Advertisement
E-Paper

দু’পক্ষই চেয়ে, টিয়াকে লঙ্কা খাওয়াচ্ছেন অমুদা

তাঁর খাঁচায় সবুজ টিয়াপাখি, তাঁর হাতে ধরা লাল লঙ্কা। তাঁকে রঙের গোলাম ধরে হাতের তাস সাজাচ্ছে লাল শিবির। তিনি বেঁকে বসলে গোস্পদে ডুবতে পারে অশোক ভট্টাচার্যের ফেরার স্বপ্ন। কেননা, ৪৭ আসনের শিলিগুড়ি পুরসভা হাতে পেতে যে জাদুসংখ্যা চাই, সিপিএমের পকেটে তার চেয়ে মোটে একটি কম— ২৩। তা থেকে ২৪ হতে তিনিই ভরসা।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৪
তিনিই এখন সব দলের নয়নের মণি। বুধবার বাড়িতে পোষ্যের সঙ্গে খোশমেজাজে অরবিন্দ ঘোষ। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

তিনিই এখন সব দলের নয়নের মণি। বুধবার বাড়িতে পোষ্যের সঙ্গে খোশমেজাজে অরবিন্দ ঘোষ। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

তাঁর খাঁচায় সবুজ টিয়াপাখি, তাঁর হাতে ধরা লাল লঙ্কা।

তাঁকে রঙের গোলাম ধরে হাতের তাস সাজাচ্ছে লাল শিবির। তিনি বেঁকে বসলে গোস্পদে ডুবতে পারে অশোক ভট্টাচার্যের ফেরার স্বপ্ন।

কেননা, ৪৭ আসনের শিলিগুড়ি পুরসভা হাতে পেতে যে জাদুসংখ্যা চাই, সিপিএমের পকেটে তার চেয়ে মোটে একটি কম— ২৩। তা থেকে ২৪ হতে তিনিই ভরসা।

আবার ঘোড়া কেনাবেচা করে ১৭ আসন থেকে ২৪-এ পৌঁছনোর যে জটিল হিসেব তৃণমূল শিবিরে কষা চলছে, তাতেও তাঁর মাথা গোনা আছে। তিনি মাথা নেড়ে ‘না’ বলে দিলে হাতে পেনসিল।

তিনি বিলক্ষণ জানেন, গোটা শিলিগুড়ি তো বটেই, গোটা রাজ্য এই মুহূর্তে তাঁর দিকে তাকিয়ে। আর সব জেনে ছাদে বসে টিয়াকে ছোলা-লঙ্কা খাওয়াচ্ছেন। কী করবেন? এটাই যে শিলিগুড়ির ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতে আসা নির্দল প্রার্থী অরবিন্দ ঘোষ ওরফে অমুদার স্বভাব— চাপ বা লোভের মুখে মাথা ঠান্ডা রাখা, ভেবেচিন্তে কাজ করা।

আসলে অনেক খারাপ দিন দেখে, পথে-বিপথে ঠোক্কর খেয়ে অরবিন্দ এই জায়গায় এসেছেন। দেশভাগের পরে বাবা-মায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের যশোহর ছেড়ে চলে এসেছিলেন শিলিগুড়িতে। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। নীলনলিনী স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময়ে জড়িয়ে পড়েন নকশাল আন্দোলনে। পুলিশের তাড়া খেয়ে দু’বছর ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’। বাড়ি ছাড়ার আগে জন্মের প্রমাণপত্র থেকে সব শংসাপত্র পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ‘শ্রেণিহীন সমাজের স্বপ্ন’ মুখ থুবড়ে পড়ে। অরবিন্দ বাড়ি ফেরেন।

এ দিকে পেটের টান। রাষ্ট্রক্ষমতা যখন সর্বহারার হাতে এলোই না, কিছু তো করতে হবে। লাটাগুড়িতে দিদির শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ধানচাষ শেখার চেষ্টা করেছিলেন কিছু দিন। তার পরে শিলিগুড়িতে ফিরে বিধান মার্কেটের ফুটপাতে বাবার সঙ্গে সব্জি বিক্রি শুরু করেন। নানা ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে সেই ব্যবসা অনেক বেড়েছে। সকালে অনেকটাই তাঁর কাটে লঙ্কা-টমেটো-বাঁধাকপির আড়তে। এরই মধ্যে উপলব্ধি হয়েছে, মানুষের জন্য কিছু করতে হলে প্রকাশ্য রাজনীতি করতে হবে। এলাকার মানুষের সুখ-দুঃখের ‘সাথি’ হতে হবে।

দলের বিরুদ্ধে নির্দল হয়ে দাঁড়ান প্রথম ১৯৯৯ সালের পুরভোটে। বাম পুরবোর্ডের বিদায়ী ডেপুটি মেয়র উজ্জ্বল চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে সেই ‘অসম’ লড়াইয়ে কংগ্রেস-বিজেপি-তৃণমূলের সমর্থনে তিনি জিতেও যান। সে বারও তাঁকে নিয়ে খুব টানাটানি হয়েছিল কংগ্রেস-তৃণমূলে। তিনি কারও দিকে ঘেঁষেননি। ২০০৪-এ নির্দল হিসেবেই জেতেন। ২০০৯-এ তৃণমূল প্রার্থীকে সমর্থন করেছিলেন। সে বছরই যোগ দেন তৃণমূলে। গৌতম দেবের বিধানসভা কেন্দ্র দেখভালের দায়িত্ব পান। বিভিন্ন সরকারি কমিটিতে ঢুকে পড়েন। তবে মানাতে পারেননি। দলে অনেকের কাজকর্ম নৈতিক ভাবে মেনে নিতে পারছেন না জানিয়ে গত বছরের জুনে তৃণমূল ছাড়েন।

তাতে তাঁর কিছু আসে-যায়নি। প্রায় তিন দশক ধরে হাকিমপাড়া পূর্ব বিবেকানন্দ পল্লির ঘরে-ঘরে তিনি যে অমুদা ছিলেন, তা-ই রয়ে গিয়েছেন। বৃদ্ধা মা, স্ত্রী এবং এম কম পাশ ছেলে নিয়ে তাঁর নিরিবিলি সংসার। ছেলেই এখন ব্যাবসা দেখাশোনা করে। এই বয়সে বেশি কিছু চাওয়ার নেই তাঁর।

কিন্তু তিনি না চাইলে হবে কী? অঙ্কের রাজনীতি যে তাঁকেই চাইছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বাড়ি ভিড়ে ঠাসা। ঘণ্টায় অন্তত দু’তিন বার লাল চা ফ্লাক্সে ভরে ছাদে পাঠিয়ে দিচ্ছেন স্ত্রী শ্রাবণী। চলছে আলোচনা। কার সঙ্গে যাবেন? ফের গৌতম দেবের তৃণমূল না কি লালঝান্ডা? তাঁর ঘনিষ্ঠেরা বলছেন, ‘অমুদার ক্ষেত্রে কোনও ভবিষ্যদ্বাণী খাটে না। যে কোনও ঝুঁকি নিয়ে নিতে পারেন!’’

আর অমুদা বলছেন, ‘‘আমি বিবেকের ডাকে কাজ করি। যখনই মনে হয়েছে কোথাও অনৈতিক কিছু হচ্ছে, ছেড়ে দিয়েছি। তবে আমার কাছে বিবেক মানে আমার ওয়ার্ডের মানুষ।’’ বলতে-বলতেই পাশে খাঁচায় ‘ক্যাঁ’ করে ডেকে ওঠে টিয়া। তার ঠোঁটে লাল লঙ্কা গুঁজে দিয়ে হেসে ওঠেন অরবিন্দ— ‘‘ও ঝাল খেতে খুব ভালবাসে, আমার মতোই!’’

Arabinda Ghosh siliguri Anirban Roy trinamool TMC cpm Ashok Bhattacharya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy