Advertisement
০৫ মে ২০২৪
INDIA Alliance Meet

‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক থেকে একটার পরে একটা ছবি ভেসে উঠছে, আর কঠিন হচ্ছে মুখপাত্রদের মুখরক্ষা

পটনা, বেঙ্গালুরু, তার পরে মুম্বই। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক থেকে একটার পরে একটা ছবি ভেসে উঠছে আর মুখ ভার হয়ে যাচ্ছে বাম ও কংগ্রেসের মুখপাত্রদের।

অভিষেকের সঙ্গে ডি রাজা।

অভিষেকের সঙ্গে ডি রাজা। —নিজস্ব চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:২০
Share: Save:

যে কোনও পরিস্থিতিতে মুখে তুবড়ি ছোটাতে হয় মুখপাত্র হলে। এই বঙ্গে বাম ও কংগ্রেসের মুখপাত্রদের মুখ এখন রক্ষা করাই দায়!

পটনা, বেঙ্গালুরু, তার পরে মুম্বই। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক থেকে একটার পরে একটা ছবি ভেসে উঠছে আর মুখ ভার হয়ে যাচ্ছে বাম ও কংগ্রেসের মুখপাত্রদের। এই বাংলায় ‘ইন্ডিয়া’ জোট আদৌ বাস্তবের মাটিতে কোনও কার্যকরী চেহারা পাবে কি না, তার উত্তর এখনও অন্তত দশ বাঁও জলে! কিন্তু জোট হোক বা না হোক, বিরোধীদের সর্বভারতীয় বৈঠকের অবসরে একের পর এক টুকরো ছবি বিড়ম্বনা বাড়িয়ে চলেছে এ রাজ্যে বাম ও কংগ্রেস মুখপাত্র ও নেতাদের। আর সেই ছবিতেই বিজেপি নেতাদের হাসি চওড়া হচ্ছে! সাম্প্রতিক নমুনা এসেছে মুম্বই থেকে। যেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে জড়িয়ে ধরেছিলেন সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ড্যানিয়েল রাজা।

খাদ্য আন্দোলনের ‘শহিদ দিবসে’ কলকাতায় আকাশভাঙা বৃষ্টির মধ্যে বামফ্রন্টের সমাবেশ থেকে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, দুর্নীতির মামলায় ‘মাথা’ হিসেবে অভিষেকের বিরুদ্ধে এক মাসের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ইডি-সিবিআইয়ের দফতর ঘেরাও করা হবে। সেই মঞ্চে বক্তা ছিলেন সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে সমাবেশ থেকে ফিরে বাম নেতারা দেখেন, কলকাতায় তাঁরা যখন অভিষেকের বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিচ্ছেন, মুন্বইয়ে রাজা তখন অভিষেককে আলিঙ্গনে ধরেছেন! পরের দিন আবার ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সমন্বয় কমিটিতেও স্থান পেয়েছেন অভিষেক।

রাজার সঙ্গে অভিষেকের ওই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই সিপিআইয়ের আইনজীবী-নেতা রাজনীল মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘লজ্জা লাগে!’’ দলের আর এক যুব নেতা সৈকত গিরি ওই ছবি সামনে রেখেই কাজী নজরুল ইসলামকে উদ্ধৃত করে সমাজমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন, ‘‘...যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস, যেন লেখা হয় আমার রক্ত-লেখায় তাদের সর্বনাশ’। সব ছবি ভাল লাগে না!’’ এমন পরিস্থিতিতে ‘বিদ্রোহী’ হয়ে উঠে প্রদেশ কংগ্রেসের আইনজীবী-নেতা কৌস্তভ বাগচী দলীয় মুখপাত্রদের তালিকা থেকে বাদই পড়ে গিয়েছেন। আর এক মুখপাত্র সুমন রায়চৌধুরী মন্তব্য করেছেন, ‘‘আমিও সমর্থন করি দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। উদ্ধব ঠাকরেকে বেশ বললেন, ‘কখনও বিশ্বাসঘাতককে ক্ষমা করে দ্বিতীয় সুযোগ দেবেন না’। আমারও সেটাই কথা! কেউ বুঝলে ভাল, না হলে না!’’ কংগ্রেসের অন্য মুখপাত্রেরা সংবাদমাধ্যমের সামনে দাঁতে দাঁত চেপে লড়ছেন, তবে ভিতরে ভিতরে বুঝছেন জ্বালা কী!

যাঁরা মুখ খুলছেন, তাঁরা কেউই জোট বা আসন-সমঝোতার নিয়ন্ত্রক নন। কিন্তু তাঁদের সমবেত যন্ত্রণা, ‘‘নানা প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে আমরা ক্লান্ত! কী যুক্তি দেব, ভেবে পাচ্ছি না!’’ রাজ্য সিপিএমের প্রথম সারির এক নেতারও মত, ‘‘সৌজন্যের খাতিরেই হয়তো কেউ কাউকে (রাজা-অভিষেক) আলিঙ্গন করেছেন। কিন্তু যে স্পর্শকাতর রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমাদের চলতে হচ্ছে, সেটা মাথায় রেখে সতর্ক থাকাই বাঞ্ছনীয়।’’ সূত্রের খবর, বাংলায় দলের কর্মী-সমর্থকদের ‘জ্বালা’ মনে রেখেই বিরোধী বৈঠকে গেলে ‘সতর্ক’ থাকতে হচ্ছে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকে। অনেকের সঙ্গে ছবি উঠবেই কিন্তু কারও সঙ্গে একক ফ্রেমে ধরা পড়লে কোথায় কখন বিড়ম্বনা নেমে আসে!

একই সঙ্গে লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি— অধীর চৌধুরীর বিড়ম্বনাও কম নয়! এক পা দিল্লিতে এবং অন্য পা কলকাতায় রেখেও তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা চালাচ্ছেন রাজ্যে দলের কর্মী-সমর্থকদের ভাবাবেগ মাথায় রেখে চলতে। ধূপগুড়িতে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিমের সঙ্গে একত্রে সভা করে বার্তা দিয়ে এসেছেন, বাংলায় বিজেপি ও তৃণমূল, দু’দলের বিরুদ্ধেই তাঁদের লড়াই। সুর নরমের কিছু নেই।

তবু এক একটা ছবিতেই এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে নানা সমীকরণ! বঙ্গের বাম ও কংগ্রেস নেতারা এখন চাতক পাখির মতো চেয়ে আছেন ধূপগুড়ির দিকে! উপনির্বাচনে কংগ্রেস সমর্থিত বাম প্রার্থীর ভোট বাড়লে তাঁরা আবার নতুন উদ্যমে কোমর বাঁধতে পারেন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Congress Left Front
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE