মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মতি মিলেছে। তাই প্রায় ১৬ বছর পরে পাহা়ড়ের পঞ্চায়েত ও পুরসভায় ভোট হতে চলেছে। সরকারি সূত্রের খবর, সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়েই হয়তো পাহাড়ের চারটি পুরসভা (দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং ও মিরিক) এবং পঞ্চায়েতে ভোটগ্রহণ হবে। প্রাথমিক ভাবে ১৪ অথবা ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে একটি দিন বাছাইয়ের কথাও ভাবা হয়েছে। সুবাস ঘিসিঙ্গের আমল থেকেই পাহাড়ে দ্বিস্তর পঞ্চায়েত শুরু হয়। সেই মতো জিটিএ-তেও গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি পর্যায়ে ভোটগ্রহণ করতে চায় রাজ্য সরকার। নবান্নের খবর, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে সেই আর্জিও জানানো হয়েছে সরকারের তরফে।
যদিও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা-সহ পাহাড়ের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ফের চালু করার জন্য সরব হয়েছে। তাদের যুক্তি, জিটিএ চুক্তিতে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত চালুর কথা রয়েছে। কিন্তু সেটা করতে হলে সংবিধানে পঞ্চায়েত সংক্রান্ত যে আইন রয়েছে, তা সংশোধন করাতে হবে। যা সময়সাপেক্ষ। তাই আপাতত নানা সরকারি সুবিধা যাতে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পৌঁছনো যায়, সে জন্য দ্বিস্তর পঞ্চায়েত ভোট করাতে চাইছে রাজ্য সরকার। জিটিএ-র সদস্য তথা মোর্চার সহকারী সাধারণ সম্পাদক বিনয় তামাঙ্গ বলেন, ‘‘রাজ্য চাইলে দ্বিস্তর পঞ্চায়েত ভোট করাতেই পারে। আমরা কিন্তু জিটিএ চুক্তি অনুযায়ী ত্রিস্তর পঞ্চায়েত চালুর ব্যাপারে আগ্রহী। সেটা যত তাড়াতাড়ি করার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়কেই উদ্যোগী হতে হবে।’’
তবে পাহাড়ের উন্নয়নে আরও গতি আনতেই দ্রুত দ্বিস্তর পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার পক্ষে তৃণমূলের পাহাড় শাখা। দলের মুখপাত্র রাজেন মুখিয়া বলেছেন, ‘‘পুরসভা-পঞ্চায়েত সচল রাখলে পাহাড়ের যে উন্নয়নের কর্মসূচি মুখ্যমন্ত্রী শুরু করেছেন, তা আরও গতি পাবে। মানুষ এখন বুঝতে পারছেন পাহাড়ের প্রকৃত উন্নয়ন কী ভাবে এবং কাকে দিয়ে হতে পারে।’’
বস্তুত, পাহাড়ে পঞ্চায়েত-পুরসভা অচল হওয়ায় অনেক কাজেই সমস্যা হচ্ছে বলে প্রশাসনও মানছে। ২০০০ সালের পরে পাহাড়ে পঞ্চায়েত এবং পুরসভা ভোট হয়নি। আগে ছিল দার্জিলিং-গোর্খা পার্বত্য পরিষদ। ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরপরেই গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) তৈরি হয়। কিন্তু তার পরে পাঁচ বছর কেটে গেলেও পাহাড়ে পঞ্চায়েত ও পুরভোট করানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হয়নি রাজ্য প্রশাসন।
নবান্নের খবর, গত অগস্ট মাসে কলকাতা হাইকোর্টের তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর এ ব্যাপারে রাজ্যের মতামত চান। সরকারের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে পাহাড়ে পঞ্চায়েত ও পুরসভায় নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। রাজ্যের হলফনামা পাওয়ার পরে হাইকোর্ট আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে ভোট করানোর নির্দেশ দেয়। এর পরেই পাহাড়ে পঞ্চায়েত ও পুরভোট করতে সম্মতি দেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য সরকারের তরফেও শুরু হয় পাহাড়ে পঞ্চায়েত ও পুরভোট করানোর তোড়জোড়। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পুজোর আগেই কয়েক দফায় বৈঠক করেন রাজ্যের পঞ্চায়েত, পুর ও স্বরাষ্ট্র দফতরের শীর্ষ কর্তারা। রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা এ ব্যাপারে আলোচনা করেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও।
আগামী বছরের শুরুতে, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন এ রাজ্যের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে। ঠিক হয়েছে, ওই তালিকার ভিত্তিতেই পাহাড়ে ভোট করাবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ তো আছেই। কিন্তু তার চেয়েও বড় কারণ, পাহাড়ে গত বিধানসভা নির্বাচনে শাসক দলের ভোট কয়েক গুণ বেড়েছে। সম্প্রতি মোর্চার ডাকা বন্ধ উপেক্ষা করে পাহাড়ে অনেকে পথেও নেমেছেন। তাই এখন পাহাড়ে স্বশাসিত সংস্থাগুলি দখলের স্বপ্ন দেখছে তৃণমূল। এ প্রসঙ্গে মোর্চা নেতা বিনয়ের মন্তব্য, ‘‘স্বপ্ন দেখার অধিকার সকলেরই আছে। তবে দিনের শেষে আলাদা রাজ্যের প্রশ্নে পাহাড় ও সমতলের আবেগ আলাদা। এটা মাথায় রাখতে পারলে ভাল।’’
(সহ-প্রতিবেদন রেজা প্রধান)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy