Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Bali

পরকীয়ার জের, শিবপুরের ফ্ল্যাটে সুপারি কিলার ডেকে এনে স্ত্রীর মাথা কেটেছিল স্বামী, গ্রেফতার ৩

কাটা মুণ্ডটি উদ্ধার হলেও তরুণীর মুখ খতবিক্ষত ছিল না। মাথায় ছিল সিঁদুর, আর একটি ব্যাগে পাওয়া যায় ধারাল অস্ত্র এবং জামাকাপড়। ছোট কাপড়ের ব্যাগটির ভিতরে মিলেছে তিনটি পাপোষ, তিনটি চপার, একটি ছোট পেনসিল কাটার এবং একটি মাঝারি আকারের ছুরি ও দস্তানা। ব্যাগ দু’টির পাশ থেকে কাদা মাখা নীল জিন্‌স, কালো জামা ও গেঞ্জি উদ্ধার হয়।

সিসি ক্যামেরার একটি ফুটেজের ভিত্তিতে সেই রহস্যের কিনারা করল পুলিশ। গ্রাফিক: তিয়াসা দাস

সিসি ক্যামেরার একটি ফুটেজের ভিত্তিতে সেই রহস্যের কিনারা করল পুলিশ। গ্রাফিক: তিয়াসা দাস

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৯ ১৫:২৫
Share: Save:

বালিখালের কাছে জেটি ঘাটে তরুণীর কাটা মাথা উদ্ধারের পরে রহস্য ক্রমশই ঘনীভূত হচ্ছিল। কোথা থেকে এল এই কাটা মাথা? তরুণীর পরিচয় কী? তা নিয়ে ধন্দ ছিলই। শেষ পর্যন্ত সিসি ক্যামেরার একটি ফুটেজের ভিত্তিতে সেই রহস্যের কিনারা করল পুলিশ।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ একপ্রকার নিঃসন্দেহ যে, খুনি ওই তরুণীর স্বামীই। নিহতের নাম সোনি রজক। দুই পরিচিতের সাহায্য নিয়ে নিজের স্ত্রীকে ধারাল অস্ত্র নিয়ে খুন করার পর তা টুকরো টুকরো করে ব্যাগে ভরে জেটি ঘাটের কাছে ফেলে গিয়েছিল নিহতের স্বামী উপেন্দ্র রজক। এই ঘটনায় তাকে সাহায্য করে সাকিল এবং দিলবর খান। ইতিমধ্যেই তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ঠিক কী ঘটেছিল? প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, স্ত্রী বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলে সন্দেহ হয় স্বামীর। তা জানার পর দু’জনের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। আপত্তি সত্ত্বেও স্ত্রী কথা না শোনায় তাঁকে খুনের পরিকল্পনা করে উপেন্দ্র।

বালি খাল সংলগ্ন জেটিয়া ঘাটের কাছে একটি সরু গলির ভিতরে গঙ্গার ঘাটের কাদামাটি থেকে উদ্ধার হয় কাটা মাথাটি। নিজস্ব চিত্র

মাদকাসক্ত সাকিল ও দিলবর খানকে খুনের জন্যে ৩০ হাজার টাকা দেন উপেন্দ্র। মনে করা হচ্ছে, পানীয়ের সঙ্গে ওষুধ অথবা মাদক জাতীয় কিছু মিশিয়ে প্রথমে অজ্ঞান করা হয় সোনিকে। তার পর ধারাল অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয় তাঁকে।

গত বৃহস্পতিবার সকালে বালি খাল সংলগ্ন জেটিয়া ঘাটের কাছে একটি সরু গলির ভিতরে গঙ্গার ঘাটের কাদামাটি থেকে উদ্ধার হয় কাটা মাথাটি। পাওয়া যায় দেহের উপরের দেহাংশ।

কাটা মুণ্ডটি উদ্ধার হলেও তরুণীর মুখ খতবিক্ষত ছিল না। মাথায় ছিল সিঁদুর, আর একটি ব্যাগে পাওয়া যায় ধারাল অস্ত্র এবং জামাকাপড়। ছোট কাপড়ের ব্যাগটির ভিতরে মিলেছে তিনটি পাপোষ, তিনটি চপার, একটি ছোট পেনসিল কাটার এবং একটি মাঝারি আকারের ছুরি ও দস্তানা। ব্যাগ দু’টির পাশ থেকে কাদা মাখা নীল জিন্‌স, কালো জামা ও গেঞ্জি উদ্ধার হয়।

 

কিন্তু কোথা থেকে মুণ্ডটি এল? প্রথমে তা নিয়ে ধন্দে ছিল পুলিশ। উদ্ধার হওয়া ওই কাটা মাথায় কোনও পচন ধরেনি। এমনকি, লোহার তৈরি ধারাল পাঁচটি অস্ত্র ভরা ব্যাগটিও গঙ্গায় ভেসে আসা সহজ নয় বলে মনে হয়ে পুলিশের। তা থেকেই অনুমান করা হয়, আশপাশের এলাকার কেউ এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। এর পর ওই এলাকার বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখতে শুরু করেন তদন্তকারীরা। যে ব্যাগে মুণ্ডটি উদ্ধার হয়েছিল, সে রকমই একটি ব্যাগ নিয়ে তিন জনকে রিকশায় যেতে দেখা যায় সিসি ক্যামেরায়।

ওই রিকশাচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করে এক ট্যাক্সিচালকের খোঁজ পাওয়া যায়। তাঁকে জেরা করে হাওড়ার শিবপুরে উপেন্দ্রর ফ্ল্যাটের হদিশ পায় পুলিশ। উপেন্দ্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই খুনের কথা সে স্বীকার করে নেয়। জানা যায়, এই কাজের জন্য সে সাকিল ও দিলবরকে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছিল।

হাওড়া পুলিশের ডিসি (নর্থ) অমিত রাঠৌর জানান, এই ঘটনায় সিসি ক্যামেরার সূত্র ধরে তদন্ত এগিয়েছে। নিহতের স্বামী এবং দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও তদন্ত চলছে।

আরও পড়ুন: রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগে চরম ‘অনিয়ম’, বলছে সিএজি-র রিপোর্ট

আরও পড়ুুন: নিজঘরে ‘গণধর্ষিতার’ বিষপান কোর্টের দরজায়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bali Howrah Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE