Advertisement
E-Paper

খুচরোয় খোরপোশ, গুনতে দিনকাবার

অর্থনীতির এই সমস্যা নিয়ে অবশ্য ভাবছেন না টুম্পা। তাঁর বরং মাথাব্যথা, মেয়ের স্কুলের মাইনে নিয়ে। ‘‘খুচরো পয়সায় ওরা মাইনে নেবে তো’’— স্বগতোক্তির ঢঙে বলতে শোনা গেল টুম্পাকে।

নাজেহাল: আদালত চত্বরেই খুচরো গুনছেন টুম্পা। —নিজস্ব চিত্র।

নাজেহাল: আদালত চত্বরেই খুচরো গুনছেন টুম্পা। —নিজস্ব চিত্র।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৭ ০৪:২২
Share
Save

সুটকেস থেকে এক একটা করে প্লাস্টিকের ছোট ছোট প্যাকেট বের করছিলেন মহিলা। ভিতরে রাশি রাশি কয়েন। গুনতে গুনতে গজগজ করছিলেন তিনি, ‘‘সব ওর চালাকি, আমাকে টাইট দেওয়ার চেষ্টা।’’

অভিযোগের আঙুল যাঁর দিকে, তিনি মহিলার স্বামী সিদ্ধার্থ নন্দী। শেওড়াফুলির বাসিন্দা সিদ্ধার্থবাবুর বিরুদ্ধে কিছু দিন আগে খোরপোশের মামলা করেছেন স্ত্রী টুম্পা। আদালতের নির্দেশে মাসে ৬ হাজার টাকা খোরপোশ দিতে হয় সিদ্ধার্থকে। পাঁচ মাসের বকেয়া আদালতে এসে মিটিয়েছেন এক সঙ্গে। কিন্তু ৩০ হাজার টাকার মধ্যে ১৮ হাজারই দিয়েছেন ২-৫-১০ টাকার কয়েনে!

‘‘গুনতে গুনতে তো দিন কাবার হয়ে যাবে। ‘এক ঘণ্টা কেটে গেল, সবে দু’হাজার টাকার হিসেব মিলেছে।’’— শ্রীরামপুর আদালত চত্বরে বসে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললেন টুম্পা।

খুচরো নিয়ে ইদানীং হিমসিম খাচ্ছে গোটা রাজ্য। ক’মাস আগেও খুচরো না দিলে মুখঝামটা দিতেন যে অটোচালক, তিনিই এখন এক গাল হেসে ১০০ টাকার নোট ভাঙিয়ে দিচ্ছেন। খুচরো রাস্তায় ফেলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন এমনকী ভিখারিরাও। সকলেরই বক্তব্য, ব্যাঙ্ক খুচরো নিচ্ছে না। তাই তাঁরাও খুচরো চান না। ব্যাঙ্কের দাবি, কয়েন দ্রুত গোনা ও রাখার পরিকাঠামো পর্যাপ্ত নয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বড় নোট কয়েনে ভাঙিয়ে দিতে পারে, কিন্তু কয়েন জমা নিয়ে নোট দিতে পারে না। এই পরিস্থিতিতে বাজারে খুচরোর প্লাবন কবে কমবে, কেউ জানে না।

আরও পড়ুন:‘ভাল’ মানুষের টানেই লাভলি ফের জেলমুখী

অর্থনীতির এই সমস্যা নিয়ে অবশ্য ভাবছেন না টুম্পা। তাঁর বরং মাথাব্যথা, মেয়ের স্কুলের মাইনে নিয়ে। ‘‘খুচরো পয়সায় ওরা মাইনে নেবে তো’’— স্বগতোক্তির ঢঙে বলতে শোনা গেল টুম্পাকে।

কিন্তু সিদ্ধার্থবাবুই বা এমন কাণ্ডটা করতে গেলেন কেন? ‘‘ভুল তো করেননি কিছু আমার মক্কেল’’— বললেন সিদ্ধার্থর আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। মনে করিয়ে দিলেন, খুচরোয় লেনদেন বেআইনি নয়। বরং কেউ খুচরো নিতে না চাইলে থানায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যায়।

সেটা বিলক্ষণ জানেন টুম্পাদেবী বা তাঁর আইনজীবী সব্যসাচী দাস। তাই যতই গজগজ করুন না কেন, টাকাটা নিয়েছেন। সব্যসাচীবাবুর কথায়, ‘‘এই মুহূর্তে বাজারে খুচরো চালানো কতটা ঝামেলার, সেটা কারও অজানা নয়। জেনেশুনে আমার মক্কেলকে বিপাকে ফেলতে এত খুচরো হাজির করেছেন সিদ্ধার্থবাবু।’’

কী বলছেন সিদ্ধার্থবাবু নিজে?

জানালেন, মিনারেল ওয়াটারের ব্যবসা করেন। অনেকেই খুচরোয় দাম মেটান। খুচরোর পাহাড় জমে গিয়েছে। সিদ্ধার্থবাবুর কথায়, ‘‘ব্যাঙ্ক পয়সা নিতে চাইছে না। খোরপোশের টাকা যখন দিতেই হবে, ভাবলাম কিছু খুচরো অন্তত ঘর থেকে বিদেয় করি।’’

Bizzare Divorce Alimony Coins শেওড়াফুলি

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}