Advertisement
১১ মে ২০২৪

সোনি পালিয়েছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলেছিল উপেন্দ্র

বালিখাল সংলগ্ন একটি ঘাট থেকে এক তরুণীর কাটা মাথা ও দেহাংশ উদ্ধারের ঘটনার তদন্তে নেমে হাওড়ার বাজে শিবপুরের একটি ফ্ল্যাট থেকে শুক্রবার গভীর রাতে পুলিশ মৃতার স্বামী উপেন্দ্র রজককে গ্রেফতার করে।

তদন্ত: সোনি ও উপেন্দ্রর ফ্ল্যাটে ফরেন্সিক দল। শনিবার, বাজে শিবপুরে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

তদন্ত: সোনি ও উপেন্দ্রর ফ্ল্যাটে ফরেন্সিক দল। শনিবার, বাজে শিবপুরে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৯ ০৩:৫২
Share: Save:

পাড়াতেই ফ্ল্যাটের মধ্যে এক গৃহবধূকে গলা কেটে খুন করার পরে তাঁর দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে অন্যত্র ফেলে এসেছে স্বামী। তার পরে সেই ব্যক্তি অবলীলায় ঘুরে বেড়িয়েছে পাড়ায়। শনিবার সকালে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই আতঙ্ক আর বিস্ময় চেপে বসে হাওড়ার বাজে শিবপুর এলাকার গণেশ চ্যাটার্জি লেনের বাসিন্দাদের চোখেমুখে। মহিলা থেকে পুরুষ, সকলেই একবাক্যে বলেছেন, এই পাড়ায় এই ধরনের ঘটনা যে ঘটতে পারে, তা অবিশ্বাস্য! বিশেষ করে, পাড়ার দোকানে এক কেজি আলু কিনতে হলেও যেখানে স্বামী-স্ত্রীকে একসঙ্গে যেতে দেখা যেত, সেই দম্পতির সম্পর্ক যে এমন জায়গায় পৌঁছেছে, কেউ ভাবতে পারেননি।

বালিখাল সংলগ্ন একটি ঘাট থেকে এক তরুণীর কাটা মাথা ও দেহাংশ উদ্ধারের ঘটনার তদন্তে নেমে হাওড়ার বাজে শিবপুরের একটি ফ্ল্যাট থেকে শুক্রবার গভীর রাতে পুলিশ মৃতার স্বামী উপেন্দ্র রজককে গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, ওই যুবক তার স্ত্রী সোনি রজককে বুধবার মাঝরাতে খুন করে। তার পরে দেহটি খণ্ড খণ্ড করে একটা ব্যাগে ভরে বেরিয়ে যায়। ঘটনার আগেই দুই সন্তানকে পাশে ঘরে আটকে রেখেছিল সে। সোনির বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহের জেরেই এই খুন বলে পুলিশের দাবি।

শনিবার সকালে গণেশ চ্যাটার্জি লেনের তস্য গলির মধ্যে গিয়ে দেখা যায়, পাড়ার বিভিন্ন জায়গায় মানুষের জটলা। প্রত্যেকের মুখেই উৎকণ্ঠার ছাপ। সরু গলির বিভিন্ন জায়গায় ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পরেও রক্তের স্পষ্ট দাগ। দেহাংশে ভরা ব্যাগগুলি সেখানে নামিয়ে রাখা হয়েছিল। পুলিশ ওই সব রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছে। এ দিন ফরেন্সিক দলও ঘর থেকে কিছু নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছে।

আরও পড়ুন: পরকীয়ার জের, শিবপুরের ফ্ল্যাটে সুপারি কিলার ডেকে এনে স্ত্রীর মাথা কেটেছিল স্বামী

বাড়ির সামনে ভিড় স্থানীয় বাসিন্দাদের। শনিবার, বাজে শিবপুরে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

যে ফ্ল্যাটে ওই মহিলাকে খুন করা হয়েছে, তার পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা চৈতালি মণ্ডল বলেন, ‘‘এতটা নৃশংস একটা ঘটনা ঘটেছে! অথচ, পাশের ঘরে থেকেও কিছু বুঝতে পারিনি। পরের দিন বেলার দিকে উপেন্দ্রর সঙ্গে দেখা হলেও ওর আচরণে কোনও অস্বাভাবিকতা দেখিনি। কী ঠান্ডা মাথার খুনি ভাবুন!’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ১৪ বছর আগে উপেন্দ্রকে ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন সোনি। জিটি রোডের পাশে একটি বেসরকারি আবাসনের ভিতরে লন্ড্রি চালায় উপেন্দ্র। ওই দম্পতির একটি আট বছরের মেয়ে ও পাঁচ বছরের ছেলে রয়েছে। বছর দু’য়েক আগে কাছেই একটি ভাড়া বাড়ি ছেড়ে ছ’শো বর্গফুটের ওই দু’কামরার ফ্ল্যাটে উঠে আসেন ওই দম্পতি।

এলাকার বাসিন্দারা জানান, বৃহস্পতিবার বেলার দিকে উপেন্দ্র তার বৃদ্ধা মা আরতি রজককে সঙ্গে নিয়ে হঠাৎ বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলতে শুরু করে যে, তার স্ত্রী কারও সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছেন। আগে অবশ্য ছেলেমেয়েকে নিজের বাবা-মায়ের ফ্ল্যাটে রেখে আসে উপেন্দ্র। বাবা-মাকেও সে জানায়, সোনি পালিয়ে গিয়েছে।

এলাকার বাসিন্দা তরুণ মণ্ডল বলেন, ‘‘পাড়ার প্রায় প্রত্যেককে ডেকে ডেকে স্ত্রীর পালিয়ে যাওয়ার কথা বলায় সন্দেহ হয়েছিল। কিন্তু ভাবতে পারিনি, এমন ঘটনা ঘটেছে। ওঁদের মধ্যে তো খুব মিল ছিল বলেই জানতাম।’’

পাড়ার আর এক বাসিন্দা অভিজিৎ দে বলেন, ‘‘এ সব করার আগে গত কয়েক দিন ধরেই পাড়ার বিভিন্ন লোকের কাছে উপেন্দ্র নানা অছিলায় জানতে চেয়েছে, রাস্তার সিসি ক্যামেরাগুলি চালু আছে কি না। এখন বুঝতে পারছি, খুনের পরিকল্পনা ও অনেক দিন ধরেই করছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হল না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Forensic Police Howrah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE