Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
sexual harassment

Crime Against Women: ‘দুর্বৃত্তদের আশ্রয়স্থল, আইনের শাসন কি লুপ্ত’, প্রশ্ন বিশিষ্টদের

নাগরিক সমাজের ওই অংশের আরও বক্তব্য, ‘আরও বেশি পীড়িত করছে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীর ঘটনা পরবর্তী প্রতিক্রিয়া।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২২ ০৬:৩৭
Share: Save:

রাজ্যে পরপর ঘটে চলা ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত সরব হলেন বিশিষ্ট জন ও নাগরিক সমাজের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, রাজ্যে আইনের শাসন, নারীর নিরাপত্তার অধিকার কি বিলুপ্ত হল? নদিয়ার ঘটনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তাঁদের বক্তব্য, বাংলায় এমন ঘটনাপ্রবাহ উত্তরপ্রদেশের হাথরসকে মনে পড়িয়ে দিচ্ছে। নদিয়ার ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়ায় তাঁরা ‘বাক্‌রুদ্ধ’ বলেও জানিয়েছেন বিশিষ্ট জনেরা। বীরভূমের বগটুই-কাণ্ডের পরেও মুখ খুলেছিলেন বিদ্বজ্জনেদের একাংশ। শাসক তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব অবশ্য পাল্টা বলছেন, কোনও ঘটনার পরে কেবল প্রতিক্রিয়া না দিয়ে সামাজিক অপরাধ বন্ধ করতে সচেতনতা তৈরির জন্য ধারাবাহিক প্রচেষ্টার দায়িত্ব বিশিষ্ট জনেদের উপরেও বর্তায়।

‘নারী নিগ্রহ-বিরোধী নাগরিক কমিটি’ তরফে শুক্রবার সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের একাংশ নদিয়া-সহ রাজ্যের নানা জায়গায় নারী নির্যাতনের ঘটনার প্রেক্ষিতে লিখিত বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আছেন পরিচালক অপর্ণা সেন, সমাজকর্মী ও চিকিৎসক বিনায়ক সেন, নাট্য-ব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী, কৌশিক সেন, পরিচালক শতরূপা সান্যাল, সমাজকর্মী মীরাতুন নাহার, শাশ্বতী ঘোষ প্রমুখ। আছেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি চৈতালি দত্ত, ক্রীড়াবিদ কুন্তলা ঘোষ দস্তিদার, দুই চিকিৎসক ও প্রাক্তন সাংসদ এবং বিধায়ক তরুণ মণ্ডল, তরুণকান্তি নস্করেরাও। সাম্প্রতিক ঘটনায় তাঁরা ‘মর্মাহত ও গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন’ জানিয়ে বিশিষ্ট নাগরিকদের তরফে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘যে ভাবে পরপর ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও পরবর্তী হত্যার ঘটনা ঘটছে, বিশেষত নাবালিকারা বীভৎস অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তা আমাদের আতঙ্কিত করছে, বিবেককে দংশন করছে। ঘুরে ফিরে যে প্রশ্নগুলি মনকে পীড়িত করছে, তা হল: শাসকের রাজনীতি কি কেবল দুর্বৃত্তদের আশ্রয়স্থল? এ রাজ্যে আইনের শাসন, নারীর নিরাপত্তার অধিকার, আহতের চিকিৎসার অধিকার কি অবলুপ্ত হল’?

নাগরিক সমাজের ওই অংশের আরও বক্তব্য, ‘আরও বেশি পীড়িত করছে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীর ঘটনা পরবর্তী প্রতিক্রিয়া। ধর্ষিতা বিদ্যালয় ছাত্রীর অপমৃত্যুকে ‘ছোট ঘটনা’ হিসাবে বর্ণনা, ধর্ষিতার ‘চরিত্র দোষ’ অন্বেষণ প্রভৃতির মাধ্যমে এ রাজ্যকে তিনি কোন পথে চালিত করছেন ? নাবালিকা ধর্ষণ, চিকিৎসার সুযোগ না পেয়ে যন্ত্রণাময় মৃত্যু এবং প্রমাণ লোপের উদ্দেশ্যে তার বাবাকে প্রাণের ভয় দেখিয়ে জোর করে শবদেহ দাহ করার ঘটনা, থানায় অভিযোগ করতে না দেওয়া— এ কি আমাদের পশ্চিমবঙ্গ? হাথরসের যে ঘটনায় সারা দেশ শিউরে উঠেছিল, এ যেন তারই পুনরাবৃত্তি! সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ায় আমরা বাক্‌রুদ্ধ’। নদিয়ার ঘটনার তদন্তে রাজ্য পুলিশ যাতে সিবিআইকে যথাযথ সাহায্য করে এবং অন্য ঘটনাগুলির ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করা হয়, সেই দাবি তুলেছেন বিশিষ্টেরা। কামদুনি, পার্ক স্ট্রিট থেকে কাশমুন্ডি কোথাও দোষীদের চূড়ান্ত শাস্তি হয়নি বলে অভিযোগ করে তাঁদের বক্তব্য, তাঁরা নারীদের নিরাপত্তার সুবন্দোবস্ত ও নারী নিগ্রহহীন বাংলা দেখতে চান।

বিশিষ্টদের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষের মন্তব্য, ‘‘কোনও ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে বিবৃতি না দিয়ে বিদ্বজ্জনেদেরও সারা বছর সচেতনতা তৈরির প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা দরকার। কারণ, শুধু পুলিশ দিয়ে এই সামাজিক অপরাধ বন্ধ করা সম্ভব নয়।’’ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য সম্পর্কে প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে তাঁর বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তো কতগুলি সম্ভাবনার কথা বলে পুলিশকে নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sexual harassment rape Crime against Women
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE