Advertisement
E-Paper

‘তোর মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না, আমি তোর কাছেই চললাম’

গ্রামের অনেক পড়ুয়ার মতো তাঁরও আদর্শ ছিল সাগর মণ্ডল। আর সাগরের মতোই মেধাবী ছিল সৌমিত্র ঢালি। কিন্তু কে জানত, মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে দু’জনের একই পরিণতি হবে। সাগরের মতোই আত্মঘাতী হবে বছর ষোলোর পড়ুয়া সৌমিত্র!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৭ ১৭:০৬
সৌমিত্র ঢালি। —নিজস্ব চিত্র।

সৌমিত্র ঢালি। —নিজস্ব চিত্র।

গ্রামের অনেক পড়ুয়ার মতো তাঁরও আদর্শ ছিল সাগর মণ্ডল। আর সাগরের মতোই মেধাবী ছিল সৌমিত্র ঢালি। কিন্তু কে জানত, মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে দু’জনের একই পরিণতি হবে। সাগরের মতোই আত্মঘাতী হবে বছর ষোলোর পড়ুয়া সৌমিত্র!

পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার রাতে কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে মারা যায় নদিয়ার হরিণঘাটার ফতেপুর গ্রামের বাসিন্দা সৌমিত্র। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কীটনাশক খেয়েই মৃত্যু হয়েছে তার। গত ১ মে ফতেপুর গ্রামেরই মেধাবী ছাত্র সাগর মণ্ডল আত্মঘাতী হন। ওই জেলারই মোহনপুরে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইসার)-এর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন সাগর। ওই দিন আইসার-এর হস্টেলে একটি অব্যবহৃত শৌচাগার থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। গ্রামের অন্য অনেক পড়ুয়ার মতো সাগরের কাছ থেকে পড়াশোনার টিপস্ নিত ফতেপুর হাইস্কুলের ছাত্র সৌমিত্র।

“তোর মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না! ... আমি তোর কাছেই চললাম।” —সুইসাইড নোটে লিখেছে সৌমিত্র। গ্রামের ছেলে সাগরের পরিণতিতে সৌমিত্র যে মনে মনে এতটা ভেঙে পড়েছিল তা বোধহয় কল্পনাও করতে পারেননি তার মা-বাবা। চাষবাস করেই সংসার চালান সৌমিত্রের বাবা তারকচন্দ্র ঢালি। স্ত্রী, দশ বছরের মেয়ে আর সৌমিত্রকে নিয়ে তাঁর সংসার। সৌমিত্রের মৃত্যুতে শোকে যেন পাথর হয়ে গিয়েছেন তিনি। তারকচন্দ্র বলেন, “সাগর মণ্ডলের মৃত্যুর পর থেকেই একেবারে চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল সৌমিত্র। সৌমিত্রের মা রূপালি ঢালি বলেন, “সাগরের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই খাওয়াদাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল। আমি ভাবতাম, সাগরের সঙ্গে চেনাজানা ছিল। তাই হয়তো ওর মৃত্যুতে হতাশ হয়ে গিয়েছিল।”

আরও পড়ুন

মানসিক হাসপাতালে কোণঠাসা কিশোর

হরিণঘাটা থানার পুলিশ জানিয়েছে, গত শনিবার গভীর রাতে বাড়ির বাইরে গিয়েছিল সৌমিত্র। রাত দেড়টা-২টো নাগাদ বাড়ি ফিরে সে মাকে জানায়, তার শরীর খারাপ লাগছে। গায়ে-মাথায় জলও ঢালতে বলে সে। এর পরই অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। সে রাতেই তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু, শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। গত রাতে সেখানেই মারা যায় সে।

আরও পড়ুন

মায়ের হাতেই বন্দি মেয়ে, ঘরের ভিতর আবর্জনার স্তূপে আটকে তরুণী!

সৌমিত্রর ঘর থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাতে উল্লেখ রয়েছে সাগর মণ্ডলের, “সব ক্ষেত্রেই মা তোর উদাহরণ দিত। কেন তুই চলে গেলি?” সাগরের মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের অভিযোগ ছিল, কলেজের সহপাঠীরাই তাঁদের ছেলেকে খুন করেছে। যদিও পুলিশের দাবি ছিল, সাগর আত্মঘাতী হয়েছে বলে ময়নাতদন্তে প্রমাণ মিলেছে। সাগরের পরিবারের মতোই সুইসাইড নোটে তাঁর মৃত্যুর কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সৌমিত্র। সে লিখেছে, “তুই আত্মহত্যা করেছিস না তোকে হত্যা করা হয়েছে, জানি না!” তবে সে সব প্রশ্নের উত্তর মেলার আগেই চলে গেল সে। নিজের হাতেই সে লিখেছিল, “আমি তোর কাছে চললাম।”

Death Suicide Soumitra Dhali Sagar Mondal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy