Advertisement
E-Paper

হাওড়ায় ভাঙনের গ্রাসে ঘরবাড়ি, জানে না প্রশাসন

গঙ্গার ভাঙনের কবলে পড়ে ক্রমাগত তলিয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি, কল-কারখানা, মন্দির। কলকাতার অনতিদূরে এই ঘটনা ঘটলেও এত দিন এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না কলকাতা বন্দর-কর্তৃপক্ষের পদস্থ কর্তা থেকে রাজ্যের সেচমন্ত্রী এমনকী, সংশ্লিষ্ট পুরসভার মেয়রও।

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৫৮
হাওড়ার ঘুসুড়িতে গঙ্গার ভাঙন। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

হাওড়ার ঘুসুড়িতে গঙ্গার ভাঙন। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

গঙ্গার ভাঙনের কবলে পড়ে ক্রমাগত তলিয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি, কল-কারখানা, মন্দির। কলকাতার অনতিদূরে এই ঘটনা ঘটলেও এত দিন এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না কলকাতা বন্দর-কর্তৃপক্ষের পদস্থ কর্তা থেকে রাজ্যের সেচমন্ত্রী এমনকী, সংশ্লিষ্ট পুরসভার মেয়রও।

অথচ, এই ভাঙনের ঘটনা ঘটেছে কলকাতার উল্টো দিকে হাওড়া পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের গঙ্গাতীরবর্তী ঘুসুড়ির শান্তিনগর এলাকায়। নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে গত কয়েক বছরে অঞ্চলের অনেক কিছুই তলিয়ে গিয়েছে। কলকাতার পশ্চিম পাড়ে এই ভাঙন চলছে তিন-চার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। এই ভাঙন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, গত কয়েক মাসের মধ্যে এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই জমি-বাড়ি ছেড়ে অন্যত্রে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। যাঁরা এখনও আছেন, তাঁদের আতঙ্কে দিন কাটাতে হচ্ছে। ওই বাসিন্দাদের অভিযোগ, দিনের পর দিন এই ভাঙন চললেও পুরসভা বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাঙন রোধ করতে ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, কেউ খবরও নেননি।

কিন্তু শহরের মধ্যে হওয়া এই ভাঙন রোধ করতে পুরসভা কেন ব্যবস্থা নেয়নি?

হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তীকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি জানতামই না এ রকম ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছ থেকে এ ব্যাপারে একটা বিস্তারিত রিপোর্ট চাইব।”

এ প্রসঙ্গে কলকাতা বন্দরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “এই ধরনের ঘটনা ঘটলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দেখতে হবে।”

রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “ঘটনাটি আজকেই আমাদের কানে এসেছে। গোটা বিষয়টি কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। কারণ তাঁরা ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ না দিলে রাজ্য সরকার কোনও কাজ করতে পারবে না।”

ঘুসুড়ির চর নামে পরিচিত ওই শান্তিনগর এলাকায় নদীর পাড় ধরে রয়েছে একাধিক চটকল, জাহাজ মেরামতের কারখানা-সহ বহু বসতবাড়ি। স্থানীয় সূত্রে খবর, ৩০ বছর আগে গঙ্গা ছিল প্রায় ১০০ মিটার দূরে। তখন সেই নদীপাড়েই গড়ে উঠেছিল অসংখ্য বসতবাড়ি, কল-কারখানা, মন্দির ও স্নানের ঘাট। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত কয়েক বছরের ভয়াবহ ভাঙনে গঙ্গাবক্ষে তলিয়ে গিয়েছে প্রায় ৪০টি বসতবাড়ি। ভেঙে পড়েছে দু’টি মন্দির-সহ গঙ্গার পাড়ে থাকা একটি কারখানার পাঁচিল।

এলাকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা শ্যাম বাহাদুর বলেন, “প্রতি কোটালের বানের ধাক্কায় পাড় ভেঙে পড়ছে। একটু একটু করে তলিয়ে যাচ্ছে এলাকাটা। বড় বান আসলেই ভয় পাচ্ছি এই বুঝি আমার বাড়িটাও তলিয়ে যাবে। এই মুহূর্তে সরকার কোনও ব্যবস্থা না নিলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।”

উত্তর হাওড়ার ওই ঘুসুড়ির চর এলাকায় সর্বত্রই এখন ধ্বংসের চিহ্ন। কোথাও বাড়ির সামনের অংশ ভেঙে চলে গিয়েছে নদীর গর্ভে, কোথাও আবার মন্দির ভেঙে নদীর পাড়ে ঝুলছে। কোথাও কারখানার গার্ডওয়াল ভেঙে নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় বালির বস্তা দিয়ে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা হয়েছে।

এলাকার বাসিন্দারা জানান, গত কয়েক বছরে মধ্যে একের পর এক বাড়ি গঙ্গা বক্ষে তলিয়ে যাওয়ায় আতঙ্কিত বাসিন্দাদের অনেকে এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছেন। এ ব্যাপারে পুরসভার কাছে গণস্বাক্ষর করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু পুরসভা কোনও গা করেনি। এলাকার বাসিন্দা দিলীপ সাহা বলেন, “এখানকার সকলেই পুরসভার ১ নম্বর ওয়াডের্র বাসিন্দা ও ভোটার। প্রত্যেকের ভোটার কার্ড রয়েছে। বিদ্যুতের মিটার রয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে পুরসভাকে বারবার জানালেও ভাঙন রোধে তারা কোনও রকম ব্যবস্থাই নেয়নি।”

রাজকুমার যাদব নামে এলাকার এক যুবক বলেন, “কেউ ভাঙন রোধে এগিয়ে না আসায় গত বছর ধার করে দেড় লক্ষ টাকা জোগাড় করে তারের জাল আর বোল্ডার কিনে পাড় বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তার পরে কোটালের বানের জলে সমস্ত কিছু ভেসে গিয়েছে।”

howrah debashis das ghusuri ganges southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy