Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

রাস্তা সারাইয়ের দাবি, অনির্দিষ্ট কাল ধরে পুলকার বন্ধ বালিতে

কংক্রিটের কাজের জন্য জিটি রোড বন্ধ। আবার জলের পাইপলাইন বসানোর কাজের জেরে বেহাল অবস্থা পুর-এলাকার রাস্তাঘাটেরও। খানাখন্দে ভর্তি সেই রাস্তা দিয়ে পড়ুয়া বোঝাই গাড়ি নিয়ে যাওয়ার প্রতি পদে বিপদের আশঙ্কা। রাস্তা মেরামতির দাবিতে অগত্যা বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বালিতে পুলকার চালানো বন্ধ করে দিল ‘বালি পুলকার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’।

অল্প বৃষ্টিতেই এই হাল হয়। —নিজস্ব চিত্র

অল্প বৃষ্টিতেই এই হাল হয়। —নিজস্ব চিত্র

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৪ ০২:২২
Share: Save:

কংক্রিটের কাজের জন্য জিটি রোড বন্ধ। আবার জলের পাইপলাইন বসানোর কাজের জেরে বেহাল অবস্থা পুর-এলাকার রাস্তাঘাটেরও। খানাখন্দে ভর্তি সেই রাস্তা দিয়ে পড়ুয়া বোঝাই গাড়ি নিয়ে যাওয়ার প্রতি পদে বিপদের আশঙ্কা। রাস্তা মেরামতির দাবিতে অগত্যা বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বালিতে পুলকার চালানো বন্ধ করে দিল ‘বালি পুলকার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’।

পুলকার সংগঠন সূত্রের খবর, বেলুড় ও লিলুয়ার প্রায় ১০টি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্রায় চার হাজার পড়ুয়া প্রতিদিন ওই সংগঠনের গাড়িতে স্কুলে যাতায়াত করে। শুধু বালি পুর-এলাকাই নয়, হুগলির উত্তরপাড়া, কোন্নগর, ডানকুনি-সহ বরাহনগর, কামারহাটি থেকেও পড়ুয়ারা পুলকারে ওই সব স্কুলে আসে।

বালির ওই সংগঠনটিতে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২০০টি গাড়ি রয়েছে। পুলকার চালকেরা জানান, মূলত জিটি রোড ধরেই তাঁরা বেলুড়-লিলুয়ার স্কুলে যাতায়াত করতেন। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে জিটি রোড কংক্রিট করার কাজ শুরু হওয়ায় বেলুড় বাজার থেকে কোনও গাড়িকেই লিলুয়ার দিকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। অগত্যা পুর-এলাকার ভিতরের বিভিন্ন রাস্তা ব্যবহার করতে হচ্ছে গাড়িগুলিকে।

এ দিকে, পুর-এলাকায় চলছে জলের পাইপলাইন বসানোর কাজ। ‘বালি পুলকার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক মদন জানার অভিযোগ, বালি পুর-এলাকার যে সমস্ত রাস্তা দিয়ে পুলকারগুলি যাতায়াত করছে, সেগুলির অবস্থা অত্যন্ত বিপজ্জনক। পাইপলাইন বসাতে কোথাও এক রাস্তা পাঁচ বার খোঁড়া হয়েছে। কোথাও আবার খোঁড়ার পরে আর মেরামতি করা হয়নি। বালি পুরসভার চেয়ারম্যান সিপিএমের অরুণাভ লাহিড়ী বলেন, “জলের পাইপলাইন বসানোর কাজ করছে কেএমডিএ। ওঁদের সঙ্গে প্রতিনিয়িত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এলাকার রাস্তা মেরামতির জন্য ওঁরা ৭ কোটি টাকার টেন্ডার ডাকছেন। আশা করি যত দ্রুত সম্ভব রাস্তা চলার যোগ্য করা হবে।”

শিবচন্দ্র চ্যাটার্জি স্ট্রিট, শিবনাথ ব্যানার্জি রোড, লিলুয়া স্টেশন রোড, গিরিশ ঘোষ রোড, বেলুড় স্টেশন রোড-সহ সমস্ত রাস্তা জুড়েই তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। বর্ষার জল জমে সেই গর্তের ব্যাপ্তি বোঝা দায়। চালকদের দাবি, কোনও কোনও জায়গায় এতটাই গর্ত হয়ে গিয়েছে যে তাতে গাড়ি পড়লে ভিতরে জল ঢুকে যাচ্ছে। আর গর্ত এড়াতে ধীরে চলতে গিয়ে যে কোনও মুহূর্তে গাড়ি উল্টে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকছে। সম্প্রতি বেলুড়ে একটি পুলকার গর্তে পড়ে গেলে যন্ত্রাংশ ভেঙে যায়। পরে পুলিশ ও স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার করা হয় পড়ুয়াদের। আবার লিলুয়া স্টেশন রোডে পুকুরের মতো গর্ত বাঁচিয়ে চলতে গিয়ে একই দিনে একই সঙ্গে পাঁচটি গাড়ির যন্ত্রাংশ ভেঙে রাস্তাতেই আটকে পড়ে কয়েকশো পড়ুয়া।

পুলকার মালিক সংগঠন সূত্রের খবর, রাস্তার এই বিপজ্জনক পরিস্থিতির জন্যই তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অনির্দিষ্ট কালের জন্য গাড়ি চালানো বন্ধ রাখবেন। প্রতিটি পড়ুয়ার অভিভাবকদের আগাম নোটিস পাঠিয়ে বিষয়টি জানিয়েও দিয়েছেন তাঁরা। মদনবাবু বলেন, “এমন পথের হালে বিপজ্জনক ভাবে পড়ুয়াদের নিয়ে যেতে হচ্ছে। কোনও দুর্ঘটনা ঘটে গেলে দায় কে নেবে? তাই রাস্তা সারানোর দাবিতেই আমরা গাড়ি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

তবে পুলকার বন্ধ হওয়ায় এ দিন বেজায় বিপাকে পড়ে কয়েক হাজার পড়ুয়া। অনেককেই রিকশা কিংবা দুটো অটো বা দুটো বাস বদলে স্কুলে পৌঁছতে হয়েছে। পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা অবশ্য পুলকার মালিক সংগঠনের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন না করলেও প্রতিবাদও করছেন না। লিলুয়ার একটি বেসরকারি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীর বাবা তাপস মজুমদার বলেন, “গাড়ি বন্ধ করা ঠিক হয়নি। বাচ্চাগুলির কষ্ট হয়েছে। কিন্তু মালিকেরা যে কারণে গাড়ি বন্ধ রেখেছেন, তা-ও সমর্থন যোগ্য। প্রশাসন কেন রাস্তার দিকে নজর দিচ্ছেন না, জানি না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE