Advertisement
E-Paper

বাংলার সিপিএম বিজেপির বিরোধিতায় মন দিক, লেখা দলের দলিলে, জোটের নামে পার্টিকে খর্ব করা নয়

বঙ্গ সিপিএমের ছাত্র এবং যুব সংগঠন যে ধরনের আন্দোলন করেছে, তার প্রশংসা করা হয়েছে দলের দলিলে। সে দিক থেকে মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়দের নম্বর বেড়েছে প্রকাশ কারাটদের খাতায়।

In West Bengal, the party needs to pay attention to counter BJP, CPM mentioned in the document

বাংলার মানুষ বিজেপি-বিরোধী কার্যকরী শক্তি দেখছে তৃণমূলকে। লেখা হল সিপিএমের দলিলে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

শোভন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:৫৯
Share
Save

বামের ভোট গিয়েছে রামে। সেই ভোট ২০১৯ সালে সেই যে গিয়েছে, এখনও ফেরেনি। পর পর ভোটের ফলাফলই তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। অন্য দিকে, বাংলায় পর পর নির্বাচনে বিজেপিকে রুখে দিচ্ছে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটকে বিজেপি-বিরোধিতায় আরও মনোনিবেশ করতে হবে বলে লেখা হল সিপিএমের দলিলে।

আগামী এপ্রিলে তামিলনাড়ুর মাদুরাই শহরে সিপিএমের ২৪তম পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। সেই পার্টি কংগ্রেসের প্রাক্কালে এ বারই প্রথম নির্বাচনী রণকৌশল বাস্তবায়ন সংক্রান্ত রিপোর্ট তৈরি করেছে সিপিএম। সেই রিপোর্টেই পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে বিজেপি-বিরোধিতায় আরও মনোনিবেশ করার কথা বলা হয়েছে।

মোট ২৩ পৃষ্ঠার দলিলে ১৯ পাতার শেষ এবং ২০ নম্বর পাতার শুরুতে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘গত এক দশক ধরে বাংলায় পার্টি তৃণমূল এবং বিজেপি উভয়ের বিরুদ্ধে লড়ছে। কিন্তু এরই পাশাপাশি দলকে সর্ব স্তরে রাজনৈতিক এবং মতাদর্শগত ভাবে বিজেপির বিরোধিতা করার বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে।’ শুধু তা-ই নয়। সিপিএমের দলিলে এ-ও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বড় অংশের ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ তৃণমূলকে বিজেপির বিরুদ্ধে কার্যকরী শক্তি হিসাবে দেখছে। যা দ্বিমেরু রাজনীতিকে (বাইনারি পলিটিক্স) বিকশিত করছে।’

গত ২০২১ সালে বাংলায় সিপিএম বিজেপি এবং তৃণমূলকে একসঙ্গে জুড়ে ‘বিজেমূল’ বলা শুরু করেছিল। যদিও ভোটের ফলে শূন্য হওয়ার পর প্রকাশ্যেই সিপিএম স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল যে, বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলকে এক করে দেখা বা দেখানো ঠিক হয়নি। সে কথা বললেও আলিমুদ্দিন স্ট্রিট এখনও নানা বিষয়ে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে ‘সেটিং’ তত্ত্বের উল্লেখ করে সরব হয়। খোদ দলেরই দলিল আলিমুদ্দিনের তত্ত্বকে আরও এক বার খারিজ করে দিল। সর্বভারতীয় সিপিএমের নথিতেও উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলায় তৃণমূলই বিজেপি-বিরোধী ‘কার্যকরী শক্তি’ হয়ে উঠেছে।

২০১৬ সালের বিধানসভা থেকে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোট পর্যন্ত সিপিএম নানা ভাবে জোট, আসন সমঝোতা করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। কিন্তু যত সময় গিয়েছে, তত ফল খারাপই হয়েছে বামেদের। ২০১৬ সালের ভোটে প্রথম কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে ভোটে লড়েছিল বামেরা। সেই ভোটে দেখা যায় বামেরা হয়ে গিয়েছে তৃতীয় শক্তি। প্রধান বিরোধী দল হিসাবে মাথা তোলে কংগ্রেস। ভোটের পরে সেই জোট ভেঙেও গিয়েছিল। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে আবার এক বার জোটের সলতে পাকানো শুরু হয়। কিন্তু সে বার তা কার্যকর হয়নি। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে আবার কংগ্রেসের সঙ্গে কথা শুরু হয় সিপিএমের। মাঝে আবির্ভাব ঘটে তখন সদ্য গজিয়ে ওঠা আইএসএফের। সংযুক্ত মোর্চার নামে সেই জোট ভোটে লড়লেও কোনও লাভ হয়নি। স্বাধীনতার পর প্রথম বার বাংলার বিধানসভা থেকে বাম এবং কংগ্রেস উভয়েই শূন্য হয়ে যায়। ২০২৪ সালের লোকসভায় ফের বাম-কংগ্রেস জোট হয়। ফের ধাক্কা খায় সেই জোট।

নিজেদের কোমরের জোর না বাড়িয়ে কেন শুধু কংগ্রেসের ‘লেজুড়বৃত্তি’ করা হচ্ছে, এই প্রশ্ন সিপিএমের একটি অংশে ছিলই। দলিলে সরাসরি না হলেও ঘুরিয়ে যা লেখা হয়েছে, তাতে মনে করা হচ্ছে, বাংলার পার্টিকে লক্ষ্য করেই সমালোচনা করা হয়েছে। গত পার্টি কংগ্রেস থেকে এই পর্যন্ত রাজনৈতিক পর্যালোচনা রিপোর্টের উপসংহারের প্রথম পয়েন্টে লেখা হয়েছে (পৃষ্ঠা ২২), ‘রাজনৈতিক, মতাদর্শগত এবং সাংগঠনিক ভাবে পার্টির স্বাধীন শক্তি বৃদ্ধি এবং কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনতে হবে। দলের স্বাধীন পরিচয়ে কোনও ধোঁয়াশা যেন না থাকে। কিংবা নির্বাচনের নামে জোট বা বোঝাপড়া যেন পার্টির স্বাধীন কর্মকাণ্ডকে খর্ব না করে।’

বঙ্গ সিপিএমের ছাত্র এবং যুব সংগঠন যে ধরনের আন্দোলন করেছে, তার অবশ্য প্রশংসা করা হয়েছে দলের দলিলে। সে দিক থেকে মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়দের নম্বর বেড়েছে প্রকাশ কারাটদের খাতায়। অন্য দিকে, দলের শ্রমিক বা কৃষক ফ্রন্ট নিয়ে কোনও শব্দ খরচ করা হয়নি। যা দেখে দলের প্রথম সারির এক নেতার বক্তব্য, ‘‘এটাই আমাদের মূল গলদ। শ্রমিক-কৃষকের বদলে আমরা এখন ছাত্র-যুবদের পার্টিতে পরিণত হয়েছি।’’ বঙ্গ সিপিএমের উদ্দেশে দিল্লি যে ‘প্রেসক্রিপশন’ লিখেছে, তাতে ওষুধ দু’টি। এক, গ্রামের গরিব অংশের মধ্যে দলের কাজ বাড়াতে হবে। দুই, শহরের শ্রমজীবী অংশের মধ্যেও দলের কাজকর্ম বৃদ্ধি করতে হবে। দলের এক প্রবীণ নেতা অবশ্য বলেছেন, ‘‘প্রেসক্রিপশন না হয় লেখা হল। কিন্তু রোগীরা কি তা গ্রহণ করবেন? না কি ফের সেই টোটকা দিয়েই কাজ চালাবেন?’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}