রাজনীতির সে কিছুই বোঝে না, বোঝার কথাও নয়। ছোট্ট মেয়েটি সবে পা দিয়েছে সাতে। পড়ে প্রথম শ্রেণিতে। ব্যান্ড-তাসা বাজছে শুনে পাড়ার আর পাঁচটা খুদে বন্ধুর সঙ্গে পৌঁছে গিয়েছিল রাস্তার ধারে। কিন্তু ততক্ষণে পরিস্থিতি যে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, তা বোঝেনি। বরং পুলিশ কাকুদের লাঠির ঘা খেয়ে মাটিতে পড়ে বিস্তর চোট পেয়েছে। মা জানালেন, রবিবার রাতে মেয়েটা ঠিকঠাক ঘুমোতে পারেনি। লাঠির ঘা লেগেছে ডান হাতের কনুইয়ে। পড়ে গিয়েছে চোট পেয়েছে মুখে। রাতে ঘুমের মধ্যে থেকে থেকেই কেঁদে উঠেছে শরিফা খাতুন।
রবিবার যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ লাঠি চালিয়েছে, তাতে জয়নগরের হাসিমনগরের আরও জনা তিরিশ মহিলা কমবেশি পুলিশের লাঠিপেটায় জখম হয়েছেন বলে অভিযোগ। তাঁদেরই একজন রহিমা ফকির দিনমজুরের কাজ করেন। জানালেন, ডান পায়ের গো়ড়ালি ভেঙেছে লাঠির ঘায়ে। বললেন, ‘‘রাজনীতি বুঝি না। বাজনা শুনে দেখতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ পুলিশ লাঠি নিয়ে তেড়ে এসে মারতে শুরু করল। কিছুই করিনি, অথচ এমন ভাবে মার খেতে হল। যে ভাবে মেরেছে, তাতে কাজে যেতে পারব না। কোদাল না চালালে খাব কী!’’
শরিফার পরিবারেরও আর্থিক অবস্থা খারাপ। বাবা সওকত ফকির কলকাতায় মুটেগিরি করেন। মা পানোয়ারা বিবির প্রশ্ন, নির্দোষ মেয়েটা পুলিশের লাঠিতে এ ভাবে জখম হল। ওর চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে কে?
রবিবার তৃণমূলের বিজয় মিছিল বেরিয়েছিল জয়নগরের বহড়ু বাজার থেকে। অভিযোগ, সেই মিছিল থেকে বেরিয়ে হাসিমনগর মোড়ের কাছে এক জোট সমর্থককে বেধড়ক মারধর করে তৃণমূলের লোকজন। সবুজ আবির মাখিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিবাদে হাসিমনগর মোড়ের কাছে অবরোধ করেন কংগ্রেস-সিপিএমের লোকজন।
বেলা তখন প্রায় ১২টা। পুলিশ এসে অবরোধ তুলতে গেলে ইট-পাটকেল পড়ে। তখনই লাঠি চালায় পুলিশ। গ্রামে ঢুকে মহিলাদের তাড়া করা হয় বলে অভিযোগ স্থানীয় মানুষের। মহিলাদের সংখ্যা বেশি থাকলেও কোনও পুলিশ ছিল না বলেও অভিযোগ উঠছে।
জেলা পুলিশের কর্তাদের একাংশের অবশ্য দাবি, অবরোধ থেকে ইটপাটকেল উড়ে আসছিল। আটকে পড়েছিল বিয়ে বাড়ির কিছু গা়ড়ি। বড়সড় বিপত্তি এড়াতে লাঠি চালানো ছাড়া উপায় ছিল না। তবে শিশুর গায়ে লাঠি পড়েনি বলেই দাবি পুলিশ কর্তাদের।
জয়নগরের এ বারের কংগ্রেস প্রার্থী সুজিত পাটোয়ারি বলেন, ‘‘যারা আমাদের লোকজনকে মারধর করে সবুজ আবির মাখিয়ে দিয়ে গেল, পুলিশ তাদের না ধরে লাঠি চালাল অবরোধকারীদের উপরে। শিশুরাও বাদ পড়েনি মারধর থেকে।’’ মারধর, আবির মাখানোর অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বনাথ দাস বলেন, ‘‘আমাদের মিছিল যাওয়ার সময়ে জোটের লোকজন কটূক্তি করছিল। আমাদের লোকজন শুধু প্রতিবাদ করেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy