দার্জিলিং রাজভবনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিসভার বৈঠককে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল দার্জিলিং। বৈঠকস্থল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বের ভানুভবন এলাকা কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিল পুলিশ আর মোর্চা সমর্থকদের খণ্ডযুদ্ধে। ইট, পাথর বৃষ্টি আর পুলিশের লাঠিচার্জের মধ্যে আগুন জ্বলল পুলিশের অন্তত এক ডজন গাড়িতে। অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছে শহরের অন্যত্রও। আর এই অশান্তির জেরে প্রবল আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পর্যটক, এমনকী স্থানীয় মানুষদের মধ্যেও। পরিস্থিতি সামলাতে সেনা ডাকল রাজ্য সরকার। সন্ধেতেই দুই কলাম সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। প্রত্যেক কলামে ৪০ জনের মতো জওয়ান, একজন করে অফিসার এবং দু’জন করে জেসিও।
প্রায় দশ হাজার পর্যটক এই মুহূর্তে দার্জিলিঙে আছেন। ঘটনার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “ধ্বংসের পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে এরা। কোনও ইস্যু নেই, তাই এ সব করছে।” উল্টো দিকে পুলিশ এবং সরকারি আগ্রাসনের অভিযোগ তুলে কাল সকাল ৬টা থেকে ১২ ঘণ্টার পাহাড় বন্ধ ডাকল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। তবে অশান্তির জেরে আজ দুপুর থেকেই কার্যত বন্ধের চেহারা নিয়ে নিয়েছে দার্জিলিং। বন্ধ সমস্ত দোকানপাট।গোর্খার ডাকা এই বন্ধকে পুরোপুরি বেআইনি বলে ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। বন্ধ-এ কোনও সরকারি কর্মী চাকরিতে অনুপস্থিত থাকলে সার্ভিস ব্রেক-আপের নির্দেশিকারও জারি করা হয়েছে।

পুলিশ-মোর্চা খণ্ডযুদ্ধের পর বিধ্বস্ত এলাকা।—নিজস্ব চিত্র
সাড়ে চার দশক পর দার্জিলিং রাজভবনে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক বসেছিল এ দিন। এর প্রতিবাদে আগেই বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। সেই মতো বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দার্জিলিং স্টেশন, বাতাসিয়া লুপ ও ভানুভবনের সামনে চলছিল মোর্চাদের অবস্থান বিক্ষোভ। দুপুরে ভানুভবনের এই প্রতিবাদ সভায় যোগ দেন মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুঙ্গ। এর কিছুক্ষণ পরেই এলাকায় এসে পৌঁছায় বিশাল পুলিশবাহিনী। পুলিশ মোর্চা সমর্থকদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মসূচিও শেষ করা হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয় মোর্চার তরফে। পুলিশ সূত্রে খবর, এরপরেই এলোপাথাড়ি ঢিল ছুড়তে শুরু করেন মোর্চা সমর্থকরা। ঢিলের আঘাতে জখম হন পাঁচ পুলিশকর্মী। পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠি চালানোর পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাসও ছোড়ে পুলিশ।
শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত শিলিগুড়ি থেকে প্রতি দু’ঘণ্টা অন্তর কলকাতা পর্যন্ত বিশেষ বাসের বন্দোবস্ত করছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (এনবিএসটিসি)
আরও পড়ুন: মোর্চার বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রায় ‘হাইজ্যাক’ তৃণমূলের

হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আহত পুলিশকর্মীকে।—নিজস্ব চিত্র
মোর্চার তরফে অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ভাঙতে পুলিশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আক্রমণ করেছে তাদের। তার জেরেই অশান্ত হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি। পুলিশের হাতে তাদের বহু সমর্থক জখম বলেও অভিযোগ করেছে মোর্চা নেতৃত্ব।
মোর্চা সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশি সংঘর্ষের একটু আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার পর ফের জরুরি বৈঠকে বসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, পর্যটকদের নিরাপদে সমতলে নামিয়ে আনতে প্রশাসন সব রকম ব্যবস্থা করছে। যত ক্ষণ না সব পর্যটক পাহাড় ছাড়ছেন, তত ক্ষণ তিনিও সেখান থেকে ফিরবেন না বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। আগামিকাল তাঁর পাহাড় ছাড়ার কথা ছিল। পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় সন্ধ্যায় জানিয়েছেন, এক সঙ্গে অনেক পর্যটকের ফেরার কথা মাথায় রেখে কাল, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত শিলিগুড়ি থেকে প্রতি দু’ঘণ্টা অন্তর কলকাতা পর্যন্ত বিশেষ বাসের বন্দোবস্ত করছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (এনবিএসটিসি)।
আরও পড়ুন: দার্জিলিঙে আজ মমতার মন্ত্রিসভার বৈঠক, অবস্থান বিক্ষোভের হুমকি গুরুঙ্গের