Advertisement
E-Paper

মন্দারমণিতে ভিড় সামলাতে হিমশিম

গরমের ছুটি বেড়েছে এক সপ্তাহ। শহর এবং শহরতলির বাঙালি তাই মেদিনীপুরের শরণাপন্ন। ছোট, সাশ্রয়ী ভ্রমণের পিপাসা মেটাতে দিঘা বা মন্দারমণির লোনা জলই ভরসা। দিঘার সৈকত এখন অনেকের কাছেই শ্রীহীন বলে মনে হয়। ভিড়ের বহর দেখে অবশ্য তেমন কিছু মনে হওয়ার উপায় নেই। অন্য দিকে সোনালি বেলাভূমির মন্দারমণিতেও কালো মাথার ঢেউ আছড়ে পড়েছে শনি-রবিবার। গরমের মরসুমে এত ভিড় দেখে খুশি হোটেল মালিকরা।

সুব্রত গুহ

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৫ ০০:২২
সমুদ্র-সৈকতে প্যারাসেলিং। ছবিটি তুলেছেন সোহম গুহ।

সমুদ্র-সৈকতে প্যারাসেলিং। ছবিটি তুলেছেন সোহম গুহ।

গরমের ছুটি বেড়েছে এক সপ্তাহ। শহর এবং শহরতলির বাঙালি তাই মেদিনীপুরের শরণাপন্ন। ছোট, সাশ্রয়ী ভ্রমণের পিপাসা মেটাতে দিঘা বা মন্দারমণির লোনা জলই ভরসা।

দিঘার সৈকত এখন অনেকের কাছেই শ্রীহীন বলে মনে হয়। ভিড়ের বহর দেখে অবশ্য তেমন কিছু মনে হওয়ার উপায় নেই। অন্য দিকে সোনালি বেলাভূমির মন্দারমণিতেও কালো মাথার ঢেউ আছড়ে পড়েছে শনি-রবিবার। গরমের মরসুমে এত ভিড় দেখে খুশি হোটেল মালিকরা। এই রকম ব্যবসা হলে খুশি হওয়ারই কথা বইকি! কিন্তু বিপত্তিও আছে। গোটা মন্দারমণিতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। যে ক’টি হোটেল আছে, তারা জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করছে। এতে টান পড়ছে ভাঁড়ারে।

একটি হোটেল ম্যানেজার বিশ্বেশ্বর রায় বলেন, “একটা ঘরও খালি নেই। পর্যটকদের জন্য ঘরে এসি চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।” প্রবল গরমে দু’দিনের জন্য বেড়াতে এসে সকলেই খোঁজেন নিরালা আর শান্তি। সেখানে গরম কোনও বাধা হতে পারে না। তাই নন-এসি ঘরে থাকার প্রশ্নই ওঠে না।

এ দিকে, সারাটা দিন জেনারেটর চালিয়ে হোটেলে এসি ব্যবস্থা চালু রাখা সমস্যার। এতে খরচ অসম্ভব বেশি হচ্ছে। এ ভাবে জেনারেটর দিয়ে বেশিক্ষণ এসি চালানোও সম্ভব নয়। দু’একটি হোটেলে এসি মেশিন বিগড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে খবর। স্থানীয় এক হোটেলের কর্মী সুকুমার ঘোড়াই বলেন, ‘‘এই তো কাল, ঘরের এসি মেশিন বিগড়ে যাওয়ায় বিরক্ত হয়ে হোটেল ছেড়ে অন্য হোটেল চলে গেলেন ওক পর্যটক।’’ এমন ঘটনায় বিব্রত হোটেল মালিকরা।

এ নিয়ে মন্দারমণি বিচ হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে সম্পাদক দেবদুলাল দাস মহাপাত্র বলেন, “সি আর জেড (কোস্টাল রেগুলেশন জোন)-এর জন্য মন্দারমণি পর্যন্ত খুঁটি এলেও হোটেলগুলিকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। মন্দারমণিতে হোটেল মালিকদের জেনারেটার চালিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু রাখতে গিয়ে প্রচুর খরচের বোঝা বইতে হচ্ছে।”

তবে সে যাই হোক, নির্জন বেলাভূমি, সমুদ্র স্নান আর সূর্যাস্তের আভায় লাল কাঁকড়ার মিছিল দেখতে পর্যটকদের উৎসাহের শেষ নেই। আর সে ভিড়ে দিঘাকে টেক্কা দিয়ে কয়েক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে মন্দারমণি।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যখন সৈকত পযর্টন কেন্দ্র হিসেবে দিঘাকে গোয়ার মতো করে গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছেন তখন মন্দারমণিতেই আকর্ষণ বেশি। কেন এমন প্রবণতা? সপ্তাহান্তে এখানে ছুটি কাটাতে আসা কলকাতার গার্ডেনরিচের দেবাশিস ভট্টাচার্য, শোভাবাজারের ধর্মপ্রকাশ শাহ বা বাঁকুড়ার অধীর নন্দী সকলেরই বলেন, বহু বার দিঘা গিয়েছি। তাই এখন অনেকটা বিবর্ণ লাগে। তা ছাড়া, পুরনো দিঘায় সমুদ্র সৈকত বলে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে ঝাউবনের প্রাকৃতিক সৌর্ন্দযটাই।

সে কথা সত্যি। হোটেল লজের ভিড়ে কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত দিঘা। তুলনায় মন্দারমণির দিগন্ত বিস্তৃত নির্জন সৈকত আর অপরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশ অনেক বেশি আকর্ষক।

প্রথম বার মন্দারমণিতে বেড়াতে এসে দারুণ খুশি বাটানগরের তরুণী অর্পিতা মোদক বা সদ্য দ্বাদশের গণ্ডী পেরনো বাঁকুড়ার সঞ্চিতা নন্দী। সকলে জানিয়েছেন “শনিবার দারুণ মজা করেছি মন্দারমণিতে।’’ শুধু সমুদ্রস্নান নয়, ভিতু বাঙালির সব অপবাদ ঘুচিয়ে জেট স্কি-তে সমুদ্র বিচরণ বা প্যারাসেলিং-এ মত্ত মন্দারমণি। তবে লাল কাঁকড়ার কথা শুনলেও তেমন ভাবে লাল কাঁকড়া দেখতে পাননি অর্পিতা। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘সারাদিন খোঁজ করেছি। কিন্তু দু’একটা ছোট সাদা কাঁকড়া ছাড়া কিছুই দেখতে পাইনি।’’ এক রিকশাচালক আশ্বস্ত করেছেন, সন্ধ্যার পর অরখবনিয়ায় গেলে লাল কাঁকড়া দেখা যাবে বলে।

মন্দারমণিতে বিধি ভাঙার বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ অনেক পর্যটকই। লাল কাঁকড়ার প্রসঙ্গেই দুর্গাপুরের বিকাশ ঘোষ বলেন, ‘‘আমোদের নামে যা চলছে ভাবা যায় না। বালি, ইট বোঝাই গাড়ি চলছে সৈকতে। তার চাকায় মারা পড়ছে হাজার হাজার লাল কাঁকড়া। কারও বিকার নেই।’’ সমস্যা আছে আরও। অভিযোগ, একশ্রেণির ব্যবসায়ী সৈকতে অনেক বেশি দাম নিচ্ছেন ঠান্ডা পানীয় বা ফাস্ট ফুড-এর। কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই প্রশাসনের।

subrata guha mandarmani tourists mandarmani trouble
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy