প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে সীমান্ত বাণিজ্যে। সীমান্ত বাণিজ্যের টোটো-অটো ভ্যান চালকদের ক্ষতির তো ইয়ত্তা নেই। রোজগার বন্ধ ছিল বাস মালিকদের। হাটে-বাজারে ছোট ব্যবসায়ীদেরও মাথায় হাত। আর যাঁদের দোকানপাট পুড়েছে, ভাঙচুর হয়েছে, তাঁরা তো কী ভাবে লোকসানের ধাক্কা সামলে উঠতে পারবেন, তা ভেবে রাতের ঘুম উড়েছে। সব মিলিয়ে ৩ জুলাই থেকে বসিরহাটে শুরু হওয়া গণ্ডগোলের জেরে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বিপুল। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বহু মানুষের আর্থিক ক্ষত এখনও দগদগে।
ঘোজাডাঙা ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি কান্তি দত্ত জানালেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য দু’দিন বন্ধ ছিল। তাতে প্রায় দু’কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশের ভোমরা থেকে পণ্য নিয়ে কোনও ট্রাক ঢোকেনি এ দেশে।
বসিরহাট পুরনো বাজার হাট ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য চন্দন দে জানালেন, আতঙ্কের জেরে দিন দশেক ঠিকমতো হাট-বাজার বসেনি। ক্রেতারাও আসতে পারেননি। অনেক জিনিসপত্র পচে গিয়েছে। সেগুলি ফেলে দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ক্ষতি সামলাতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
মহকুমা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক উৎপল মিত্র বলেন, ‘‘গণ্ডগোলের জেরে কয়েক দিন বাস চালানো সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই কয়েকটি বাস নামানো হয়েছিল। কিন্তু তাতে যাত্রী মেলেনি।’’ উল্টে দু’টি বাস রাস্তায় ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা, দাবি উৎপলবাবুর। বাস চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় আট-দশ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বসিরহাটের গণ্ডগোলের ফলে ধাক্কা খেয়েছে টাকির পর্যটন শিল্পও। টাকির পুরপ্রধান সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই হানাহানির জেরে বহু মানুষ টাকির হোটেল, গেস্টহাউসের বুকিং বাতিল করে দিয়েছেন। সাত দিন ইকো পার্ক বন্ধ রাখতে হয়েছে।’’ পর্যটকেরা না আসায় অটো, টোটো, ইঞ্জিন ভ্যান চালকদের ক্ষতি হয়েছে।
বসিরহাটের তাণ্ডবের ফলে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ‘দিন আনা দিন খাওয়া’ বহু মানুষ। টোটো, অটো, ভ্যান চালকদের কথায়, ‘‘কিছু মানুষ যে ভাবে বসিরহাটে তাণ্ডব চালাল, তাতে এটা এটাই মনে হয়েছে, তাঁরা আর যা-ই হোক, ধর্মের তোয়াক্কা করেন না।’’ খগেন মণ্ডল, রূপসানা খাতুন, আবদুল খালেদ গাজি, তপন সরকারদের কথায়, ‘‘আমরা খুবই গরিব। কোনও রকমে একবেলা আধপেটা খেয়ে দিন কাটাই। এখন তা-ও হচ্ছে না। পরিবার নিয়ে যে কী ভাবে রয়েছি, তা আমরাই জানি। কিছু মানুষের জন্য আমাদের দুর্গতির শেষ নেই।’’
আর সরাসরি যাঁদের দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত, কী বলছেন তাঁরা?
ত্রিমোহনীতে একটি চশমার দোকানের মালিক শম্ভু শেঠ জানালেন, একদল দুষ্কৃতী দোকান ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয়। চোখ পরীক্ষার আধুনিক সরঞ্জাম-সহ লুঠ হয়েছে প্রচুর মালপত্র। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা। প্রবাল অধিকারী চা বিক্রি করেন। বললেন, ‘‘রোজগারের একমাত্র পথ এই দোকানটুকু। তা-ও ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। সপরিবার এক রকম না খেয়ে দিন কাটছে। একদল অবুঝ মানুষের জন্য আমাদের এই দশা।’’ বসিরহাটের স্টেশন রোডের এক ব্যবসায়ী জানালেন, তাঁর কম্পিউটার এবং ফটোকপি মেশিন ভেঙে দিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। আকবর গাজির পান-বিড়ি-স্টেশনারি দোকান। পুড়িয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। বহু টাকার ক্ষতি হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘নতুন করে দোকান তৈরির সামর্থ্য নেই। কিছু লোকের উন্মত্ততার জন্য এত মানুষকে ভুগতে হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy