Advertisement
E-Paper

আল-কায়দাই প্রেরণা, দাবি গোয়েন্দাদের

খাগড়াগড়েও প্রেরণা সেই আল-কায়দাই। গোয়েন্দাদের দাবি, শুধু মতাদর্শ বা জেহাদি ভাবধারা অনুসরণে নয়, বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির ক্ষেত্রেও! জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) জেনেছে, এখানে প্রেরণা আসলে আল-কায়দার একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। যেখানে খোলা বাজারে মেলা আপাত নিরীহ সামগ্রী দিয়ে মারাত্মক আইইডি (ইম্প্রোভাইজ্ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বানানোর প্রণালী বিস্তারিত ভাবে ধাপে ধাপে ছবি-সহ দেওয়া আছে।

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:২০

খাগড়াগড়েও প্রেরণা সেই আল-কায়দাই। গোয়েন্দাদের দাবি, শুধু মতাদর্শ বা জেহাদি ভাবধারা অনুসরণে নয়, বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির ক্ষেত্রেও!

জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) জেনেছে, এখানে প্রেরণা আসলে আল-কায়দার একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। যেখানে খোলা বাজারে মেলা আপাত নিরীহ সামগ্রী দিয়ে মারাত্মক আইইডি (ইম্প্রোভাইজ্ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বানানোর প্রণালী বিস্তারিত ভাবে ধাপে ধাপে ছবি-সহ দেওয়া আছে। ইনস্পায়ার নামে সেই অনলাইন ম্যাগাজিনে থাকা আইইডি তৈরির প্রণালী অনুসরণ করে খাগড়াগড়ের জঙ্গি ডেরায় বিস্ফোরক ও আইইডি-র একাংশ তৈরি হয়েছিল বলে মনে করছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, ওই অনলাইন ম্যাগাজিন থেকে বিস্ফোরক ও আইইডি তৈরির কৌশল ডাউনলোড করে তার প্রিন্ট আউট বের করেছিল খাগড়াগড়ের চক্রীরা। বিস্ফোরণস্থল থেকে তদন্তকারীরা এই ধরনের কিছু কাগজপত্রও উদ্ধার করেছেন।

ইনস্পায়ার-এর অর্থ, উদ্বুদ্ধ করা। জঙ্গি সংগঠন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন (আইএম) তাদের সাম্প্রতিক দু’টি নাশকতায় ব্যবহৃত আইইডি তৈরি করার ক্ষেত্রে ইনস্পায়ার থেকেই উদ্বুদ্ধ হয়েছিল বলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি। মাস তিনেক আগে ইনটেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) জানতে পারে, গত বছর ২৭ অক্টোবর পটনায় নরেন্দ্র মোদীর সভাস্থলে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ও গত বছর ৭ জুলাই বুদ্ধগয়ায় ধারাবাহিক বিস্ফোরণে ব্যবহৃত আইইডি তৈরির প্রণালী জঙ্গিরা পেয়েছিল ইনস্পায়ার-এর প্রথম সংখ্যা থেকে। যা প্রকাশিত হয় ২০১০-এর জানুয়ারিতে।

খাগড়াগড়ের মতো পটনা ও বুদ্ধগয়ার ধারাবাহিক বিস্ফোরণেরও তদন্ত করেছিল এনআইএ। তাদের দাবি, ওই দু’টি ঘটনাতেই জড়িত, মুজিবুল্লা নামে এক আইএম জঙ্গি ইনস্পায়ার ম্যাগাজিন থেকে আইইডি-সহ নানা বিস্ফোরক তৈরির পদ্ধতি শিখেছিল। মুজিবুল্লা এখন জেলে।

গোয়েন্দাদের সন্দেহ, খাগড়াগড়ের ক্ষেত্রে বর্ধমানের মঙ্গলকোটের কৃষ্ণবাটী গ্রামের বাসিন্দা ইউসুফ ও বাংলাদেশের নাগরিক শাকিল আহমেদ আল কায়দার অনলাইন ম্যাগাজিনে থাকা ওই সব তথ্য ইন্টারনেট ঘেঁটে বের করেছিল। আইএমের অন্যতম ঘাঁটি আজমগড়ে গিয়ে ইউসুফের জেহাদি প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা গোয়েন্দারা জেনেছেন। তাই আল কায়দার অনলাইন ম্যাগাজিন থেকে ইউসুফের তথ্য সংগ্রহের সম্ভাবনা প্রবল বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা।

এনআইএ-র বক্তব্য, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, পড়শি দেশের জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর সদস্যদের সঙ্গে ভারতের জমিয়ত-উল-মুজাহিদিনের সদস্যেরা একজোট হয়ে দু’দেশেই বড় ধরনের ধারাবাহিক নাশকতা ঘটানোর ছক কষেছে। যে কারণে নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও বর্ধমানের কয়েকটি গোপন গুদামে কয়েকশো আইইডি, গ্রেনেড, সকেট বোমার মতো মারণাস্ত্র মজুত করা আছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে জেরায় কবুল করেছে খাগড়াগড় কাণ্ডে জখম ও ধৃত আবদুল হাকিম।

আইবি দাবি করছে, জেএমবি ও জমিয়তকে এই ভাবে মিলিয়ে দেওয়া, পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের মাটিতে বসে আইইডি বানিয়ে মজুত করা, জঙ্গি ডেরা তৈরির জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ, পুরুষ ও মহিলাদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ ও জেহাদি ভাবধারায় দীক্ষিত করা, প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষিতদের জন্য মাসোহারা ও বিদেশ থেকে হাওয়ালার মাধ্যমে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থাএই বিশাল ছক আসলে আল কায়দার। সম্প্রতি পাকিস্তানি সাংবাদিক হামিদ মির দাবি করেছেন, ভারতীয় উপমহাদেশে আল কায়দার যিনি মাথা, সেই আসিম উমর এক জন ভারতীয়! তা ছাড়া, গত ৪ সেপ্টেম্বর আল কায়দার বর্তমান প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরির একটি ভিডিও টেপ প্রকাশ্যে আসে। সেখানে জাওয়াহিরি দাবি করেছিলেন, অনেক চেষ্টার পরে ভারতীয় উপমহাদেশে নয়া শাখা ‘কায়েদাত আল জেহাদ’ তৈরি করা গিয়েছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারতের একটি বড় অংশ, বাংলাদেশ ও মায়ানমারকে নিয়ে বৃহত্তর মুসলিম রাষ্ট্র গঠন করার লক্ষ্যে লড়াইয়ের কথাও জানান জাওয়াহিরি।

গোয়েন্দাদের দাবি, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সৌজন্যে বেরিয়ে পড়া জেহাদি চক্রটির সঙ্গে আল কায়দার ঘোষিত পরিকল্পনা অনেকটাই মিলে যাচ্ছে।

এনআইএ-র মতে, আল কায়দার অনলাইন ম্যাগাজিন ইনস্পায়ার-এর ১২টি সংখ্যা এ যাবত্‌ বেরিয়েছে। শেষ সংখ্যাটি বেরিয়েছে এ বছরের মার্চে। প্রথম সংখ্যাতেই আছে সেই বিপজ্জনক লেখা‘মেক আ বম্ব ইন দ্য কিচেন অফ ইয়োর মম’। অর্থাত্‌ গৃহস্থের রান্নাঘরে বসেই সহজে বোমা বানানোর প্রণালী। দেশলাইয়ের কাঠির মাথায় থাকা বারুদ কিংবা শব্দবাজির মশলা, চিনি, ‘ক্রিসমাস ট্রি’ সাজানোর আলো, ন’ভোল্টের ব্যাটারি, অ্যানালগ টেবিল ক্লক, পেরেক কিংবা বল বিয়ারিং এবং লোহার ফাঁকা পাইপ অথবা প্রেশার কুকার দিয়ে কী ভাবে বোমা বানানো যায়, তা ছবি দিয়ে বোঝানো আছে ওই অনলাইন ম্যাগাজিনে।

আবার হাইড্রোজেন পারক্সাইড, অ্যাসিটোন ও সালফিউরিক অ্যাসিডের মতো খোলা বাজারে সহজলভ্য উপাদান দিয়ে কী ভাবে অ্যাসিটোন পারক্সাইডের মতো বিপজ্জনক বিস্ফোরক তৈরি করা সম্ভব, সেই শিক্ষাও দেওয়া আছে ইনস্পায়ার-এ। খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণস্থল থেকে ভাল পরিমাণ অ্যাসিটোন পারক্সাইড উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা।

কিন্তু এই ধরনের অনলাইন ম্যাগাজিন বা ওয়েবসাইট ব্লক করে দেওয়া যায় না?

আইবি-র এক কর্তা জানাচ্ছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু ওয়েবসাইট ব্লক করার নির্দেশ গুগল, ইয়াহু, রেডিফ-এর মতো সার্চ ইঞ্জিন-দের দেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু তখন রাতারাতি ওয়োবসাইট তৈরি করা হবে। তার চেয়ে সার্চ ইঞ্জিনগুলিকে বলা যেতে পারে, কিছু কিছু ওয়েবসাইটে ঢোকার ক্ষেত্রে যিনি ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, তাঁর নাম, পরিচয়, যোগাযোগের নম্বর, ই-মেল আইডি যেন অবশ্যই চাওয়া হয়। ওই অফিসার বলেন, “এমন ব্যবস্থা করা দরকার, যাতে ওই সব তথ্য সঠিক ভাবে দিলে তবেই তিনি সেই ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে আমাদের মতো সংস্থাগুলির পক্ষে সেই ব্যক্তির হদিস পেতে সমস্যা হবে না।”

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

khagragarh blast razia amina al queda surbek biswas
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy