দেশের সর্বোচ্চ আদালত বা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৬ সালের দাগি শিক্ষকেরা এসএসসি-র শিক্ষক নিয়োগের আসন্ন পরীক্ষা থেকে বাদ পড়েছেন। এ নিয়ে টানাপড়েন এখনও অব্যাহত। কিন্তু এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, দাগি শিক্ষকেরা যদি বাদ পড়েন, তা হলে একই অপরাধ করা দাগি শিক্ষাকর্মীরাই বা পরীক্ষা থেকে বাদ পড়বেন না কেন? ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-এর শিক্ষকদের দাবি, দাগি শিক্ষকেরা বাদ পড়লেও গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি শ্রেণিভুক্ত দাগিরা কিন্তু এই পরীক্ষা থেকে বাদ পড়লেন না। কারণ, এসএসসি তাদের ওয়েবসাইটে গ্রুপ সি বা গ্রুপ ডি-র দাগিদের কোনও তালিকা দেয়নি। যার অর্থ, গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি-র দাগিরাও আগামী রবিবার এবং তার পরের রবিবার এসএসসি-র শিক্ষক নিয়োগের যে পরীক্ষা হতে চলেছে, তাতে বসতে পারবেন।
চাকরিহারা শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, ২০১৬ সালে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী নিয়োগের যে পরীক্ষা হয়েছিল, তাতে দেখা যায়, গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি-র পরীক্ষার্থীদের অনেকে শিক্ষাকর্মী নিয়োগের পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষাতেও বসেছিলেন। শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বসার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে স্নাতক অথবা স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় ৫০ শতাংশ নম্বর এবং বিএড প্রশিক্ষণ। গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি-র চাকরিপ্রার্থীদের অনেকেরই সেই যোগ্যতা রয়েছে।
রূপা কর্মকার নামে এক যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষিকা বললেন, “আমারই পরিচিত কয়েক জন আছেন, যাঁরা একই সঙ্গে গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি এবং শিক্ষকতার পরীক্ষা দিয়েছিলেন ২০১৬ সালে। তাঁরা শিক্ষকতার চাকরি পাননি, কিন্তু গ্রুপ সি বা গ্রুপ ডি-র চাকরি পেয়েছেন। শিক্ষকতার চাকরির জন্য বয়সের ঊর্ধ্বসীমা ৪০, যা এখনও পেরোননি তাঁরা। এসএসসি-র আসন্ন পরীক্ষায় এঁরা তো বসতেই পারেন। ওই পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কারা দাগি, এসএসসি তাদের ওয়েবসাইটে এখনও তা জানায়নি। যার অর্থ, এসএসসি-র পরীক্ষায় এক জন দাগিও বসছেন না, তা কিন্তু নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে না।”
চাকরিহারাদের অনেকেরই প্রশ্ন, গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি-র দাগিদের তালিকা প্রকাশ করতে এসএসসি এত গড়িমসি করছে কেন? তাঁরা জানাচ্ছেন, ২০২৪ সালে এসএসসি কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যে তথ্য পেশ করেছিল, তাতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাশাপাশি, গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি-র দাগিদেরও চিহ্নিত করা হয়েছিল। ডিভিশন বেঞ্চে তারা জানিয়েছিল, ২০১৬ সালের দাগি গ্রুপ সি-র সংখ্যা ৭৮৩ এবং দাগি গ্রুপ ডি-র সংখ্যা ১৭৪১। এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে দাগি শিক্ষকদের পাশাপাশি, দাগি শিক্ষাকর্মীদের তালিকাও এসএসসি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করল না কেন? এসএসসি কি তা হলে দাগিদের আড়াল করতে চাইছে?চাকরিহারা এক শিক্ষকের প্রশ্ন, “এসএসসি-র আসন্ন পরীক্ষার আগে চাল আর কাঁকর কি ঠিক মতো আলাদা করা হল? আমরা দাবি করেছিলাম, পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার। কিন্তু তা-ও তো হল না।”
গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি-র চাকরিহারাদের একাংশের দাবি, তাঁরাও চান, যত দ্রুত সম্ভব এসএসসি দাগি শিক্ষাকর্মীদের তালিকা তাদের ওয়েবসাইটে দিক। তা হলে গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি-র যোগ্য পরীক্ষার্থীরা সব ধরনের পরীক্ষায় বিনা বাধায় বসতে পারবেন এবং এ সব অভিযোগও উঠবে না। যদিও এ বিষয়ে শিক্ষা দফতরের কর্তারা কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তাঁরা জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই তাঁরা দাগি শিক্ষকদের তালিকাপ্রকাশ করেছেন।
এই পরিস্থিতিতেই আগামী রবিবার এসএসসি-র নবম-দশমের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হতে চলেছে। এসএসসি জানিয়েছে, পরীক্ষা কেন্দ্রে সব ধরনের নজরদারির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে পাঁচ লক্ষ ৬৬ হাজারের মতো হয়েছে। কারণ, দাগি শিক্ষকেরা বাদ গিয়েছেন। এ ছাড়া, বিভিন্ন কারণে অনেকে পরীক্ষায় বসতে পারছেন না।
এসএসসি-র কর্তারা জানিয়েছেন, পরীক্ষা শুরু বেলা ১২টা থেকে। বেলা ১১টা থেকে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢোকার কথা বলা হয়েছিল আগে। কিন্তু এখন তাঁরা জানাচ্ছেন, পরীক্ষার্থীরা যেন সকাল ১০টা থেকেই পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকতে শুরু করেন। কারণ, তাঁদের দেহ তল্লাশিতে সময় লাগতে পারে। এসএসসি জানিয়েছে, পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে পেনের ব্যবস্থাওরাখা হচ্ছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)