পরিষেবা কর দফতরের উঁচু পদে থাকার সুবাদে তিনি দীর্ঘদিন ধরেই দুর্নীতির রাঘববোয়াল হয়ে উঠেছিলেন বলে সিবিআইয়ের অভিযোগ। কিন্তু বারবার জাল এড়িয়ে পালাচ্ছিলেন পাঁকাল মাছের মতোই। সেই জন্য এ বার পোক্ত জাল বিছিয়েছিল সিবিআই। আর শেষ পর্যন্ত সেই জালেই ধরা পড়ে গেলেন হলদিয়ার পরিষেবা কর কমিশনার জি শ্রী হর্ষ।
হলদিয়ার পরিষেবা কর দফতরের ওই শীর্ষ অফিসারের বিরুদ্ধে বেশ কিছু দিন ধরেই অভিযোগ পাচ্ছিল সিবিআই। তার ভিত্তিতেই বেশ কয়েক বার জাল বিছানো হয়। কিন্তু কিছুতেই ধরা যাচ্ছিল না হর্ষকে। এক সিবিআই-কর্তা জানান, হর্ষ হলদিয়ার একটি পণ্য খালাস সংস্থাকে তদন্ত থেকে ছাড় দেওয়ার জন্য ২০ লক্ষ টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ আসে। জাল পাতা হয়। কিন্তু ওই সংস্থার কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার সময়েও কয়েক বার জাল এড়িয়ে যান ওই কর-কর্তা। ‘‘তবে সেই ঘুষের শেষ কিস্তি হিসেবে পাঁচ লক্ষ টাকা নিতে গিয়েই হর্ষ ধরা পড়েন,’’ বললেন সিবিআইয়ের ওই কর্তা।
শেষ দফার সেই জাল কেমন?
সিবিআই সূত্রের খবর, অন্তত তিনটি গোয়েন্দা দল শুক্রবার সক্রিয় ছিল কলকাতায়। অর্থাৎ ত্রিকোণ জাল! সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখার অফিসারদের কাছে খবর ছিল, ফের হর্ষের বাড়িতে টাকা লেনদেন হবে। সেই অনুযায়ী টাকা লেনদেনে জড়িত বলে অভিযুক্ত সকলের উপরে নজরদারি শুরু হয়। তেকোনো নজরজালের দৌলতে অভিযুক্তদের প্রতিটি পদক্ষেপই জানতে পারছিলেন গোয়েন্দারা। হলদিয়ার পণ্য খালাস সংস্থা ‘ফাইভ স্টার শিপিং এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড’-এর হয়ে পারভেজ আখতার শুক্রবার রাতে টাকা নিয়ে বালিগঞ্জে হর্ষের সরকারি আবাসে পৌঁছনোর পরেই সিবিআই অফিসারেরা সেখানে হাজির হন। হাতেনাতে ধরা পড়ে যান পারভেজ, হর্ষ এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ জে প্রশান্ত কুমার। সিবিআই জানাচ্ছে, হর্ষের হয়ে টাকা লেনদেন করতেন প্রশান্ত। ঘুষের শেষ কিস্তির পাঁচ লক্ষ টাকা ছাড়াও হর্ষের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে নগদ আরও সাড়ে আট লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয় বলে জানান তদন্তকারীরা।
হর্ষ দীর্ঘদিন ধরেই এই ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত বলে সিবিআইয়ের অভিযোগ। ধৃতদের জেরা করে তারা জেনেছে, ঘুষ এবং অন্যান্য বাঁকা পথে পাওয়া টাকা প্রশান্তের মাধ্যমে হায়দরাবাদে পাঠাতেন হর্ষ। সেখানে তিনি রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় টাকা বিনিয়োগ করতেন। শুক্রবার হর্ষদের গ্রেফতার করার পরে শনিবার হায়দরাবাদ ও গুন্টুরে তল্লাশি চালায় সিবিআই। তাতেও এই ধরনের কিছু তথ্য মিলেছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। তদন্তকারীদের একাংশ বলছেন, হর্ষের আরও সম্পত্তি থাকতে পারে। সিবিআইয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ‘‘হর্ষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং অন্যান্য নথিপত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে।’’ হলদিয়া ও কলকাতা বন্দরে এই ধরনের কাজে জড়িতদের খোঁজ চলছে।
দেশ জুড়ে দুর্নীতি দমন অভিযানে নেমেছে সম্প্রতি সিবিআই। সচেতনতা বাড়াতে প্রচারও চালাচ্ছে তারা। এমন একটি সময়ে হর্ষের মতো উচ্চপদস্থ কর-কর্তার গ্রেফতারি বড় সাফল্য বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy