছর হা-পিত্যোশ করা ছাড়া গতি নেই গ্রামবাসীদের।

প্রায় ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তাটি আগে কাঁচা ছিল। গ্রামবাসীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনে ২০০৩ সালে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তাটি পাকা করার অনুমোদন পায়। ২০০৭ সালে কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ২০১০ সালে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করেনি ঠিকাদার। ৫০০ ফুট রাস্তা পাকা করা হয়নি। ৩টি কালভার্ট হয়নি। দেড় কিলোমিটার নর্দমার কাজও হয়নি। বহু টাকার পিলিং নষ্ট হয়। কাজ করতে না পারায় বেশ কয়েক লক্ষ টাকা দিল্লিতে ফেরত চলে যায়।

রাস্তাটি হাওড়া-আমতা রোডে গিয়ে মিশেছে। ফলে দুই জেলার সংযোগ স্থাপনে রাস্তাটি গুরুত্বপূর্ণ। চণ্ডীতলার বিস্তীর্ণ এলাকার লোকজন এই রাস্তার উপর নির্ভরশীল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, তৈরির বছর খানেক পরেই রাস্তার হাল খারাপ হতে শুরু করে। ইলামবাজার ঘড়ুই পাড়ায় রাস্তা ফেটে যায়। বর্ষায় কাদা জমে। রাস্তার দু’ধারে কৃষিজমি। খেত থেকে ফসল নিয়ে যেতে এই রাস্তাই ব্যবহার করেন চাষিরা। কিন্তু বেহাল রাস্তায় গাড়ি বা মোটরবাইক চলাচল কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। গ্রামবাসীদের ক্ষোভ, গাড়ি চলাচল দূরঅস্ত, সাইকেলে এমনকী হেঁটে গেলেও নাকাল হতে হচ্ছে। আকছার দুর্ঘটনা ঘটছে। পড়ে গিয়ে চোট পাচ্ছেন মানুষ।

কানাইডাঙা কৃষি উন্নয়ন সমিতির সভাপতি ভক্তিভূষণ ঘোষ বলেন, “গ্রামবাসীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে কাঁচা রাস্তাই ভাল ছিল। যা পরিস্থিতি তাতে হয়তো ১০০ দিনের কাজে লোক লাগিয়ে পাথর তুলে ফেলতে হবে। প্রশাসনের সব মহলে জানিয়েছি। কোথায় গেলে কাজ হবে, বুঝতে পারছি না।”

ওই কাজের ঠিকাদার সৌমিক ভাদুড়ি বলেন, “টেন্ডারের দর অনুযায়ী কাঁচামাল দিয়ে কাজ করছিলাম। সেই দরে উচ্চমানের সামগ্রী ব্যবহার করা যেত না। তা সত্ত্বেও যথাসাধ্য ভাল করে কাজ করছিলাম। কিন্তু কিছু গ্রামবাসীর অসহযোগিতায় কাজ শেষ করা যায়নি।” তাঁর দাবি, “ওই কাজে বরং আমার প্রচুর লোকসান হয়ে গিয়েছে। এখনও টাকা পাইনি।”

হুগলি জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মনোজ চক্রবর্তী বলেন, “বামফ্রন্ট বোর্ডের আমলে রাস্তাটি হয়েছিল। বলা বাহুল্য, ঠিকমতো কাজ হয়নি। রাস্তা তৈরির পরে প্রথম পাঁচ বছর নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা বরাদ্দ থাকে সংস্কারের জন্য। গত বছর ওই টাকায় কিছু কাজ হয়েছে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ সংস্কার সম্ভব নয়। পাঁচ বছর পূর্ণ না হওয়ায় পর্যাপ্ত টাকা দিতে পারছি না আমরা। কারণ, তা হলে দুর্নীতির দায়ে পড়তে হবে। আমাদের হাত-পা বাঁধা।”

chanditala road repair southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy