কোনও যুগলের বিবাহের ক্ষেত্রে জাত বা ধর্ম বাধা হয়ে উঠলে পার্টি অফিসের দরজা খুলে দেবে সিপিএম। সম্প্রতি এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএমের তামিলনাড়ু রাজ্য কমিটি। দক্ষিণের রাজ্যটিতে গত কয়েক বছর ধরেই জাতের নামে খুনোখুনির ঘটনা বাড়ছে। সেই আবহেই এমন সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন সিপিএমের তামিলনাড়ুর রাজ্য সম্পাদক পি ষন্মুগম। কৌতূহলের বিষয় হল, পশ্চিমবঙ্গে যখন ধর্মীয় মেরুকরণের আবহ, তখন এ বিষয়ে কী ভাবছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট?
বঙ্গ সিপিএমের নেতারা এখনও অবশ্য মনে করছেন না, ভিন্জাতে বিবাহের ক্ষেত্রে বাধার বিষয়টি এই রাজ্যে এখনও খুব ‘গুরুতর’। বরং তাঁরা মনে করছেন, এখানে ভিন্ধর্মে বিবাহের ক্ষেত্রে বাধা হলেও হতে পারে। তেমন পরিস্থিতি হলে? সিপিএমের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক তথা পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম জানিয়ে দিলেন, তেমন কিছু হলে পার্টি অফিসের দরজা সবসময় খোলা। তাঁর কথায়, ‘‘এটা সামাজিক বিষয়। পার্টি অফিসে মানুষের জন্যই কাজ হয়। ফলে আমাদের পার্টি অফিসে বিবাহ হতেই পারে। কোনও বাধা নেই।’’ এই প্রসঙ্গেই উদাহরণ দিতে গিয়ে সেলিম বলেন, ‘‘বছরখানেক আগে মেদিনীপুরে আমাদের একটি পার্টি অফিস খুলে দেওয়া হয়েছিল শ্রাবণ মাসের জলযাত্রীদের জন্য। সেখানেই তাঁরা বিশ্রাম নিয়েছিলেন। কারণটা হল মানুষ।’’
তামিলনাড়ুর তিরুনেলভেলি জেলায় এক বছরে ২৪০টি খুনের ঘটনা ঘটেছে শুধুমাত্র জাতপাতের বিভাজনকে কেন্দ্র করে। সংশ্লিষ্ট জেলায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে গত এক-দেড় বছরে। এই জেলাতেই সিপিএম প্রথম একটি পার্টি অফিস খুলে দিয়েছিল বিবাহের জন্য। সেখানে পাত্র ছিলেন নিম্নবর্ণের এবং পাত্রী উচ্চবর্ণের। সিপিএমের তামিলনাড়ুর রাজ্য সম্পাদক বলেছেন, ‘‘তিরুনেলভেলিতে আমাদের পার্টি অফিস চুরমার করে দিয়েছিল পাত্রীর বাড়ির লোকজন। কিন্তু তা-ও আমরা পিছিয়ে আসিনি। তার পরেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, গোটা রাজ্যে সব পার্টি অফিসে এই ধরনের বিবাহ আমরা সম্পন্ন করব। না হলে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা যাবে না।’’ প্রসঙ্গত, তামিলনাড়ুতে সিপিএম শাসকদল ডিএমকে নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক। বাম দলগুলির তরফে ইতিমধ্যেই তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনের সঙ্গে পৃথক ভাবে দেখা করে জাতের নামে হানাহানি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বাম নেতৃত্বের বক্তব্য, পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। তামিলনাড়ু বিধানসভায় ওই বিষয়ে কঠোর আইন প্রণয়নের দাবিও জানিয়েছে সিপিএম এবং সিপিআই।
পরিসংখ্যান বলছে, তামিলনাড়ুতে গত এক-দেড় বছরে জাতপাতের নামে যত হিংসার ঘটনা ঘটেছে, তার অধিকাংশই প্রণয় এবং বিবাহকেন্দ্রিক। কোথাও পাত্রের পরিবার মারছে পাত্রী বা তাঁর পরিবারের লোকজনকে। কোথাও উল্টোটা। ফলে বিবাহের বিষয়টিতেই প্রাথমিক ভাবে মনোনিবেশ করতে চেয়েছে সিপিএম। তামিলনাড়ুর থেকে শিক্ষা নিয়ে সেই পথে বাংলাতেও এগোনোর কথা জানিয়ে দিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। শুধু পার্টি অফিস খুলে দেওয়াই নয়, সেলিম জানিয়েছেন, যে কোনও ধরনের গোঁড়ামির বিরুদ্ধে দলীয় কর্মীরা ময়দানে থাকবেন। দলের সর্ব ক্ষণের কর্মী (হোলটাইমার)-দের বিবাহে যাতে বৈভব না-হয়, সে ব্যাপারে ইতিমধ্যেই দলীয় স্তরে নির্দেশিকা জারি করেছে আলিমুদ্দিন। আরও এক ধাপ এগিয়ে তারা জানাল ভিন্ধর্মে বা ভিন্জাতে বিবাহ হলে পশ্চিমবঙ্গেও তাদের পার্টি অফিস খুলে দেওযার পথে হাঁটবে সিপিএম।