Advertisement
E-Paper

শব্দরহস্য কাটেনি, ফাটল ঘরবাড়িতে, আতঙ্কে দিঘা ছাড়ছেন পর্যটকেরা

ঘটনার পরপরই জেলা পুলিশ যোগাযোগ করেছে ওড়িশা পুলিশের সঙ্গে। খবর দেওয়া হয়েছে ওড়িশার কোস্ট গার্ডকেও। সমুদ্রের গভীরে কোনও জাহাজ থেকে ওই বিস্ফোরণ ঘটেছে কি না বা সমুদ্রে কোনও বিমান ভেঙে পড়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

শান্তনু বেরা

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৭ ১৩:২৬
আতঙ্কে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছেন মানুষজন। নিজস্ব চিত্র।

আতঙ্কে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছেন মানুষজন। নিজস্ব চিত্র।

সপ্তাহান্তের ভিড়ে থিকথিকে দিঘা হঠাত্ই কেঁপে উঠল বিকট শব্দে। সমুদ্র পাড় থেকে গোটা শহর, এমনকী কয়েক কিলোমিটার দূরের তাজপুর, মন্দারমণিও বাদ গেল না।

সকাল ১১টা বেজে পাঁচ মিনিটে প্রথম বার। মিনিট দুয়েকের মধ্যে ফের আওয়াজ। এ বার তীব্রতা একটু কম। সমুদ্রে যাঁরা স্নান করছিলেন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাড়াহুড়ো করে উঠে এলেন পাড়ে। হোটেলের ঘরে যাঁরা ছিলেন, পড়িমরি করে দৌড়ে নেমে এলেন নীচে। স্থানীয় বাসিন্দারাও বাইরে বেরিয়ে আসেন। এমন অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি। তত ক্ষণে যদিও ফাটল দেখা দিয়েছে দিঘা মোহনার মাটিতে। চিড় ধরেছে দিঘা উপকুল থানার দেওয়ালে। বেশ কিছু হোটেলে ফাটলের পাশাপাশি কাচের জানলা দরজা ঝনঝন করে ভেঙে পড়েছে। কিন্তু এই ভয়ঙ্কর শব্দ এবং কাঁপুনির উত্স কী, শনিবার বিকেল পর্যন্ত তা জানা যায়নি। জোড়া শব্দের উত্স এখনও রহস্যে মোড়া!

আরও পড়ুন: মিনারেল ওয়াটার থেকে বিশেষ সহায়ক, জেলেও বহাল ‘বাবা’র মহিমা

দিঘা থেকে শান্তনু বেরার প্রতিবেদন

প্রাথমিক ভাবে সকলে মনে করেছিলেন ভূমিকম্প। কিন্তু, সে ক্ষেত্রে সমুদ্রের জলে প্রবল আলোড়ন ওঠে। তা ছাড়া ভূমিকম্প হলে এমন বিকট আওয়াজ হওয়ার কোনও কারণ নেই। নুলিয়া রতন দাস জানালেন, তিনি সেই সময় সমুদ্রের পাড়েই ছিলেন। হঠাত্ বিকট আওয়াজে গোটা চত্বর কেঁপে ওঠে। মুহূর্তের মধ্যেই সমুদ্র থেকে উঠে পড়েন সকলে। মিনিট দুয়েকের মধ্যে ফের প্রবল আওয়াজ। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমে তো ভেবেছিলাম ভূমিকম্প। কিন্তু, জল সে ভাবে ফুঁসে ওঠেনি দেখে বুঝলাম, তা নয়। অন্য কোনও কারণ।’’

এই ঘটনা নিয়ে জেলা পুলিশ কর্তারাও ধন্দে রয়েছেন। তবে, ভূমিকম্প যে নয়, সে ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত। রাজ্য পুলিশের কর্তারা ওড়িশা পুলিশের পাশাপাশি যোগাযোগ করেছেন উপকূলরক্ষী বাহিনীর সঙ্গেও। তবে, সাধারণ মানুষের ভিতরে এই ঘটনা নিয়ে অনেক জল্পনা শুরু হয়। তাঁদের মতে, সমুদ্রের গভীরে কোনও জাহাজে বিস্ফোরণ হতে পারে। সমুদ্রে কোনও বিমানও ভেঙে পড়তে পারে। আবার কেউ কেউ ওড়িশা উপকূলের হুইলার দ্বীপ থেকে ক্ষেপনাস্ত্র উত্‌ক্ষেপণের পরীক্ষাকেও দায়ী করছেন। কিন্তু, প্রশাসনের তরফে এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে কিছুই জানানো হয়নি।

এমনিতেই পাহাড় বন্ধ থাকার জেরে পর্যটকদের ঠাসা ভিড় দিঘাতে। তার উপর উইকএন্ড। সব মিলিয়ে সকাল থেকেই সমুদ্র পাড় থিকথিক করছিল পর্যটকে। হঠাত্ জোড়া আওয়াজে তাঁদের সকলেই ভয় পেয়ে যান। যাঁরা হোটেলে ছিলেন, তারাও শব্দ এবং কাঁপুনিতে ভয় পেয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। দুর্গাপুর থেকে দিঘায় এসেছেন মৌসুমী ঘোষ। তিনি তখন হোটেলে তিল তলার ঘরেই ছিলেন। হঠাত্ বিকট শব্দে হোটেলের পাশাপাশি তিনিও কেঁপে ওঠেন। স্বামীকে নিয়ে কোনও মতে নীচে নামেন। তিনি বলেন, ‘‘হোটেলের সিঁড়িতে তখন জানলার কাচ ভেঙে পড়ছে। সকলেই নেমে আসতে চাইছেন নীচে। সব মিলিয়ে সে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। ভেবেছিলাম ভূমিকম্প। কিন্তু, তাতে তো এত আওয়াজ হওয়ার কথা নয়!’’

দেখুন ভিডিও: পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসুর বক্তব্য

একই অভিজ্ঞতা স্থানীয় বাসিন্দা চন্দন দাসের। দিঘার পাশের গ্রাম অলঙ্কারপুরে তাঁর বাড়ি। সবে তখন বাজার করে বাড়িতে ঢুকেছেন। উঠোনে রাখা সাইকেলটা কাঁপুনির চোটে হুড়মুড় করে পড়ে যায়। কেঁপে ওঠে গোটা বাড়ি। ভয় পেয়ে তিনি কোনও রকমে অন্যদের নিয়ে দৌড়ে রাস্তায় চলে আসেন। বাইরে বেরিয়ে দেখেন প্রতিবেশীরাও রাস্তায়। তাঁর কথায়, ‘‘এত দিন ধরে এই গ্রামে রয়েছি। কখনও এমন অভিজ্ঞতা হয়নি।’’

পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিত্ বসু জানিয়েছেন, দিঘা উপকূলের স্থলভাগে এমন কিছু হয়নি যাতে এমনটা হতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা গোটা এলাকায় তল্লাশি চালিয়েছি। স্থলভাগে যে কিছু হয়নি, সেটা নিশ্চিত। কোস্ট গার্ডের কর্মীরা সমুদ্রে তল্লাশি চালাচ্ছেন। ওড়িশা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই গোটা বিষয়টা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

তবে অজানা কারণে এমন ভয়ঙ্কর ভাবে কেঁপে ওঠায় পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অনেকেই হোটেল ছেড়ে বাড়ি ফিরতে চাইছেন। দুর্গানগরের বাসিন্দা অণিমা বসু শুক্রবার রাতে দিঘা পৌঁছেছিলেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘খুব ভয় পেয়ে গিয়েছি। সঙ্গে ছোট বাচ্চা রয়েছে। এখানে থাকার ঝুঁকি আর নিতে পারছি না।’’

Blast Digha দিঘা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy