প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের এখন যে অবস্থা। ছবি: সুব্রত জানা।
নজরদারির অভাবে ভেঙে পড়েছে পাঁচিল।
মাঝেমধ্যেই খসে পড়ে ঘরের চাঙড়।
অযত্নে নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি।
মাত্র তিন জন কর্মী এবং এক নিরাপত্তাকর্মীকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে খুঁড়িয়ে চলছে উলুবেড়িয়ায় নারকেল ছোবড়া থেকে দড়ি, পাপোস তৈরির একমাত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি। এক সময়ে রমরমিয়ে চলা ওই কেন্দ্রটি বছর দশেক বন্ধ থাকার পরে গত বছর ফের চালু হলেও এলাকার যুবক-যুবতীরা এখন প্রশিক্ষণ নিতে খুব একটা আসেন না।
স্বাধীনতারও বেশ কয়েক বছর আগে তৈরি হওয়া ওই কেন্দ্রটি বর্তমানে রয়েছে হাওড়া জেলা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের হাতে। ওই দফতরের জেনারেল ম্যানেজার অশোক সিংহরায় অবশ্য কেন্দ্রটির পুনরুজ্জীবনের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ওই কেন্দ্রটির আধুনিকীকরণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন হস্তশিল্পের ক্লাস্টার তৈরির চেষ্টা চলছে। সরকারের কাছে পরিকল্পনা জমা দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।”
উলুবেড়িয়া স্টেশনের কাছে সরকারি ১০ বিঘারও বেশি জায়গা জুড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ওই কেন্দ্রটি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার যুবক-যুবতীদের সাবলম্বী করতে নারকেল ছোবড়া থেকে সুতো, দড়ি, পাপোস তৈরি শেখানো এবং তাঁদের উৎপাদিত সামগ্রী বাজারে বিক্রির জন্য কেন্দ্রটি খোলা হয়েছিল। যন্ত্রপাতির মধ্যে আনা হয় চরকা, মোটরচালিত চরকা, পাপোস তৈরির জন্য ‘ফ্রেম ম্যাট’। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সরকারি উদাসীনতা এবং আধুনিকীকরণের অভাবে কেন্দ্রটি প্রায় বন্ধের মুখে বলে অভিযোগ সেখানকার কর্মীদেরই। তাঁরা জানান, এই জায়গায় এখন দুষ্কৃতীদের আনাগোনা বাড়ছে।
স্বাধীনতার পরে জেলা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতর কেন্দ্রটির পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। ’৯০-এর দশকে সেই দায়িত্ব আসে হাওড়া জেলা পরিষদের হাতে। পরে আবার জেলা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের হাতে কেন্দ্রটির দায়িত্ব বর্তায়। ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাগনান, আমতা, শ্যামপুর, উলুবেড়িয়া ছাড়াও মেদিনীপুর-সহ পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও ছোবড়া সংগ্রহ করা হত। সারা বছর ধরে প্রশিক্ষণ চলত। কিন্তু এখন প্রশিক্ষণ প্রায় হয় না বললেই চলে। কালেভদ্রে শিক্ষার্থীরা আসেন। তখন বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
ওই কেন্দ্রের এক প্রাক্তন কর্মী বলেন, “বছর কুড়ি আগেও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুব ভাল চলত। বহু মহিলা এখানে কাজ শিখেছেন। দামি দামি পাপোস তৈরি হত। সে সব বিক্রি করে আয়ও হত।” বর্তমান এক কর্মীর কথায়, “এখানে যে সব যন্ত্রপাতি রয়েছে, তা খুবই পুরনো এবং অনুন্নত মানের। ওই যন্ত্রে কাজ করলে উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে। কাজের মানও ভাল হয় না। বাইরে অনেক কম খরচে উন্নত প্রযুক্তিতে পাপোস তৈরি হয়। তাই এখানে আর বিশেষ কেউ আসেন না।’’
অন্য দিকে, যে সব মেয়েরা এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাঁদের উৎপাদিত সামগ্রী বিক্রির জন্য কোনও বাজারের ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে, প্রশিক্ষণে আগ্রহ হারাচ্ছে নতুন প্রজন্মরা। এক সময়ে পরিকল্পনা করা হয়েছিল বাগনান, শ্যামপুর সহ বিভিন্ন ব্লকে উৎপাদন-কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। প্রশিক্ষিতেরা সেখানে গিয়ে কাজ করবেন এবং উৎপাদিত দ্রব্য বিপণনের ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু সবই রয়ে গিয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের খাতায়-কলমে। কাজের কাজ কিছু হয়নি।
সরকারি উদ্যোগে ওই কেন্দ্রের হাল কবে ফেরে, এখন সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy