‘ছলনা’ আছে?
মোটরবাইক আরোহীর প্রশ্ন কানে যাওয়ামাত্র ফল বিক্রেতা এগিয়ে দিলেন খাম। দাম বাবদ বাইক-আরোহী বাড়িয়ে দিলেন ১৫০ টাকা।
দিন কয়েক আগে শহরের এক দশকর্মার দোকানে আর এক দৃশ্য। মধ্য চল্লিশের এক ব্যক্তি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে খোঁজ করছিলেন ‘শিবানী’র। এ ক্ষেত্রেও দোকানি উত্তর দিলেন না। এগিয়ে এল খাম।
পুলিশি ধরপাকড় বাড়ায় আরামবাগ শহরে চোলাই ব্যবসা কমেছে। কিন্তু রমরমিয়ে শুরু হয়েছে গাঁজার নেশা। ফল বা দশকর্মার দোকান কোনও ব্যতিক্রম নয়। শহর জুড়ে এখন বহু চায়ের দোকান, চপের দোকান, মুড়ির দোকান, সিগারেটের দোকান-সহ বিভিন্ন দোকান থেকে খামে করে অবাধে বিক্রি হচ্ছে কল্কে। গোপনীয়তা রক্ষার জন্য কোথাও সেই কল্কের নাম ‘বাঁশি’, কোথাও ‘পিস্তল’, কোথাও বা ‘ক্যাপ’। দাম ৫ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। এক-একটি দোকান থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৭০টি কল্কেও বিক্রি হচ্ছে।
তবে, ওই সব দোকানে গাঁজা বিক্রি হচ্ছে না। মাদক (পুরিয়া) মিলছে গৌরহাটি মোড়, বাঁধপাড়া, বাসস্ট্যান্ড, পুরনো বাজার, বসন্তপুর মোড়, বাসুদেবপুর মোড়, আন্দিমহল্লা, বেনেপুকুর, ভাটার মোড়, মুথাডাঙ্গা, মায়পুর হাটের মতো এলাকাগুলি থেকে। রয়েছেন ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারাও। গাঁজার আসরও বসছে শহরের নানা প্রান্তে। প্রায় প্রকাশ্যেই। সেখানে রিকশাচালক থেকে ব্যবসায়ী, কলেজ ছাত্র থেকে চাকরিজীবী সব স্তরের মানুষই থাকছেন। বসন্তপুরে মিনি মার্কেট চত্বর, রেল লাইনের ধার, চাঁদুর বনাঞ্চল, হাসপাতাল চত্বর বা রবীন্দ্রভবন চত্বরে যে কোনও দিন বিকেল বা রাতে গেলেই বোঝা যাবে, গাঁজার গন্ধে বাতাস ভারী। নেশার মাত্রা বাড়াতে বসন্তপুরের একটি ঠেকে গাঁজা সেবনের পর রসগোল্লা খাওয়ার চল রয়েছে। পল্লিশ্রীর কাছে একটি ঠেকে আবার গাঁজা সেবনের পরে দুধ খান নেশাড়ুরা। এ ছাড়া, ধোঁয়ার ঘ্রাণে বৈচিত্র্য আনতে কোথাও লবঙ্গ, কোথাও এলাচ বা গোলাপের শুকনো পাপড়ি রাখা হচ্ছে কল্কেতে।
শহরের নানা প্রান্তে যে ভাবে গাঁজার আসর এবং বিক্রিবাটা বাড়ছে, তাতে উদ্বিগ্ন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিশেষ করে বাড়ির মহিলারা। স্থানীয় বিদ্বজ্জন এবং সমাজসেবীরাও আবগারি দফতর ও পুলিশ প্রশাসনের নজরদারির অভাবকেই এ জন্য দায়ী করেছেন। তাঁদের মধ্যে শিক্ষাবিদ আশিসবরণ সামন্ত বলেন, “মানুষ গাঁজার নেশায় আসক্ত হচ্ছেন অথচ পুলিশ প্রশাসন ঠিকমতো নজরদারি করছে না।” নাট্যকর্মী বিভাংশু দত্ত বলেন, “সহজেই মিলছে বলে শহরে গাঁজা খাওয়া বেড়েছে।” সমাজসেবীদের মধ্যে শম্ভু ঘোষ বলেন, “গাঁজার আসরগুলি বন্ধ করতে পুলিশের নজরদারি তো চোখে পড়ে না।”
পুলিশ প্রশাসনের নজর এড়াতে তাঁরা যে কিছুটা গোপনীয়তার আশ্রয় নিয়েছেন তা একবাক্যে স্বীকার করছেন গাঁজা-কল্কে বিক্রেতারা। তাঁরা জানান, খানাকুল, গোঘাট, পুড়শুড়া এমনকী সংলগ্ন বর্ধমান জেলার গ্রাম থেকেও ক্রেতারা এসে গাঁজা নিয়ে যাচ্ছেন। গাঁজার (পুরিয়া) খাম বিক্রি হচ্ছে ১০, ২০ বা ৫০ টাকায়। দশ টাকার খামে ২ গ্রাম গাঁজা থাকে। বাকি দু’টিতে পরিমাণ বেশি। অধিকাংশ গাঁজা আসছে বর্ধমান থেকে। এ ছাড়া রয়েছে নদিয়াও। মণিপুর থেকেও চোরাপথে গাঁজা এ শহরে আনা হচ্ছে বলে মেনে নিয়েছেন বিক্রেতারা।
কী করছে পুলিশ প্রশাসন?
মহকুমাশাসক প্রতুলকুমার বসু জানান, শহরে গাঁজা সেবনের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে তাঁর কাছে কোনও তথ্য নেই। এসডিপিও (আরামবাগ) শিবপ্রসাদ পাত্রের দাবি, “গাঁজা রোধে প্রায়ই অভিযান চলে। গ্রেফতারও করা হয়।” আবগারি দফতরের আরামবাগ শাখার ওসি চিরঞ্জীব সরকার বলেন, “আমরা চোলাই নিয়েই ব্যতিব্যস্ত। গাঁজার বিষয়টি দেখে আমাদের নারকোটিক কন্ট্রোল সেল। কোনও খবর পেলে আমরা কলকাতার নারকোটিক সেলে পাঠিয়ে দিই।”
অর্থাৎ, শহরের যত্রতত্র গাঁজা সেবন বন্ধে পুলিশ প্রশাসনের তরফে বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত নেই। পোয়াবারো নেশাড়ুদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy