আলোক-শিল্পী হিসেবে তাঁর সুনাম তো ছড়াচ্ছিলই, পাশাপাশি ইদানীং প্রোমোটারি শুরু করেন চন্দননগরের নিহত আলোক-শিল্পী রঞ্জন সরকার। সেই প্রোমোটারি নিয়ে রেষারেষির জেরেই রঞ্জনকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে বলে পুলিশের অনুমান।
গত সোমবার রাতে নিজের স্টুডিও থেকে বাগবাজারে বাড়ি ফেরার পথে মধ্যাঞ্চল এলাকায় রঞ্জনকে নলি কেটে, গুলি করে খুন করা হয়। মঙ্গলবার সকালে তাঁর দেহ মেলে। তার পরে পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে রঞ্জনের দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু গিরিধারী মিস্ত্রি, অভিজিৎ রায় ওরফে নিগ্রো এবং তন্ময় সরকার ওরফে সাহেব নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা প্রাথমিক ভাবে বিভ্রান্ত করেছিল। পরে অপরাধের কথা কবুল করে। ধৃতদের বৃহস্পতিবার চন্দননগর আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়ের এজলাসে হাজির করানো হয়। বিচারক তিন জনকেই পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। তদন্তকারীরা জানান, রঞ্জন সম্প্রতি প্রোমোটারির জন্য চন্দননগরে একটি বাড়ি ভাঙার কাজও শুরু করেছিলেন। শহরে দীর্ঘদিন ধরে ওই কাজে যুক্ত কুখ্যাত দুষ্কৃতী কাশীনাথ দে ওরফে কাশী বর্তমানে হাজতবাস করছে। কাশীর দলের লোকজন অবশ্য বাইরে রয়েছে। তারা রঞ্জনের উত্থান ভাল চোখে দেখেনি। পাশাপাশি, এই ব্যবসায় রঞ্জন তাদের দলেও যোগ দেয়নি। তাই জেলে বসে কাশীই রঞ্জনকে সরানোর ছক কষে বলে দাবি তদন্তকারীদের একাংশের।
রঞ্জনের দেহ উদ্ধারের পরে তাঁর স্ত্রী সঙ্গীতা পুলিশের কাছে অভিযোগে জানিয়েছিলেন, তোলা চেয়ে কয়েক জন তাঁর স্বামীকে হুমকি দিচ্ছিল। সেই সূত্র ধরেই তদন্তে নেমে পুলিশ দেখে যাদের বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগ তারা কাশীর লোক। এসডিপিও (চন্দননগর) সৈকত ঘোষ বলেন, “আলোক-শিল্পী খুনের ঘটনায় ধৃতদের জেরা করে কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে। আরও কয়েক জন ওই ঘটনায় যুক্ত। ধৃতদের থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই করে অন্যদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।” তদন্তকারীদের দাবি, সোমবার রাতে গিরিধারী ও নিগ্রোর সামনেই রঞ্জনকে খুন করা হলেও পুলিশের কাছে তারা প্রথমে তা বেমালুম চেপে যায়। শুধু তাই নয় গিরিধারীর উপর যাতে সন্দেহ না পড়ে, সে জন্য খুনের পরেই অন্য এক জনকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে নিজের সাইকেল নিয়ে যায় গিরিধারী। ঘটনার দিন রাতে দু’জনই বাড়ি ফেরেনি।
অবশ্য পুলিশকে ভাবাচ্ছে রঞ্জনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অভিযোগও। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮ সালে চুঁচুড়া থানার তুলাপট্টি ঘাটের কাছে গঙ্গার ধারে একটি ইটভাটার পাশ থেকে দু’টি ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ মেলে। সেই খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে রঞ্জনের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনার পরে বেশ কিছু দিন ‘ফেরার’ ছিলেন রঞ্জন। পরে আদালত থেকে আগাম জামিন নেন। তাঁর খুনের ঘটনায় সেই ঘটনার কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি না, তা-ও পুলিশ খতিয়ে দেখছে। জামিন পাওয়ার পরেই রঞ্জন আলোক-শিল্পের কাজে মন দেন। কাজে দক্ষ হয়ে ওঠেন। স্থানীয় এক শিল্পীর থেকে আলোর স্কেচ করা শেখেন। তার পরে নিজেই কাজ শুরু করে দেন। সেই স্কেচে নিজেই আলোর কেরামতি দেখাতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে তাঁর নাম নানা এলাকায় ছড়ায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy