Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Independence Day Special

Independence Day 2022: পথে নেমে তেরঙ্গার দেশ চিনছেন সুমিত

দিল্লি থেকে হরিদ্বারে পৌঁছে গঙ্গাস্নান করে দেশ চিনতে বেরিয়ে পড়েন সুমিত। পকেটে টান ছিল। মানালি ম্যালে গান গেয়ে কিছু টাকা রোজগার করেন তিনি।

বড় সম্বল: ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা।

বড় সম্বল: ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা। ছবি: সংগৃহীত।

চিরন্তন রায়চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০২২ ০৭:০৭
Share: Save:

নীড় ছোট, তবে আকাশ যে বড়, শৈশবে বাবা-মাকে হারিয়ে সেটা তিনি বুঝেছিলেন ভাড়ার চিলতে ঘরে বসেই। দেশ চেনার ইচ্ছা অদম্য। পথই তো পথ চেনায়, চেনায় দেশ। এই উপলব্ধি থেকে নয়াদিল্লিতে হোটেলের কাজ ছেড়ে পথে নেমে এসেছিলেন কলকাতার বেহালার বছর পঁচিশের তরুণ সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়। সেটা গত মার্চের শেষ। সম্বল বলতে পকেটে ছিল আড়াই হাজার টাকা। আর বড় সম্বল: ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা।

পিঠের ব্যাগে রোজনামচার সব জিনিস। ছাতা, বর্ষাতিও। ব্যাগের সঙ্গে ভারতের ত্রিবর্ণ পতাকা লাগানো। রবিবার বিশাখাপত্তনম থেকে ফোনে সুমিত বললেন, ‘‘ওই পতাকার টানেই মানুষ আমার কাছে এসেছেন। কথা বলেছেন। বাড়িয়ে দিয়েছেন বন্ধুত্বের হাত। এমনকি পুলিশের কাছেও সাহায্য পেয়েছি।’’ তিনি জানান, বহু নিরিবিলি এলাকায় রাতে তাঁর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন অনেক পুলিশকর্মী। সুমিত বললেন, ‘‘জাতীয় পতাকার উপরে দেশের লোকের টান কত, পথে নেমে গত কয়েক মাসে সেটা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছি।’’

পর্যটনের চেনা ছকে নয়। ভারতের জনজীবনকে কাছ থেকে চিনতে সুমিত বেছে নিয়েছেন অন্য পথ। কখনও কয়েকশো কিলোমিটার হেঁটে, কখনও ট্রাকে পৌঁছেছেন গন্তব্যে।

আসমুদ্রহিমাচল ভারতভূমির দুই প্রান্তের মাঝখানের দূরত্ব প্রায় চার হাজার কিলোমিটার। উত্তরে হিমালয়ের কোলের লে, দক্ষিণে সাগরতীরের কন্যাকুমারী। ওই দুই জায়গা-সহ চার মাসে এখনও পর্যন্ত ১৩টি রাজ্যে ঘুরে দেশ চেনার চেষ্টা করে চলেছেন সুমিত। বলছেন, ‘‘এক রাজ্যের সঙ্গে অন্যের ভূপ্রকৃতি, ভাষা, আচরণ, পোশাক, খাবারদাবারের ফারাক অনেক। তা সত্ত্বেও দেশটাকে বেঁধে রেখেছে বন্ধুত্বের আবহ।’’

দিল্লি থেকে হরিদ্বারে পৌঁছে গঙ্গাস্নান করে দেশ চিনতে বেরিয়ে পড়েন সুমিত। পকেটে টান ছিল। মানালি ম্যালে দাঁড়িয়ে গান গেয়ে কিছু টাকা রোজগার করেন তিনি। বিশাল যাত্রাপথে পাথেয় সংগ্রহে কখনও কখনও কাজ করেছেন দোকানেও। বাবা-মাকে হারিয়েছেন দশ বছর বয়সে। জীবন-সংগ্রাম শুরু হয়েছিল তখনই। টুকিটাকি কাজ করে নিজের প্রতিদিনের খরচ তুলেছেন। কলকাতায় কখনও কোনও বাড়ির সিঁড়ির নীচের ছোট্ট খুপরিতে ভাড়ায় থেকেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আকাশটা যে অনেক বড়, সেটা বুঝেছিলাম সেই একচিলতে ঘরেই। আর সেটা অনুভব করলাম গত কয়েক মাসে।’’

এগিয়ে চলেছেন সুমিত। এ বার গন্তব্য বাংলা ছুঁয়ে উত্তর-পূর্ব ভারত। তিনি বলেন, ‘‘চেনা শহরের বাইরে রয়েছি অনেক মাস। কিন্তু অচেনা বসতিতে ঘুরেও বারে বারেই মনে হচ্ছে, যেন নিজের চেনা জগতেই রয়েছি। এটাই তো আমার দেশ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Independence Day Special 15th August Special
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE