Advertisement
E-Paper

‘এক মাসের ছেলের মৃত্যুর পর কেমন যেন হয়ে গেল ও’! ট্রলি-কাণ্ডে ফাল্গুনীকে নিয়ে মুখ খুললেন শ্বশুর

ট্রলি-কাণ্ডে ধৃত ফাল্গুনী ঘোষের স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির অভিযোগ, তাঁদের বাড়ির বৌ হয়ে যাওয়ার কিছু দিনের মধ্যে তাঁর নেশার আসক্তির কথা জানতে পারেন সকলে। এ নিয়ে দাম্পত্য কলহ ছিল দম্পতির।

প্রণয় ঘোষ

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৫ ১১:৫৬
ট্রলি-কাণ্ডে ধৃত ফাল্গুনী ঘোষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ শ্বশুরবাড়ির।

ট্রলি-কাণ্ডে ধৃত ফাল্গুনী ঘোষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ শ্বশুরবাড়ির। —ফাইল চিত্র।

পুত্রবধূ হিসাবে কলকাতার দমদমের বাসিন্দা ফাল্গুনী ঘোষকে নির্বাচন করেছিলেন অসমের যোরহাটের বাসিন্দা সুবল ঘোষ। পিসির খুনের ঘটনায় ধৃত স্ত্রী ফাল্গুনীর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগের কথা আনন্দবাজার অনলাইনকে জানান শুভঙ্কর। এ বার সুবল পুত্রবধূর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করলেন। শনিবার ট্রলি-কাণ্ডে অভিযুক্ত মা ও মেয়েকে টিআই প্যারেডে শামিল করিয়েছে। আত্মীয়া সুমিতা ঘোষের খুনের ঘটনায় ফাল্গুনীর স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজনকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হতে পারে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। ঠিক তার আগে সুবলের অভিযোগ, বৌমার অতিরিক্ত নেশার কারণে এক মাস বয়সি নাতিকে হারিয়েছেন তাঁরা। তার পর থেকে ফাল্গুনী ‘কেমন যেন’ হয়ে গিয়েছিলেন। সে জন্য শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সম্পর্কও খারাপ হচ্ছিল। সুবলের কথায়, ‘‘মদের সঙ্গে নানা রকমের নেশার ট্যাবলেট খেত (ফাল্গুনী)। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এর প্রভাব পড়ে শিশুর উপর। স্তন্যপানের সময় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় মাসখানেকের মধ্যে মারা যায় ছেলে-বৌমার প্রথম সন্তান। কিন্তু বৌমা শুধরোয়নি।’’

ফাল্গুনীর স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির অভিযোগ, তাঁদের বাড়ির বৌ হয়ে যাওয়ার কিছু দিনের মধ্যে ফাল্গুনীর আসক্তির কথা জানতে পারেন সকলে। এ নিয়ে দাম্পত্য কলহ ছিল। স্বামীর অভিযোগ, ‘‘নেশাড়ু বন্ধুদের সঙ্গে মিলে পরে ‘সিডাকশন ড্রাগ’-এর ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করে ও। ওই আসক্তির চূড়ান্ত পর্যায়ে আমাদের প্রথম সন্তান আসে ফাল্গুনীর গর্ভে। কিন্তু তার পরেও ওর জীবনযাত্রা বদলায়নি।’’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় দেদার নেশা করেছে (ফাল্গুনী)। এই কারণে ‘প্রিম্যাচিওর ডেলিভারি’ হয়। ওকে বলেছিলাম, এ বার একটু সংযত হও। কিন্তু শোনেনি। মত্ত অবস্থাতেও ছেলেকে স্তন্যপান করিয়েছে। তাই জন্মের এক মাসের মধ্যে আমাদের ছেলে মারা যায়।’’

ফাল্গুনী ও শুভঙ্করের বিয়ে হয় ২০১৯ সালে। বছর দুয়েকের মধ্যে তাঁদের প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। বস্তুত, ওই সন্তানের মৃত্যুর পরে ফাল্গুনী এবং শুভঙ্করের দাম্পত্য জীবনে চিড় ধরে। শুভঙ্করের অভিযোগ, নেশার টাকা জোগাড় করতে নানা খারাপ কাজ করেছেন স্ত্রী। শ্বশুর সুবলের দাবি, নিজের বাড়ি থেকে আত্মীয়ের বাড়িতে চুরি পর্যন্ত করেছেন বৌমা। বিলাসী জীবনযাত্রার লোভে শেষ পর্যন্ত বিধবা এবং নিঃসন্তানকে খুন করেছেন ফাল্গুনী।

ফাল্গুনীর শ্বশুরবাড়ির আঙুল আরতি ঘোষের দিকেও। তাঁদের অভিযোগ, কখনও মেয়েকে ‘শাসন’ করেননি আরতি। বরং তাঁকে ‘খারাপ কাজে’ মদত দিয়েছেন। এমনকি মেয়ে যখন আত্মীয়াকে খুন করছেন, তাতেও তাঁর হাত ছিল। স্বামী, শ্বশুরের অভিযোগ, পরিকল্পনা করে পিসিশাশুড়িকে খুন করেছেন ফাল্গুনী। ট্রলি ব্যাগে ভরে ভ্যানে চাপিয়ে দেহ নিয়ে যাওয়া, তার পর ট্যাক্সিতে তুলে সবশেষে কুমোরটুলির কাছে গঙ্গার ঘাটে ট্রলি ফেলে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা, সব কিছুই মা-মেয়ে করেছেন। তা ছাড়া তাঁদের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত থাকলেও থাকতে পারেন।

শনিবার দুপুরে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ধৃত ফাল্গুনী এবং আরতিকে শনাক্তকরণের প্রক্রিয়ায় সাক্ষী হিসাবে উপস্থিত করানো হচ্ছে মধ্যমগ্রামের ভ্যানরিকশার চালক, দোলতলার ট্যাক্সিচালক এবং আহিরিটোলা ঘাটের প্রথম দুই প্রত্যক্ষদর্শীকে। পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযুক্তদের টিআই প্যারেডের আবেদন করা হয়েছিল। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে। শনিবার ঘটনার একাধিক সাক্ষীকে দিয়ে টিআই প্যারেড করানোর পাশাপাশি ডেকে পাঠানো হয়েছে ফাল্গুনীর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে। গোটা প্রক্রিয়ার0 ভিডিয়োগ্রাফি হবে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। বারাসত পুলিশ জেলার সুপার প্রতীক্ষা ঝারখারিয়া বলেন, ‘‘তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এখনই কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছোনো সম্ভব নয়। পরবর্তী সময়ে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়া চলবে। খুনের ঘটনায় তাঁদের সঙ্গে আর কোনও সহযোগী ছিলেন কি না, সে বিষয়েও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।’’

Madhyamgram Murder Trolley case police Crime
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy