মিতা সাঁতরা। নিজস্ব চিত্র
বারো দিনের মাথায় প্রত্যাঘাত।
কিন্তু মিতা সাঁতরা আগের মতোই নির্লিপ্ত। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আমার স্বামীর জন্য কেন সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না?’’
মিতার স্বামী বাবলু সাঁতরা পুলওয়ামা-কাণ্ডে নিহত সিআরপিএফ জওয়ান। যে ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল আরও ৩৯ জনের। তারপর থেকেই বদলার দাবিতে ফুটছিল দেশ। ১২ দিনের মাথায় মঙ্গলবার ভোরে পাকিস্তানে ‘এয়ার-স্ট্রাইক’ করে জঙ্গি ঘাঁটি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে কেন্দ্র। কিন্তু আনন্দ প্রকাশ করার পরিবর্তে প্রশ্ন তুলেছেন হাওড়ার বাউড়িয়ার রাজবংশীপাড়ার বাসিন্দা মিতা, ‘‘স্বামী তো যুদ্ধক্ষেত্রে মারা যাননি। কনভয়ে যাওয়ার পথে আক্রান্ত হয়েছেন। আজ, সেনাদের বিমানে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তখন কেন নিয়ে যাওয়া হয়নি? লজ্ঝড়ে গাড়িতে কেন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল? কেন সুরক্ষা ছিল না? কেন জ্যামার ছিল না?’’
পুলওয়ামা-কাণ্ডে স্বামীকে হারানোর পরেও মিতা যুদ্ধের পক্ষে আওয়াজ তোলেননি। এমনকি, তাঁর স্বামীর কফিনবন্দি দেহ আসার পরেও এলাকার লোকজন এবং বাড়িতে আসা অতিথি যখন পাকিস্তানকে ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার দাবি তুলছিলেন, তখনও সদ্য স্বামীহারা জানিয়েছিলেন, তিনি যুদ্ধ চান না। যুদ্ধ সমাধান নয়। এ দিনও তিনি তাঁর অবস্থানে অনড় ছিলেন। কেন্দ্রের নেতা-মন্ত্রীরা যখন ‘এয়ার স্ট্রাইক’-এর সাফল্য দাবি করছেন, তখন মিতা বলেন, ‘‘ওটা ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত। এতে আমার স্বস্তি-অস্বস্তির ব্যাপার নেই। চাইলে তারা পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। আমি চাইলেও যুদ্ধ বন্ধ করতে পারব না। এখনও বলছি, যুদ্ধ সমাধান নয়। এত জীবনহানি হয়, সামাজিক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তবে কী ভাবে সমাধান হবে, তা বলতে পারব না। এটা সরকারকে ঠিক করতে হবে।’’
পুলওয়ামা-কাণ্ডে এ রাজ্যের আর এক জওয়ানও নিহত হন। তিনি নদিয়ার পলাশিপাড়ার হাঁসপুকুরিয়ার তিলিপাড়া গ্রামের সুদীপ বিশ্বাস। ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবারই ছিল তাঁর শ্রাদ্ধের দিন। তার মধ্যেই ভারতীয় বায়ুসেনার প্রত্যাঘাতের খবর আসে ওই বাড়িতে। শোকের মধ্যেও কিছুটা স্বস্তি পান পরিবারের লোকেরা। সুদীপের বোন ঝুম্পা বলেন, ‘‘জ্বলে যাচ্ছিল মনটা। একটু ঠান্ডা হল। শ্রাদ্ধের দিন দাদার আত্মাও এতে শান্তি পাবে। ভারতীয় সেনারা জঙ্গিদের উচিত জবাব দিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy