Advertisement
E-Paper

সরস্বতীর ভাসান, বর্জ্যে ভাসছে এ কূল-ও কূল

মায়ের বিসর্জনে নজরদারি ষোলো আনা! কিন্তু মেয়ের বিসর্জনে কলকাতা হোক বা হাওড়া, কোনও পুরসভারই টনক নড়েনি। শুক্রবার তাই বাবুঘাট হোক বা পশ্চিম পাড়ের শিবপুর, রামকৃষ্ণপুর ঘাট—সর্বত্রই প্রতিমার কাঠামো পড়ে রয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১২
বিসর্জনের পরে। (বাঁ দিকে) হাওড়ার রামকৃষ্ণপুর ঘাট এবং (ডান দিকে) বাবুঘাট। শুক্রবার ছবি দু’টি তুলেছেন দীপঙ্কর মজুমদার এবং স্বাতী চক্রবর্তী।

বিসর্জনের পরে। (বাঁ দিকে) হাওড়ার রামকৃষ্ণপুর ঘাট এবং (ডান দিকে) বাবুঘাট। শুক্রবার ছবি দু’টি তুলেছেন দীপঙ্কর মজুমদার এবং স্বাতী চক্রবর্তী।

মায়ের বিসর্জনে নজরদারি ষোলো আনা! কিন্তু মেয়ের বিসর্জনে কলকাতা হোক বা হাওড়া, কোনও পুরসভারই টনক নড়েনি। শুক্রবার তাই বাবুঘাট হোক বা পশ্চিম পাড়ের শিবপুর, রামকৃষ্ণপুর ঘাট—সর্বত্রই প্রতিমার কাঠামো পড়ে রয়েছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ফুল, মালা, আবর্জনা এমনকী প্লাস্টিকও!

সব মিলিয়ে গঙ্গার দু’পাড়েই কার্যত দূষণের ‘আদর্শ’ ছবি।

খাস কলকাতায় বাড়ি ও বারোয়ারি মিলিয়ে দুর্গাপুজো সাড়ে চার হাজার। হাওড়া ধরলে সংখ্যাও আরও বেশি। কিন্তু দুই শহরে সরস্বতী পুজোর সংখ্যা কত? তার নির্দিষ্ট হিসেব নেই। তবে তা দুর্গাপুজোর থেকে খুব কম হবে না। তাই প্রশ্ন উঠতেই পারে, দুর্গাপুজোর বিসর্জনে গঙ্গা সাফাইয়ের বন্দোবস্ত থাকলে সরস্বতী পুজোয় থাকবে না কেন?

পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, সারা দেশে বিসর্জন নিয়ে অভিন্ন নির্দেশিকা জারি করেছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। সেখানে কোনও নির্দিষ্ট পুজোর উল্লেখ নেই। একই সুর দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তাদের গলাতেও। তাঁরা বলছেন, ‘‘সব পুজোর বিসর্জনেই সঙ্গে সঙ্গে গঙ্গা সাফের বন্দোবস্ত করা উচিত।’’

পরিবেশবিদদের মতে, প্রতিমা যতক্ষণ জলে থাকবে, তত দূষণ ছড়াবে। একই কথা প্রযোজ্য আবর্জনার ক্ষেত্রেও। পরিবেশ দফতরের একটি সূত্রের দাবি, সরস্বতী প্রতিমায় সিসাযুক্ত রং ব্যবহৃত হয়। দুর্গাপুজোর মতো এ ক্ষেত্রে নজরদারি থাকে না। ফলে এই প্রতিমা জলে থাকলে সিসা জলে মিশবে। ‘‘গঙ্গা এমনিতেই দূষিত। সে কথা মাথায় রেখে কাঠামো, আবর্জনা দ্রুত সাফ করা উচিত ছিল পুরসভাগুলির,’’ মন্তব্য এক পরিবেশ-কর্তার।

বিসর্জনের নিয়ম মানা হল না কেন? কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের ১৮টি ঘাটে সরস্বতী বিসর্জন হয়েছে। প্রতিটি ঘাটেই ফুল ফেলার আলাদা খাঁচা ছিল। কাঠামো তোলার জন্য পুরকর্মীরাও ছিলেন। মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার জানান, সরস্বতী প্রতিমা ছোট হয়। ফলে ক্রেনের বদলে কর্মীরাই তা তুলে নিতে পেরেছেন। পুরসভার একাধিক সূত্র অবশ্য মেনে নিয়েছে, সাফাইয়ের কাজে দেরি হয়েছে। হাওড়ার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) গৌতম চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা প্রতিটা ঘাটেই কর্মী রেখেছিলাম। সারাদিন ধরে প্রতিমা বিসর্জন হওয়ায় একটু সমস্যা হলেও কাজ দ্রুত শেষ করতে বলেছি।’’

এ দিন রামকৃষ্ণপুর, শিবপুর ও তেলকল ঘাটে গিয়ে দেখা গেল, প্রতিটি ঘাটের সামনে ভাসছে খড়, আবর্জনা, পুজোর ফুল, প্লাস্টিক। মেয়র পারিষদ দ্রুত সাফাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন বলে দাবি করলেও তাঁর দফতরের কোনও অফিসারকে চোখে পড়েনি। তবে পুরকর্মীরা কয়েক জন ঘাট সাফাই করছিলেন। কয়েক জন আবর্জনা, প্লাস্টিক, কাঠামো টেনে পাড়ে নিয়ে আসছিলেন। পরে তা ডাম্পারে বোঝাই করে ভাগাড়ে পাঠানো হচ্ছিল।

বিসর্জনের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। বিশেষ করে হাওড়ার ঘাটগুলিতে পুলিশের লঞ্চ, ডুবুরি ছিল না। হাওড়ায় কত পুজো হয়েছে, তা-ও স্পষ্ট নয় পুলিশকর্তাদের কাছে। হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রে বলা হচ্ছে, দুর্গাপুজো, কালীপুজোতে পুলিশি অনুমতি লাগে। কিন্তু সরস্বতী পুজোয় অনুমতি লাগে না। ফলে অলিগলিতে পুজো হয়েছে। হাওড়া সিটি পুলিশের হিসেবে, বৃহস্পতি ও শুক্র মিলিয়ে হাওড়ার বিভিন্ন ঘাটে প্রায় ৬০০ প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। আজ, শনিবার আরও কিছু বিসর্জন হতে পারে। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, হাওড়ার কোনও বড় রাস্তায় বিসর্জনের শোভাযাত্রা করতে দেওয়া হবে না।

Wastages
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy