Advertisement
E-Paper

কর্তার দাবি নস্যাৎ কমিশনের সাইটেই

বড় মুখ করে বলেছিলেন, তিনি যা যা সুপারিশ করছেন, রাজ্য সরকার সবই মেনে নিচ্ছে। বুধবার বর্ধমানে মু‌খ্যমন্ত্রীর শততম প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের অস্থায়ী চেয়ারম্যান নপরাজিত মুখোপাধ্যায় এই দাবি করলেও তাঁর সংস্থার ওয়েবসাইট তা সমর্থন করছে না। কী বলছে কমিশনের ওয়েবসাইট?

সুকান্ত সরকার

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৭

বড় মুখ করে বলেছিলেন, তিনি যা যা সুপারিশ করছেন, রাজ্য সরকার সবই মেনে নিচ্ছে। বুধবার বর্ধমানে মু‌খ্যমন্ত্রীর শততম প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের অস্থায়ী চেয়ারম্যান নপরাজিত মুখোপাধ্যায় এই দাবি করলেও তাঁর সংস্থার ওয়েবসাইট তা সমর্থন করছে না।

কী বলছে কমিশনের ওয়েবসাইট?

সাইট জানাচ্ছে, গত বছর কমিশন মোট ১২টি সুপারিশ করেছিল। সরকার মেনেছে মাত্র চারটি! অর্থাৎ তিন ভাগের মধ্যে মাত্র এক ভাগ সুপারিশ মানা হয়েছে। বাকি সুপারিশগুলির ক্ষেত্রে কমিশনের কাছে এখনও কোনও রিপোর্টই পাঠায়নি রাজ্য সরকার। কমিশনের ওয়েবসাইটে তাই সেগুলির ক্ষেত্রে ‘রিপোর্ট এখনও মেলেনি’ বলে দেখানো হয়েছে। কমিশনের একটি সূত্রের দাবি, ২০১৪-’১৫ অর্থবর্ষ শেষ যাওয়ার পরেও এই রিপোর্ট না-আসার অর্থ, সরকার সেগুলি ঝুলিয়ে রেখেছে। তাই রাজ্য সেগুলি মেনে নিয়েছে, এমন দাবি বিভ্রান্তিকর বলেই মনে করছেন কমিশনের একাংশ।

সব জেনেশুনে কমিশন-প্রধান তা হলে এমন কথা বললেন কেন?

এই ব্যাপারে বৃহস্পতিবার বারবার যোগাযোগের চেষ্টা চালানো সত্ত্বেও তিনি ফোন তোলেননি। জবাবও দেননি এসএমএসের। তবে অভিযোগের আকারে জবাবটা দিচ্ছেন মানবাধিকার কর্মীরাই। তাঁদের বক্তব্য, দেড় বছর ধরে স্রেফ রাজ্য সরকারের বদান্যতায় নপরাজিতবাবু নজিরবিহীন ভাবে অস্থায়ী চেয়ারম্যানের পদে বসে রয়েছেন। তাই তাঁকে তো সরকারের শেখানো কথাই বলতে হবে!

এই সমস্যার সুরাহা কী?

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, শীর্ষ পদে স্থায়ী ভাবে কাউকে না-বসানো পর্যন্ত কমিশনকে এ ভাবেই চলতে হবে। পরিস্থিতি বদলের জন্য কী করা উচিত, সেই নিদান বাতলে দিয়েছেন জাতীয় নির্বাচন কমিশনের প্রধান সাইরিয়াক জোসেফ। তিনি মনে করেন, এ ব্যাপারে রাজ্যের নাগরিক সমাজ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিরই আওয়াজ তোলা উচিত।

২০১৪ সালে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের পদে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায় ইস্তফা দেওয়ার পরে অস্থায়ী ভাবে ওই পদের দায়িত্ব দেওয়া হয় রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়কে। বিতর্কের শুরু তখন থেকেই। নপরাজিতবাবু এক জন অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার। আইন-বিশেষজ্ঞদের মতে, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বা কোনও হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিই রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের স্থায়ী চেয়ারম্যানের পদে বসার যোগ্য। তাই রাজ্য সরকার নপরাজিতবাবুকে অস্থায়ী ভাবে ওই পদের দায়িত্বে নিয়ে এলেও এখনও পর্যন্ত তাঁকে স্থায়ী করা যায়নি।

কমিশনের চেয়ারম্যান পদে স্থায়ী ভাবে কাউকে আনা হচ্ছে না কেন? রাজ্যে কি হাইকোর্টের কোনও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নেই?

অশোকবাবু ইস্তফা দেওয়ার পর থেকে এ-পর্যন্ত রাজ্যে হাইকোর্ট থেকে অন্তত তিন জন বিচারপতি অবসর নিয়েছেন। তাঁরা হলেন বারীন ঘোষ, ভাস্কর ভট্টাচার্য এবং কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত। এঁদের কাউকে কি কমিশনের চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে অনুরোধ করা হয়েছে?

কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোকবাবু বলেন, ‘‘না। ওই তিন জনের কাউকেই কমিশনের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার অনুরোধ করেছে বলে শুনিনি।’’

অনুরোধ করা হয়নি কেন?

সরকারি তরফে জবাব মিলছে না। তবে কমিশনের শীর্ষে কাউকে স্থায়ী ভাবে নিয়োগ করার ইচ্ছে সরকারের নেই বলেই মনে করছে কোনও কোনও শিবির। মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিত শূর বলেন, ‘‘মানবাধিকার কমিশনে স্থায়ী চেয়ারম্যান আনার কোনও সদিচ্ছাই নেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর। কারণ উনি কমিশনকে আর-পাঁচটা সরকারি দফতরের মতো চালাতে চান।’’ তাই কমিশনের শীর্ষে এমন এক জনকে অস্থায়ী ভাবে বসিয়ে রাখা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি যাঁর কৃতজ্ঞতার শেষ নেই বলে মনে করেন রঞ্জিতবাবু। যে-পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ সব চেয়ে বেশি, সেই পুলিশেরই এক জন প্রাক্তন ডিজি-কে কমিশনে আনার বিরুদ্ধে রঞ্জিতবাবুরা কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলাও দায়ের করেছেন।

ডিসেম্বরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তৎকালীন চেয়ারপার্সন কে জি বালকৃষ্ণন জানিয়েছিলেন, রাজ্য মানবাধিকার কমিশনে স্থায়ী চেয়ারম্যান নিয়োগ করার জন্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি দু’বার চিঠি লিখেছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী কিছুই করেননি। হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেছিলেন, ‘‘একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করা ছাড়া আমি আর কী-ই বা করতে পারি!’’ গত ১০ ডিসেম্বর, মানবাধিকার দিবসের অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল স্বয়ং কমিশনে স্থায়ী চেয়ারম্যান নিয়োগ করার কথা বলেছিলেন। রাজ্য সরকার কিন্তু রাজ্যপালের কথাও শোনেনি।

রাজ্য মানবাধিকার কমিশনে চেয়ারম্যান ছাড়া আরও দু’জন সদস্য থাকার কথা। তাঁদের এক জন হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং তৃতীয় সদস্য করার কথা বলা হয়েছে মানবাধিকার সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞানসম্পন্ন কাউকে। অশোকবাবু যখন চেয়ারম্যান ছিলেন, দুই সদস্যের এক জন ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি নারায়ণচন্দ্র শীল এবং অন্য জন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব সৌরীন্দ্রনাথ রায়। সৌরীনবাবু প্রাক্তন আইএএস অফিসার। মানবাধিকার আন্দোলনের কোনও কর্মীকে কমিশনে তৃতীয় সদস্য করা হয়নি ঠিকই।

তবে কোনও পুলিশকর্তাকে কমিশনের অস্থায়ী চেয়ারম্যান তো দূরের কথা, সদস্য পর্যন্ত করেনি আগের কোনও সরকারই।

sukanta sarkar hrc west bengal human rights commission west bengal human rights commissions website naparajit mukhopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy