শ্রমিকদের বকেয়া না দেওয়ায় ভদ্রেশ্বরের একটি জুটমিল কর্তৃপক্ষকে সম্পত্তি হস্তান্তর না করার নোটিস জারি করল প্রশাসন।
প্রশাসনের এই নজিরবিহীন কড়া পদক্ষেপে শ’য়ে শ’য়ে শ্রমিকদের বকেয়া পাওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হল বলে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা। ভদ্রেশ্বরের গোন্দলপাড়া এবং ভিক্টোরিয়া জুটমিলের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকেরা তাঁদের পাওনা-গন্ডা দীর্ঘদিন ধরেই পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ ছিলই। সম্প্রতি ভিক্টোরিয়া জুটমিল কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বকেয়া গ্র্যাচুইটি দিতে পদক্ষেপ করলেও গোন্দলপাড়ার ক্ষেত্রে বকেয়া কিন্তু থেকেই গিয়েছে। বার বার মিল কর্তৃপক্ষের কাছে দরবার করেও শ্রমিকেরা কোনও সুরাহা পাননি বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যেই অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের মধ্যে অনেকেই বকেয়া না পাওয়ায় অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার অভাবে মারা গিয়েছেন।
শ্রমিকদের গ্র্যাচুইটি-সহ অন্যান্য বিধিবদ্ধ বকেয়া কর্তৃপক্ষ না দেওয়ায় এর আগে চন্দননগরের মহকুমা শাসক পীযূষ গোস্বামী সেখানকার দু’টি জুটমিলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশের পরই ভিক্টোরিয়া জুটমিল কর্তৃপক্ষ মোট দশজন শ্রমিকের বকেয়া গ্র্যাচুইটি মিটিয়ে দেন।
শ্রম দফতর সূত্রের খবর, গোন্দলপাড়া জুটমিলের বেশ কিছু শ্রমিকের গ্র্যাচুইটির টাকা বকেয়া রয়েছে। সংখ্যায় কম হলেও একইভাবে ভিক্টোরিয়া জুটমিলের শ্রমিকদেরও গ্র্যাচুইটি বকেয়া রয়েছে। নিয়ম অনুয়ায়ী, শ্রম দফতর থেকে মিল কর্তৃপক্ষকে নোটিস পাঠানো হয় শ্রমিকদের বকেয়া দেওয়ার জন্য। শ্রম দফতরের সেই নোটিস পাওয়ার পরও কর্তৃপক্ষ তা না দিলে মহকুমা দফতরে শ্রমিকদের পাওনা আদায়ে সার্টিফিকেট মামলা হয়। ভিক্টোরিয়া মিল কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি শ্রমিকদের বকেয়া মিটিয়ে দিলেও এখনও আরও কিছু শ্রমিকের বকেয়া বাকি থেকে গিয়েছে।
একইভাবে গোন্দলপাড়া মিল কর্তৃপক্ষকে নোটিস ধরানো হয় মহকুমা শাসকের দফতর থেকে। কিন্তু প্রাথমিকভাবে ওই নোটিস পাওয়ার পরেও মিল কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল না থাকায় মহকুমা শাসক তাঁদের সম্পত্তি হস্তান্তরের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন সম্প্রতি। এরপরই ওই মিল কর্তৃপক্ষ অবশ্য নড়েচড়ে বসে। শ্রমিকদের বকেয়া মেটানোর ক্ষেত্রে পদক্ষেপ শুরু করেন তাঁরা। এই বিষয়ে মহকুমাশাসক পীযূষ গোস্বামী অবশ্য বলেন,“ভিক্টোরিয়া জুটমিল কর্তৃপক্ষ শ্রমিকরদের বকেয়ার বেশিরভাগ অংশ ইতিমধ্যেই মিটিয়ে দিয়েছেন। গোন্দলপাড়া জুটমিলের শ্রমিকদের বকেয়া মেটানোর কাজ চলছে।’’
প্রসঙ্গত শ্রমিকদের বকেয়া আদায়ে চন্দননগরে শ্রমিকদের আইনি সহায়তা কেন্দ্রের তরফে প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়। কিন্তু প্রাথমিকভাবে দুই মিল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রশাসনের কাছে ওই দুই মিল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তাঁরা আর্জি জানিয়েছিলেন। আইনি সহায়তা কেন্দ্রের তরফে বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “শ্রমিকদের নায্য বকেয়া রয়েছে জুটমিল কর্তৃপক্ষের কাছে। অথচ তাঁরা বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন। এর প্রতিবাদেই আমরা বার বার প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছিলাম শ্রমিকদের সমস্যার সুরাহার জন্য।”
এ বিষয়ে গোন্দলপাড়া জুটমিলের তরফে এক পদস্থ কর্তা জানান, শ্রমিকদের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।”