Advertisement
E-Paper

কয়লার অভাব তীব্র, সঙ্কটে বিদ্যুৎকেন্দ্র

এ বছর দুর্গাপুজোর আগেই পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লার জোগান প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছিল।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:০৩

রাজ্যের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে ফের কয়লার চূড়ান্ত সঙ্কট শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি এমনই যে কয়লার অভাবে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি ধুঁকতে শুরু করেছে। জোগানের ঘাটতির জন্য দু’টি ইউনিটের উৎপাদনও বন্ধ রাখতে হয়েছে।

এ বছর দুর্গাপুজোর আগেই পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লার জোগান প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছিল। সারা দেশে হঠাৎই বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ভারী বর্ষা ও বন্যার কারণে কোল ইন্ডিয়ার কয়লার উৎপাদনও বেশ খানিকটা মার খায়। ফলে দেশ জুড়েই কয়লা সঙ্কট শুরু হয়। সেই অবস্থার এখনও খুব বেশি উন্নতি হয়নি বলেই বিদ্যুৎ শিল্প মহলের দাবি।

উৎসবের মরসুমে দিল্লি গিয়ে নিগমের বিদ্যুৎ কর্তারা কয়লা মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা করে জোগান খানিকটা বাড়াতে পারলেও, চাহিদা ও জোগানের ফারাক কমেনি। পরিস্থিতি এমনই যে নভেম্বরের শুরু থেকেই রাজ্যের নিজস্ব পাঁচটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র মিলিয়ে গড়ে ৮-১০ দিনের বেশি কয়লাই থাকছে না। কয়লার অভাবে সম্প্রতি বক্রেশ্বর ও সাগরদিঘির একটি করে ইউনিটের উৎপাদন (মোট ৫১০ মেগাওয়াট) বন্ধও রাখতে হয়েছে। নিগমের পরিষেবাভুক্ত এলাকায় মোট চাহিদা ৪৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কিছু দিন ধরে সেই চাহিদার অর্ধেকও মেটানো যাচ্ছে না বলে নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে।

সিইএসসি এলাকা বাদ দিয়ে ১৩ নভেম্বর, সোমবার সারা রাজ্যে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৪৫৭০ মেগাওয়াট। নিগম সেখানে চাহিদা মেটাতে পেরেছে মাত্র ১৯২১ মেগাওয়াট। শুক্রবারও কার্যত একই অবস্থা ছিল। বলা যেতে পারে নিগমের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি কিছু দিন ধরে গড়ে ২০০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। ফলে বাকি বিদ্যুতের কিছুটা জোগাচ্ছে পুরুলিয়া পাম্প স্টোরেজ এবং বিভিন্ন কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ সংস্থা। ফলে জাতীয় গ্রিড থেকে চড়া দামে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে বণ্টন সংস্থাকে।

নিগমের এক শীর্ষ কর্তা সঙ্কটের কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, তাঁদের অবস্থা এখন এমনই যে টেনে-টুনে উৎপাদন চালিয়ে যেতে হচ্ছে। কারণ চাহিদার ৪৫ শতাংশ কয়লাই তাঁরা পাচ্ছেন না। ওই কর্তার দাবি, ‘‘ইস্টার্ন কোলফিল্ড আড়াই রেক করে কয়লা দিচ্ছে। দেওয়ার কথা চার রেক। ভারত কোকিং কোল, মহানন্দা কোকিং কোল, কারওর কাছ থেকেই চাহিদা মতো কয়লা মিলছে না।’’ নিগমের নিজস্ব খনিগুলি থেকে কয়লা উত্তোলন বন্ধ রয়েছে বলেও এই সঙ্কট আরও প্রবল হয়েছে বলে ওই কর্তা জানিয়েছেন।

তবে নিগমের এই ব্যাখ্যা পুরোপুরি মানতে রাজি নয় সংশ্লিষ্ট মহল। তাঁদের মতে, পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক। রাজ্যের উচিত ছিল আগেই কয়লার ব্যবস্থা করে রাখা। তাঁদের মতে, আপৎকালীন ব্যবস্থা রাখার দায় নিগমেরও।

কোল ইন্ডিয়ার সহযোগী সংস্থাগুলি অবশ্য জানাচ্ছে— সৌর, জলবিদ্যুৎ, বায়ুবিদ্যুৎ প্রভৃতি অচিরাচরিত শক্তি ক্ষেত্রে এ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন মার খেয়েছে। ফলে উৎপাদনের চাপ বেড়েছে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে। চাহিদা বেড়েছে কয়লার। এই অবস্থায় তাদের পক্ষেও উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। ইস্টার্ন কোলফিল্ডের এক কর্তার আশ্বাস— রাজ্যের চাহিদা মতো কয়লার জোগান দেওয়ার চেষ্টা করছেন তাঁরা।

সেন্ট্রাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটির (সিইএ) হিসেব অনুযায়ী ১২, ১৩ ও ১৪ নভেম্বর বক্রেশ্বর ও সাগরদিঘি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কোনও কয়লাই মজুত ছিল না। ব্যান্ডেলে কয়লা রয়েছে মাত্র এক দিনের। এবং কোলাঘাটে কয়লা থাকছে গড়ে ৩-৫ দিন ও সাঁওতালডিহিতে ৪ দিন। যেখানে প্রতি কেন্দ্রে কম করে ১০ দিনের কয়লা মজুত থাকা উচিত।

Thermal power station Coal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy