পারিবারিক বিবাদের জেরে এক আত্মীয়কে তাঁর বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসে আটকে রাখা এবং মারধরের অভিযোগে হরিপালের বিজেপি নেতা মুজফ্ফর আলি ওরফে মাজাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে একই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁর মামাতো ভাই ওয়াজেদ আলিকেও। ওই আত্মীয় এলাকায় তৃণমূল সমর্থক হিসেবে পরিচিত হওয়ায় ঘটনায় লেগেছে রাজনৈতিক রং-ও।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালে হরিপালের শিবাইগাঠির বাসিন্দা ওয়াজেদের মেয়ে হাসিবা খাতুনের সঙ্গে কালুবাটির শেখ আবু ফজলের বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই পণের দাবিতে হাসিবার উপরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন অত্যাচার চালাচ্ছিলেন এবং তাঁকে বারবার বাপেরবাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। হাসিবার বাপেরবাড়ির লোকজন তা সত্ত্বেও মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠানোর চেষ্টাই করছিলেন। গত বুধবার ফজল ফের বিয়ে করেছেন, এই কথা কানে যায় ওয়াজেদের। তিনি সে কথা মুজফ্ফরকে বলেন। অভিযোগ, মুজফ্ফর এবং ওয়াজেদ বৃহস্পতিবার সকালে ফজলকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে একটি ঘরে আটকে রেখে মারধর করেন। রাতে ফজল ওয়াজেদ এবং মুজফ্ফরের নামে থানায় অপহরণ করে তাঁকে মারধরের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এ দিকে, ওই রাতেই হাসিবার উপরে অত্যাচারের মীমাংসার জন্য কিছু স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে থানায় যান ওয়াজেদ এবং মুজফ্ফর। সেখানেই পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, অভিযোগের ভিত্তিতেই দু’জনকে ধরা হয়েছে। শুক্রবার ধৃতদের চন্দননগর আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁদের দু’জনকেই পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
হরিপাল এলাকায় এক সময়ে তৃণমূল নেতা হিসেবে পরিচিত মুজফ্ফর কয়েক মাস আগে বিজেপিতে যোগ দেন। হরিপালের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্নার নাম না করে তাঁর অভিযোগ, তাঁকে চক্রান্ত করে মন্ত্রী ফাঁসিয়েছেন। ফজলকে মারধর করা হয়নি দাবি করে মুজফ্ফর বলেন, “পারিবারিক বিবাদ নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্যই আমাকে গ্রেফতার করানো হল। এটা হরিপালের মন্ত্রীর চক্রান্ত। আমার অপরাধ, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছি। ফজলকে বোঝাতে গিয়েছিলাম। ওকে আটকেও রাখিনি। মারধরও করিনি।” একই সুরে বিজেপির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রাজকুমার পাঠক বলেন, “উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মিথ্যা অভিযোগে মুজফ্ফরকে ধরা হয়েছে। এটা তৃণমূলের চক্রান্ত। মুজফ্ফর হরিপালে আমাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করে তোলায় তৃণমূলের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। তাই ওরা মাজাকে গ্রেফতার করিয়েছে।”
তাঁর এবং দলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন বেচারামবাবু। তাঁর দাবি, “মাজাকে গ্রেফতারের পিছনে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। পরিবারিক বিবাদের জেরে ফজলকে অপহরণ করে মারধরের অভিযোগে পুলিশ তাঁকে ধরেছে।”
এ দিকে, হাসিবাও দাবি করেন, মিথ্যা অভিযোগে তাঁরা বাবা ও বাবাকে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, “পণের জন্য শ্বশুরবাড়িতে আমার উপরে অত্যাচার বাড়ছিল। স্বামী কিছুতেই বাড়িতে থাকতে দিচ্ছিল না। স্বামী নতুন বিয়ে করেছে জানতে পেরে বাবা ও কাকা বোঝাতে গিয়েছিল। আর কিছুই নয়।” ফজল হাসিবার অভিযোগ মানেননি। তাঁর দাবি, “স্ত্রী তাঁর বাপেরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে মিলে আমার ও পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছিল। তাই স্ত্রীকে বলেছিলাম বাপেরবাড়ি চলে যেতে। আর কিছুই নয়। মিথ্যা অভিযোগেই আমাকে আটকে রেখে মারধর করা হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy